শনিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:৪১:৩৮

বাসরঘর নয়, শম্পার রাত কাটলো হাজতে

বাসরঘর নয়, শম্পার রাত কাটলো হাজতে

মিলন পাটোয়ারী : লালমনিরহাট জেলার বালাপুকুরের কিশোরী শম্পা। বাবা ইসমাইল হেসেন দিনমজুর। অভাবের সংসার। অভাব-অনটনের সংসারে বেড়ে ওঠা শম্পা চাকরি দেয়ার প্রলোভনে পড়ে প্রতারক সোহেলের খপ্পরে। প্রতারক চক্রটি শম্পাকে কাজ দেয়ার প্রলোভনে নিয়ে যায় প্রথমে ঢাকায়। সেখান থেকে কুমিল্লা শহরে। সেখানে আটকে রাখে ৯০ দিন।

প্রতিটি দিন কাটে অন্ধকারে। কথা না শুনলে হাত-পা বেঁধে চালাতো অমানবিক নির্যাতন। বেত্রাঘাত। এ অবস্থায় কৌশলে পালিয়ে আসে সে। পালিয়ে এসেও পায়নি রেহাই। চক্রটি শম্পার বিরুদ্ধে দেয় সাজানো চুরির মামলা। ৯০ দিনের কথা জানতে পেরে দ্রুত তার বিয়ের ব্যবস্থা করে পরিবার। ৬ই নভেম্বর ছিলো বিয়ের দিন। বর পক্ষকে উপহার স্বরূপ ৫ হাজার টাকাও বায়না করেছে শম্পার বাবা ইসমাইল।

শম্পার বিয়ের স্বপ্ন কেড়ে নিলো লালমনিরহাটের আদিতমারী থানার পুলিশ। বিয়ের মেহেদীর পরিবর্তে হাতে পড়লো হাতকড়া। মক্ষীরানি কল্পনার কুমিল্লায় দায়ের করা একটি চুরির মামলায় অনুসন্ধান সিলিপ নিয়ে বিয়ের আগের রাতে আদিতমারী থানার এসআই আশরাফুল ইসলাম তুলে নিয়ে আসে শম্পাকে। বাসর ঘরের পরিবর্তে শম্পার রাত কাটে আদিতমারী থানা হাজতে। পরের দিন আদালতে বিচারক শম্পার কাছে তার ৯০ দিনের অন্ধকারের কাহিনী শুনে মানবিক দিক বিবেচনায় জামিন দেন। কিশোরীর ওপর পুলিশের অন্যায় অত্যাচার ভেঙ্গে যায় শম্পার বিয়ে।

চোখের জলে শম্পা জানান, তার বাড়ির পাশে সোহেল নামের এক যুবক তার পরিচিত কুমিল্লার কোতোয়ালি থানা এলাকায় গৃহপরিচারিকার কাজের জন্য যায়। গৃহপরিচারিকার কাজের পরিবর্তে তাকে আটকে রাখে একটি ঘরে। সহ্য করতে না পেরে শম্পা পালিয়ে আসে তার নিজ বাড়ি লালমনিরহাটে। শম্পা পালিয়ে আসায় লোকসানে পড়ে কল্পনার ব্যবসার। শম্পাকে ফিরিয়ে আনতে কৌশল অবল্বন করে কল্পনা। দেয় কুমিল্লা কোতোয়ালি থানায় একটি চুরির মামলা। চুরির মামলায় কুমিল্লা কোতোয়ালি থানার পত্রে আদিতমারী থানার পুলিশ গত ৫ই নভেম্বর শম্পাকে আটক করে।

শম্পার বড় ভাই মো. হানিফ আলী জানান, ৬ই নভেম্বর শম্পার বিয়ের দিন ঠিকঠাক ছিল। শম্পার হাতে মেহেদির পরিবর্তে আদিতমারী থানার এসআই আশরাফুল আলম হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যায় রাতে। লালমনিরহাট আদালতে শম্পাকে পুলিশ তুললে আদালতের বিচারক শম্পার জীবনের কালো অধ্যায়ের কথা শুনে মানবিক দিক বিবেচনা করে তার জামিন দেন।

সাপ্টীবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রফিকুল আলম জানান, এর বিচার দ্রুত প্রয়োজন না হলে নারী পাচারকারীরা বেপরোয়া হয়ে উঠবে। পরে গত ১৭ই নভেম্বর শম্পার বাবা মো. ইসমাইল হোসেন বাদী হয়ে লালমনিরহাট মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে মানবপাচার আইনে মামলা দায়ের করে। ২০১২ সালের মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনের ৭/৮/১৪ ধারায় মামলা করে। আদালতের বিচারক আদিতমারী থানার অফিসার ইনচার্জকে মামলা রুজু করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়।

এ মামলায় ৩ জনকে আসামি করা হয়। আসামিরা হলেন সোহেল রানা, কুমিল্লা কোতোয়ালি থানার চানপুর বেবি স্ট্যান্ডের উত্তর পার্শ্বের নজরুল-এর বাড়ির  নেয়ামত আলীর পুত্র মো. মেহেদী হাসান মানিক ও মেহেদী হাসান মানিকের স্ত্রী কল্পনা বেগম।

মামলার বাদী মো. ইসমাইল হোসেন জানান, আমার মেয়ের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে তার বিচার চাই। মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট হাফিজুর রহমান বলেন, শম্পার পরিবারকে আইনি সহায়তা প্রদান করা হবে। এরই সঙ্গে দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন। নারী উন্নয়ন নেত্রী  স্বপ্না জামান জানান, শম্পার এ অপমান সবার অপমান। মানবজমিন
১৯ নভেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে