কুষ্টিয়া : অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, মা না থাকলেও সেই অভাব বা শূণ্যতা যদি কোন নারী পূরণ করতে পারে সেটা হলো ভাবি। অনেক পরিবারেই ভাবি মায়ের ভূমিকা পালন করেন। তেমনটা দেখা গেল কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা কলেজে। ভাবির কোলে চড়ে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী সাথী খাতুন।
এ বছরের এইচএসসি পরীক্ষার্থী প্রতিবন্ধী সাথী খাতুনকে তার ভাবি রুনা খাতুন কোলে করে মঙ্গলবার বাংলা দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষায় নিয়ে আসেন। ভেড়ামারা উপজেলার মোকারিমপুর ইউনিয়নের গোলাপনগর এলাকার শাহানুর ইসলামের মেয়ে প্রতিবন্ধী সাথী খাতুন ভেড়ামারা আদর্শ কলেজ থেকে মানবিক বিভাগ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন।
মঙ্গলবার ভেড়ামারা কলেজ কেন্দ্রে সাথী পরীক্ষা শেষে রুমে ভাবির জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। তখন সবার মধ্যে কৌতূহল শুরু হয়। পরে ভাবি রুনা খাতুন এসে কোলে করে সাথীকে নিয়ে যাওয়ার সময় শিক্ষক ও সাংবাদিকদের চোখে পড়ে সেই দৃশ্য।
পরীক্ষার্থী সাথী খাতুন বলেন, আমরা খুবই দরিদ্র। আমার বাবা একজন দিনমজুর। আমার বাবার পক্ষে আমাকে লেখাপড়া করানোসহ অন্যান্য চাহিদা পূরণ করানো সম্ভব না। অভাবের সংসারে আমি একজন প্রতিবন্ধী। হাঁটাচলা করতে পারি না। আমাকে ভাবিরা সবসময় সেবাযত্নসহ সার্বিক সহযোগিতা করে আসছেন। আমার ভাবিরা ছোটবেলা থেকে আমাকে স্কুল ও কলেজে নিয়ে আসে। আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। মঙ্গলবার ভাবি রুনা খাতুনের কোলে করে এসে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছি।
সাথীর ভাবি রুনা খাতুন বলেন, তার এই অর্জনের পেছনে রয়েছে অদম্য ইচ্ছাশক্তি। আমি তাকে কোলে করে বাড়ি থেকে গোলাপনগর বাজারে নিয়ে আসি। সেখান থেকে যানবাহনে করে ভেড়ামারা কলেজে নিয়ে যাই। পরে ভেড়ামারা কলেজের সামনে থেকে সাথী খাতুনকে কোলে করে তার নির্দিষ্ট সিটে বসিয়ে দেই। সাথী পরীক্ষা দিতে থাকে আমি কলেজের বাইরে অপেক্ষা করতে থাকি। তার পরীক্ষা শেষ হলে থাকে আবার কোলে করে বাড়িতে নিয়ে আসি। এটা আমার অভ্যাস হয়ে গেছে। এখন আর অসুবিধা হয় না। সাথী খুব ভালো মেয়ে। তাকে সহযোগিতা করলে সে অনেক দূর এগিয়ে যাবে বলে আমার বিশ্বাস।
সাথী আরও বলেন, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নেব এবং একটি সরকারি চাকরির জন্য চেষ্টা করব। সুযোগ পেলে উচ্চশিক্ষার দিকে অগ্রসর হব। তবে সেটার জন্য দরকার আর্থিক ও মানবিক সহযোগিতা। শিক্ষিত হয়ে দেশ ও নিজের উন্নতি করতে চাই।