কুষ্টিয়া: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েও অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে নাজমুল হুসাইনের। প্রাইভেট টিউশনি আর দিনমজুরি করে সংসারের ঘানি টেনেও কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার হালসা ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পান অদম্য মেধাবী নাজমুল। শুধু তাই নয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স প্রথম বর্ষের ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় নাজমুল মেধা তালিকায় ৪৭৬ নম্বরে রয়েছেন।
নাজমুল জানান, অনেকে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার জন্য ভালো কোচিংয়ে ভর্তি হয়। অনেক পড়াশোনা করে। কিন্তু অভাবের কারণে তিনি কোনো সুযোগই পাননি। প্রাইভেট টিউশনির পাশাপাশি যতটুকু সময় পেয়েছেন বাড়িতেই পড়াশোনা করেছেন।
তিনি জানান, অনেক কষ্ট করে টাকা জোগাড় করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেন। মনোবল ছিল মেধা তালিকায় তার নাম থাকবে। বাস্তবেও তাই হয়েছে। আগামী ২১ আগস্ট তার ভাইবা পরীক্ষা। নাজমুলের ইচ্ছা ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়ালেখা করা। তবে শেষ পর্যন্ত বিশ্বিবিদ্যালয়ে ভর্তি এবং পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারবে কিনা সেটা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় দেখা দিয়েছে।
মিরপুর উপজেলার নিভৃত পল্লী কুর্শা ইউনিয়নের মাজিহাট গ্রামের হতদরিদ্র দিনমজুর আজিজ হোসেন ও নাসিমা খাতুনের দুই ছেলে মেয়ের মধ্যে বড় নাজমুল। আজিজ হোসেনের নিজের কোনো জমি নেই। সহায়-সম্বল বলতে গেলে দু’কাঠা জমির ওপর নির্মিত টিনের কুঁড়ে ঘরটি।
সামান্য দিনমজুরি করে ঠিকমতো সংসার চলে না। তার ওপরে আবার সবদিন হাতে কাজও থাকে না। যেদিন হাতে কাজ থাকে না সেদিন এক-আধ বেলা সবাইকে উপোষ থাকতে হয়। মা নাসিমা খাতুনও দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়। ছোট বোন আর্জিনা খাতুন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী।
তাই সংসার চালাতে অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় নাজমুল প্রাইভেট টিউশনি শুরু করেন। কোনো দিন আবার চলে বাবার সঙ্গে দিনমজুরি।
কিন্তু অদম্য ইচ্ছাশক্তি থাকলে দারিদ্র্যকে পেছনে ফেলে যে সফলতা পাওয়া যায় তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত নাজমুল। পড়ালেখা শেষ করে বিসিএস দিয়ে পুলিশ ক্যাডারে চাকরি করার ইচ্ছা নাজমুলের।
হালসা ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক আব্দুল মজিদ বলেন, নাজমুল আমাদের কলেজের গর্ব। প্রতিনিয়ত অভাবের সঙ্গে সংগ্রাম করে আজ সে এ পর্যন্ত এসেছে। নাজমুলের উচ্চ শিক্ষা লাভের স্বপ্ন পূরণে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসা উচিত।-জাগো নিউজ