কুষ্টিয়া : রানা মন্ডল। বয়স মাত্র সতেরো কি আঠারো হবে। আর এই বয়সেই চার চারটি বিয়ে করে এলাকায় রীতিমতো হৈ-চৈ ফেলে দিয়েছেন তিনি। তবে এরই মধ্যে তিন স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন। এরপর সর্বশেষ চলতি বছরের ২০ জুলাই স্কুল পড়ুয়া এক মেয়েকে বিয়ে করেছেন ‘বিয়ে পাগল’ এই রানা। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সনদ জালিয়াতি করে বয়স বাড়িয়ে একের পর এক বিয়ে করে চলেছেন এই যুবক।
কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের ফুলবাড়িয়া গ্রামের রাশেদুল ইসলাম ওরফে রাশেদ মন্ডলের ছেলে আলোচিত এই রানা।
সোমবার বিকেলে সরেজমিনে রানার গ্রামে তার পরিবার ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রানা রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। বর্তমানে তিনি মেহেরপুরে আছেন।
স্থানীয়রা জানান, রানা লেখাপড়ায় বেশি দূর এগুতে পারেনি। রাজমিস্ত্রির কাজ করে জীবিক নির্বাহ করে। ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় প্রথম বিয়ে করেন রানা। বিয়ের কয়েক মাস পর তার প্রথম সংসার ভেঙে যায়। এরপর মিরপুর উপজেলার কচুবাড়িয়ায় দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সেই স্ত্রীও নানা কারণে মাত্র পাঁচ মাসের মাথায় তাকে ছেড়ে চলে যান। এর কয়েক মাস পর ফের দৌলতপুর উপজেলার খলিসাকুন্ডিতে রানা তৃতীয় বিয়ে করেন। সে সংসারও টেকেনি। এরপর সর্বশেষ চলতি মাসের ২০ জুলাই ভেড়ামারায় মৌসুমী নামে এক স্কুল পড়ুয়া মেয়েকে বিয়ে করেন রানা।
এলাকার মাতব্বর ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আলী আসমত জানান, এর আগেও রানার বিয়ে নিয়ে বেশ কয়েকবার বিচার-শালিস হয়েছে। তারপরও এ কাজ চলছেই। তারা কাউকে না জানিয়ে একের পর নাবালক ছেলেকে বিয়ে দিচ্ছে। জন্ম নিবন্ধন জালিয়াতি করে এ কাজ করে আসছে রানা ও তার পরিবার।
তিনি আরও জানান, ফুলবাড়িয়া ইউনিয়ন থেকে ২০১৬ সালের ২৭ জুলাই একটি জন্ম নিবন্ধন নেন রানা মন্ডল। সেই জন্ম নিবন্ধনে বয়স দেখানো হয়েছে ২১ বছর। তবে বয়স প্রমাণের জন্য কোনো কিছু জমা দেয়া হয়নি ইউনিয়নে। ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান খন্দকার টিপু সুলতান ও সচিবের অনুরোধে ইউনিয়ন পরিষদের ইউসিডি কর্মী এ জন্মনিবন্ধন রানার নামে ইস্যু করেন। এ জন্মনিবন্ধন সব বিয়েতে ব্যবহার করেছে তার পরিবার।
রানার বাবা কৃষি শ্রমিক রাশেদ মন্ডল বলেন, ছেলের জন্ম তারিখ আমার মনে নেই। তবে আমার মেয়ের বয়স বর্তমানে ১১ বছর। মেয়ের থেকে ছেলের বয়স ৮ থেকে ৯ বছর বেশি।
গত দেড় বছরে ছেলে চারটি বিয়ে করেছে কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রথম দুই বউ চলে যাওয়ার পর আমি বিয়ে দিতে চাইনি। তার মায়ের পীড়াপীড়িতে বিয়ে দিয়েছি। বিয়ের আগে ইউনিয়ন সচিবের মাধ্যমে সনদটি নিয়েছেন বলে তিনি জানান।
রানা মন্ডলের মা রেহেনা খাতুন রেনু বলেন, আমার ছেলের বিয়ে আমি দেব, তাতে আপনাদের সমস্যা কোথায়। ছেলে বিয়ে করতে চায় তাই বিয়ে দিয়েছি। এখানে বাইরের লোকের এত মাথা ব্যথা কেন?
রানার এক সময়ের সহপাঠী হৃদয় খান বলেন, রানা ও আমি এক সঙ্গে পড়েছি। আমার এক বছরের বড় সে। আমি মাঝখানে মাদরাসায় ভর্তি হওয়ায় আমার এক বছর গ্যাপ রয়েছে। সেই হিসেবে রানা আমার এক বছরের বড় হতে পারে। আমার বয়স এখন ১৬ বছর চলছে।
ফুলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী আব্দুস সালাম বলেন, আমার সময়ে সনদ দেয়া হয়নি। আগের চেয়ারম্যানের সময় সনদ জালিয়াতি করে কাজটি করেছে রানার পরিবার। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে বয়স না হওয়ায় ছেলেকে একাধিক বিয়ে দেয়ায় রানার বাবা রাশেদ মন্ডলকে সোমবার রাতে আটক করেছে পুলিশ। ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে ‘বিয়ে পাগল’ রানা মন্ডল।
মিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জামাল আহমেদ বলেন, ১৭-১৮ বছরের একটি ছেলে চারটি বিয়ে করেছে। বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি দেখা হচ্ছে।
তিনি বলেন, জন্মসনদ জালিয়াতি করলে সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তার বাড়ি থেকে ছেলের বয়স ২১ বছরের বেশির কথা বলা হলেও কেন জাতীয় নাগরিক সনদ করেনি সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।