এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে যুথী খাতুন (২৫) নামে এক গৃহবধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
বুধবার (১৪ মে) সকাল ১১ টার দিকে উপজেলার কয়া ইউনিয়নের কয়া শেখপাড়া এলাকা থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ। তিনি ওই এলাকার রাজমিস্ত্রি সোহেল রানার (২৫) স্ত্রী।
তবে স্বজনদের অভিযোগ, সোহেল একজন নেশাখোর। নিয়মিত যৌতুকের টাকার জন্য যুথীকে মারধর করত। এ নিয়ে এলাকায় জনপ্রতিনিধিরা একাধিক সালিস করেছেন। একপর্যায়ে নির্যাতন সইতে না পেরে যুথী তার দুই সন্তান ইয়ামিন (৬) ও ইয়াসমিনকে (৩) নিয়ে বাবার বাড়ি চলে যায়।
মাসখানেক আগে স্বামীর বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া আদালতে নারী নির্যাতনের মামলা করে। বিচারাধীন থাকা অবস্থায় দুই সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে বিচারক অন্তত একমাসের জন্য সম্প্রতি যুথীকে স্বামীর সঙ্গে মিলেমিশে থাকার পরামর্শ দেন।
এরপর গত ৩০ এপ্রিল আদালত থেকে দুই সন্তান নিয়ে স্বামীসহ শ্বশুর বাড়িতে আসেন। আসার পর থেকে ফের যৌতুকের টাকার জন্য মারধর শুরু করে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে ফের মারধর করে হত্যা করে মরদেহ ঘরের আড়ার সঙ্গে ওড়না দিয়ে ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যার নাটক সাজিয়ে পালিয়েছে ঘাতক স্বামী ও শাশুড়ি আলেফা খাতুন। দ্রুত অপরাধীদের ফাঁসির দাবি জানান।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় সাত বছর আগে কয়া শেখপাড়া এলাকার মৃত মনির উদ্দিনের ছেলে সোহেল শেখ প্রেম করে বিয়ে করেন উপজেলার নন্দলালপুর ইউনিয়নের সদরপুর গ্রামের সাইফুল ইসলামের মেয়ে যুথী খাতুনকে। বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের টাকা নিয়ে তাদের মধ্যে কলহ লেগেই থাকত। এরই মধ্যেই তাদের কোলজুড়ে সংসারে আসে দুই সন্তান। তারপরেও চলতে থাকে স্বামীর নির্যাতন। এ নিয়ে একাধিকবার গ্রাম্য সালিশ বসানো হয়। একপর্যায়ে স্বামীর বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হন যুথী।
এরপর মাসখানেক আগে কুষ্টিয়ার আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন যুথী। মামলা চলাকালীন সংসার টিকিয়ে রাখার জন্য ফের ম্যাজিস্ট্রেট, আইনজীবী ও স্বজনরা তাকে স্বামীর বাড়িতে পাঠান। আর শ্বশুর বাড়ি আসার মাত্র সাতদিনের মাথায় তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
সকাল ১১ টার দিকে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ঘরের বারান্দায় রাখা রয়েছে নিহত যুথীর নিথর দেহ। পাশে কান্না করছে শিশু ইয়াসমিন। বাড়িতে উৎসুক জনতা ও পুলিশ। আহাজারি করছেন স্বজনরা। বড় ছেলে ইয়াসিনকে নিয়ে পালিয়েছে ঘাতক স্বামী ও শাশুড়ি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এ সময় নিহত যুথীর মা সাবিনা খাতুন বিলাপ করতে করতে বলেন, ‘আমার সোনাক আমি কারো দিতি চাইছিলাম না। আমার সোনার দেছে কোর্টের জজ। আমি জজের কাছ যায়া কব আমার সোনার ফেরত দেন। আমার সোনার ক্যা এমন হল।’
জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সোহেল ( জামাই) নেশা করত। বিয়ের পর থেকেও যৌতুকের টাকার জন্য মারধর করত। মেলা কিছু দিছি। তারপরও খুব মারত। এ নিয়ে মেলাবের সালিশ হয়ছে গ্রামে।
অবশেষে বাড়ি ছাড়ে চলে গিয়ে কোর্টে মামলা করে। কিন্তু সোহেল বার বার মিল করার জন্য লোক পাঠাতো বাড়ি। সবশেষ গত বুধবার (৩০ এপ্রিল) কোর্টের জজ মেয়েকে স্বামীর বাড়িতে পাঠায়। এরপরও সোহেল বার বার টাকা চাচ্ছিল। টাকা না পেয়ে মেয়েকে ব্যাপক মারধর করে মারে ফেলে ঝুলিয়ে রেখে পালিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যুথীকে তার স্বামী সোহেল ও শ্বাশুড়ি আলেফা খাতুন মারে ফেলে বড় ছোয়ালকে নিয়ে পালিয়েছে। আমি থানায় মামলা করব। ওদের ফাঁসি চাই।’
যুথীর চাচা বাবলু হোসেন বলেন, ‘ছেলে আগে থেকেই খারাপ ছিল। কিন্তু সম্পর্ক করে বিয়ে করছিল ওরা। মঙ্গলবার রাত ১২ টার দিকে সোহেল আমাকে ফোন দিয়ে বলে তোদের মেয়েকে মারে ফেলেছি লাশ নিয়ে যা। খবর পেয়ে দ্রুত আসে দেখি লাশ ঝুলছে। তার ভাষ্য, যুথীকে হত্যা করা হয়েছে। এর সঠিক বিচার চাই।'
এ দিকে ঘটনার পর থেকেই যুথীর স্বামী সোহেল ও শাশুড়ি আলেফা পলাতক রয়েছে। সেজন্য তাঁদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
যুথী ও সোহেলদের সংসারে কলহ লেগেই থাকত। প্রায়ই মারধরের ঘটনা ঘটত। এ নিয়ে বহুবার সালিস করেছি। তবুও মিটমাট করাতে পারিনি। সাত মাস আগে যুথী স্বামীর বাড়ি ছেড়ে চলে যায় বলে জানায় কয়া ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মেজবার রহমান। তিনি বলেন, গতকালও ( মঙ্গলবার) মারধরের খবর শুনেছি। তবে কিভাবে মারা গেছে তা জানিনা। সঠিক তদন্তের দাবি জানায়।
ঘটনাস্থলে নিহত যুথীর স্বামী, শাশুড়ি ও বড় ছেলেকে পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ( ওসি) মো. সোলায়মান শেখ। তিনি বলেন, মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট হাতে পেলে প্রকৃত ঘটনা পরে জানানো যাবে।