লালনিরহাট: লালনিরহাটের হাতীবান্ধায় যৌতুকের টাকা দিতে না পারায় ছুরি দিয়ে দিলরুবা আক্তার টুম্পা (২৫) নামের এক গৃহবধূর পায়ের রগ কেটে দেওয়ার ঘটনায় থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। থানায় অভিযোগ করায় ভুক্তভোগী পরিবারটিকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে। আর এই বিষয়টি ধামা-চাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে একটি প্রভাবশালী মহল।
সোমাবার (২৯ মার্চ) দুপুরে আহত দিলরুবা আক্তার বাদী হয়ে স্বামী প্রাণকে প্রধান আসামি করে দেবর ও শাশুড়ির নাম উল্লেখ করে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। এর আগে শনিবার (২৭ মার্চ) রাতে উপজেলার টংভাঙ্গা ইউপির পশ্চিম বেজ গ্রাম এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটে।
অভিযুক্তরা হলেন, উপজেলার পশ্চিম বেজ গ্রামের মোকলেছুর রহমানের ছেলে অছিউর রহমান প্রাণ (২৭), প্রাণের ছোট ভাই মুরাদ হোসেন মন (১৮) ও তার মা মালতী লতা (৪৫)। আহত দিলরুবা আক্তার টুম্পা উপজেলার সিংগীমারী ইউনিয়নের দক্ষিন গড্ডিমারী গ্রামের মৃত মোফাজ উদ্দিনের মেয়ে।
জানা গেছে, প্রায় ৫ বছর আগে ভালোবেসে আদালতে বিয়ে করেন প্রাণ ও টুম্পা। এরই মধ্যে তাদের সংসার ভালোই চলছিলো। কিন্তু বাধ সাধে শাশুড়ি মালতি। টুম্পাকে বাপের বাড়ি থেকে ৫ লাখ টাকা আনতে চাপ দেন। টুম্পার সুখের কথা চিন্তা করে তার ভাইয়েরা ধার-দেনা করে ৩ লাখ টাকা দেন। এরই মাঝে তাদের ঘর আলো করে জন্ম নেয় শিশু সন্তান মেহমেদ। কিন্ত আবারও ২ দুই লাখ টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করে প্রাণ। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার স্থানীয়ভাবে শালিস বৈঠক হয়। পুনরায় প্রাণ আরও ২ লাখ টাকা আনতে বলে। এতে টুম্পা রাজি না হলে গত শনিবার শুরু হয় অমানবিক নির্যাতন। মা, ছোট ভাই ও প্রাণ মিলে বাশের লাঠি দিয়ে শুরু করে মারধর।
এর একপর্যায়ে প্রাণ ধারালো ছুড়ি দিয়ে কোপ মারতে গেলে টুম্পা বিছানার ওপর শুয়ে পরে। এ সময় মা ও ভাইয়ের সহযোগীতায় উক্ত ধারালো ছুড়ি দিয়ে টুম্পার পায়ের রগ কেটে দেন তারা। টুম্পার চিৎকারে স্থানীয়রা টুম্পার ভাই-চাচাদের খবর দিলে তারা ছুটে এসে থানা পুলিশের সহযোগীতায় তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান।
সোমবার (২৯ মার্চ) দুপুরে আবারো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, টুম্পা শারিরীক ভাবে কিছুটা সুস্থ হলেও এখনও পায়ের কাটা স্থানে অসহ্য যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। এ সময় টুম্পা বলেন, ওঁরা মানুষ না। ওঁরা আমাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছে। কিন্তু আমার সন্তানের কি দোষ? ওতো ছোট মানুষ। ওকে কেন মারধর করলো। আমি ওদের সবার বিচার চাই।
তবে অভিযুক্ত ঘটনার পর থেকেই পলাতক থাকায় এ বিষয়ে কথা বলতে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তার ব্যবহৃত সেলফোনে একাধিকবার কল করা হলেও ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
টুম্পাকে উদ্ধারকারী হাতীবান্ধা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইব্রাহিম বলে, আমি আবারও সোমবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে টুম্পার খোঁজ খবর নিয়েছি। থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
হাতীবান্ধা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এরশাদুল আলম বলেন, অভিযোগ পাওয়া গেছে। ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।