এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : শীতে উত্তরবঙ্গের অন্যান্য জেলার মতো লালমনিরহাটেও কৃষিকাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। কৃষিপ্রধান জেলার পাঁচটি উপজেলায় শীতকালীন সবজি ও আগাম আলুর মোটামুটি ভালো ফলন হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়ায় ইতোমধ্যে হাট-বাজারে নতুন আলু উঠতে শুরু করলেও তুলনামূলক কম দামে বিক্রি হওয়ায় কৃষকরা প্রত্যাশিত লাভ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন কাঁচা শাক-সবজির আড়ত ঘুরে দেখা গেছে, আগাম নতুন ক্যারেজ জাতের আলু পাইকারি বাজারে পাঁচ কেজির পালা ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা কেজিপ্রতি ১৭ টাকা। হাগড়াই (বগুড়াই) জাতের আলু পাঁচ কেজির পালা ১৩০ টাকায়, অর্থাৎ কেজিপ্রতি ২৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে, গত মৌসুমের পুরোনো লাল আলু আড়তে বস্তাপ্রতি ২৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটি বস্তায় প্রায় ৬০ কেজি থাকায় কেজিপ্রতি দাম দাঁড়াচ্ছে প্রায় ৫ টাকা।
খুচরা বাজারে শহরের গোশালা বাজার, পুরোনো বাসস্ট্যান্ড এলাকা, হাড়িভাঙ্গা, সদর উপজেলার বড়বাড়ী, মহেন্দ্রনগর ও বুড়ির বাজারে আগাম ক্যারেজ জাতের আলু কেজিপ্রতি ২০ থেকে ২২ টাকা এবং হাগড়াই (বগুড়াই) জাতের আলু ৩০ থেকে ৩২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি, গত মৌসুমের পুরোনো লাল আলু কেজিপ্রতি ৮ থেকে ১০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে আগাম নতুন আলুর দাম কমে যাওয়ায় কৃষকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। আদিতমারীর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের কৃষক ইব্রাহিম হোসেন বাসসকে জানান, গত বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে নতুন আলুর পাইকারি দাম কেজিপ্রতি ৪৫ থেকে ৫০ টাকা থেকে নেমে ১৭ থেকে ২৬ টাকায় দাঁড়িয়েছে।
কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার ইউনিয়নের কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ন্যায্য দাম না পেলে কৃষকদের জীবনযাপন মারাত্মকভাবে সংকটে পড়বে।’
আলুর দাম কমে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে জেলা সদরের বড়বাড়ী কাঁচামাল আড়তের পাইকার মজিদুল মিয়া বাসসকে বলেন, ‘বাজারে পুরোনো আলুর সরবরাহ বেশি থাকায় নতুন আলুর চাহিদা কমে গেছে।’
একই আড়তের আরেক পাইকার হক সাহেব জানান, কৃষক ও পাইকারদের মধ্যে কার্যকর বাজার সংযোগ ও তথ্যের ঘাটতিও দামের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, লালমনিরহাটে আগাম নতুন আলু চাষ হয়েছে প্রায় ৬৫ হেক্টর জমিতে। চলতি মৌসুমে জেলায় আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি এবং উৎপাদন লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৬৩ হাজার ১৫০ মেট্রিক টন।
কৃষি বিভাগের তথ্যানুযায়ী, ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত আগাম আলু বাদে ৬ হাজার ৮১০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ সম্পন্ন হয়েছে, যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩১০ হেক্টর বেশি। আগামী কয়েকদিনে আরও কিছু জমিতে আলুর চাষ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
উপজেলাভিত্তিক হিসাবে জেলা সদর উপজেলায় ৪ হাজার ১০ হেক্টর, আদিতমারীতে ৮৮০ হেক্টর, কালীগঞ্জে ৯৯০ হেক্টর, হাতীবান্ধায় ৬৮০ হেক্টর এবং পাটগ্রামে ২৫০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ সম্পন্ন হয়েছে।
আদিতমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ওমর ফারুক বাসসকে বলেন, ‘অনুকূল আবহাওয়া থাকলে চলতি মৌসুমে আলুর উৎপাদন প্রত্যাশার চেয়েও বেশি হতে পারে।’
জেলা সদরের উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খন্দকার সোহায়েল আহমেদ জানান, হিমাগারে সংরক্ষিত পুরোনো আলু বাজারে থাকায় নতুন আলুর দাম চাপের মুখে রয়েছে।
এদিকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. সাইখুল আরিফিন আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘আবহাওয়া সহায়ক থাকলে ভালো ফলনের পাশাপাশি কৃষকরা ন্যায্য দামে আলু বিক্রি করতে পারবেন।’ সূত্র : বাসস