লালমনিরহাট : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে প্রায় পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকা দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম লালমনিরহাট বিমানবন্দর পুনরায় চালুর বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু হয়েছে।
এরই অংশ হিসেবে বুধবার দুপুরে হেলিকপ্টারযোগে লালমনিরহাট বিমানবন্দরে অবতরণ করে বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত। তিনি বিমানবন্দরটি পরিদর্শন শেষে কর্মকর্তাদের সাথে এ বিষয়ে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রংপুর সেনানিবাসের জিওসি মেজর জেনারেল নজরুল ইসলাম, লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ, পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক, স্কোয়াডন লিডার খায়রুল মামুন।
সভা শেষে বিমান বাহিনী প্রধান বিকাল পৌনে ৩টায় ঢাকার উদ্দেশে লালমনিরহাট ত্যাগ করেন।
লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক শফিউল আরিফ জানান, লালমনিরহাটের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে বিমানবন্দরটি চালুর দাবি জানিয়ে আসছিল। এ বিমানবন্দরটি নিয়ে বড় ধরনের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। বিশেষ করে বিমান মেরামত ও কারখানা তৈরির কথা ভাবছে সরকার। এ বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই করতে বিমান বাহিনী প্রধান পরিদর্শনে এসেছিলেন বলে তিনি জানান।
এর আগে মঙ্গলবার পরীক্ষামূলকভাবে দিনভর বিমান বাহিনীর দুটি ফিক্সড উইং উড়োজাহাজ লালমনিরহাট বিমানবন্দরে উড্ডয়ন ও অবতরণ করে।
১৯৩১ সালে লালমনিরহাটের ১১৬৬ একর জমি অধিগ্রহণ করে বিমানবন্দর নির্মাণের কার্যক্রম সূচনা করে বৃটিশ সরকার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ব চলাকালীন সময়ে এ বিমানবন্দরটিই ছিল মিত্র বাহিনীর একমাত্র ভরসা স্থল। এদিকে ১৯৪৫ সালে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরপরই নিস্তব্ধতায় ডুবতে থাকে এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম এ বিমানবন্দরটি।
১৯৫৮ সালে বিমানবন্দরটিতে পুনরায় ডমেস্টিক ফ্লাইট সার্ভিস চালু করা হয়। কিন্তু সেসময় আশানুরূপ যাত্রী না পাওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় বিমান চলাচল। ফলে ৪ কিলোমিটার রানওয়ে, বিশাল টারমাক (বিমান রাখার জায়গা), হ্যাংগার (বিমান গ্যারেজ), ট্যাক্সিওয়েসহ অন্যান্য অবকাঠামো এখন পরিত্যক্ত। অব্যবহৃত হওয়ায় এগুলো নষ্ট হতে চলেছে।
১৯৮৩ সালে বিমান বাহিনী কর্তৃপক্ষ এখানে কৃষি প্রকল্প গ্রহণ করে, যার কার্যক্রম এখনো চলছে। তবে যুগের পরিবর্তনে বুড়িমারী স্থলবন্দর, নানারকম ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, কলকারখানা গড়ে ওঠাসহ বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটলেও যোগাযোগে ক্রমশ পিছিয়ে পড়ে জেলাটি।
এ জেলার অনেক মানুষ ব্যবসায়িকসহ নানারকম জরুরি প্রয়োজনে ঢাকা যাতায়াতের জন্য পাশের নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর গিয়ে বিমানে যাতায়াত করে থাকে। এতে যাতায়াতকারীদের সময় ও অর্থের ব্যয় বাড়ছে। অনেক সময় টিকেট না পেয়ে ভোগান্তিতেও পড়ছে।
ফলে লালমনিরহাট-রংপুর মহাসড়কের হারিভাঙ্গা এলাকায় অবস্থিত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত এ বিমানবন্দরটি চালু হলে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া এ জেলায় ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে বলে মনে করছে এলাকাবাসী।
স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, লালমনিরহাট বিমানবন্দরে সফলভাবে উড়োজাহাজের পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন ও অবতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। জেলাবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবি ও স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।