শুক্রবার, ২৯ জুলাই, ২০১৬, ০৩:৫৭:২৯

হাতিবান্ধায় দেড় হাজার বসতভিটা নদী গর্ভে

হাতিবান্ধায় দেড় হাজার বসতভিটা নদী গর্ভে

আসাদুজ্জামান সাজু, লালমনিরহাট প্রতিনিধি: “বাড়ি ভেঙ্গে অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল রোববার, কিন্তু বৃহস্পতিবার মধ্য রাতে উঠে দেখি গরু রাখার খোয়াল ঘরটি তিস্তার গর্ভে চলে গেছে। ওই ঘরে ৩ টি গরু ছিল তাও নদীতে ভেসে গেছে। কোন উপায় না পেয়ে মধ্য রাতে বাকি ৩ টি ঘর পাশের জমিতে নিয়ে রাখি। হয়তো বা ওই জমিটাও যে কোন সময় নদীতে চলে যাবে। আপনারা ছবি তুলে পত্রিকায় প্রকাশ করছেন, মন্ত্রীরা এসে দেখে যাচ্ছে আর বলে যাচ্ছে আপনাদের পাশে সরকার সব সময় আছে। আপনাদের পুর্ণবাসনের জন্য সরকার ইতোমধ্যে পদক্ষেপ নিয়েছে। এখনেই শেষ, কোথায় কেউতো আমাদের আর খোজঁ নিলো না ” এ ভাবেই ক্ষোভের সাথে কথা গুলো বললেন হাতিবান্ধা উপজেলার সিন্দুনা গ্রামের স্কুল শিক্ষক সোলেমান আলী।

তিস্তা  নদীর পানি কমে যাওয়ার সাথে সাথে ভাঙ্গনের মাত্রা বেড়ে গেছে কয়েক গুণ। ভাঙ্গন তিস্তা  পাড়ের মানুষ জনের জীবন যাত্রা দূর্বিষহ করে তুলেছে। নতুন করে উওাল ভাঙ্গনের শিকার হচ্ছে অসংখ্য পরিবার। এতে লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী, সিঙ্গিমারী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়নের দেড় হাজার বসত বাড়ি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। ঘরহারা মানুষজনের বুকফাটা কান্নায় অসহনীয় পরিবেশ রুপ নিয়েছে তিস্তা পাড়ে। ভাঙ্গন এলাকা ঘুরে দেখা য়ায়, একের পর এক সব কিছু যোনো নদী গর্ভে চলে যাচ্ছে। হাতিবান্ধা উপজেলার পুর্ব সিন্দুনা গ্রামের মমতাজ আলী জানান, কয়েক দিন আগে তার বাড়িতে ৫ টি ঘর ছিল, কিন্তু এখন তার কোনো অস্তিত্ব নেই। একই অবস্থার মুখোমুখি হোসেন আলী জানান, ৩ বছর আগে সেখানে তাদের বাড়ি ছিল তা নদী গর্ভে চলে যাওয়ায় ১ কিঃ মিঃ দুরে শেষ জমি টুকুতে তারা বাড়ি করে আশ্রয় নেয়। কিন্তু গত বুধবার সকালে তাও নদী গর্ভে চলে য়ায়। ভাঙ্গন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড কোন ব্যবস্থা নিতে পারছে না। ভাঙ্গন প্রসঙ্গে হাতিবান্ধা উপজেলার ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সাইয়াকুল ইসলাম কায়েদ জানান, নদী ভাঙ্গন রোধে দ্রুত কোনো ব্যবস্থা না নিলে আগামী দিনে তিস্তা তীববর্তী  লালমনিরহাট জেলার অধিকাংশ এলাকা নদী গর্ভে চলে যাবে, হারিয়ে যাবে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান। নদীর পানি বাড়লে ভাঙ্গনের পরিমান কিছুটা কমে যায়। তখন আবার নদীর পাড়ের লোকজন পানি বন্দি হয়ে পড়ে। চলতি মাসে ৩ বার তিস্তা নদীর পানি বেড়েছে। এতে গোটা লালমনিরহাট জেলার লক্ষাধিক প্রায় ২০ দিন মানুষ পানি বন্দি অবস্থায় ছিল। হাতিবান্ধা উপজেলার দোয়ানীতে অবস্থিত সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজ দোয়ানী পয়েন্টে গোটা চলতি মাসের অধিকাংশ দিনে বিপদ সীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। তিস্তা পাড়ের লোকজনের দাবী ভারত গজল ডোবা ব্যারেজের অধিকাংশ গেট খুলে দেয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আর এ কারণে পানি গতি নিয়ন্ত্রন করতে তিস্তা ব্যারেজের ৪৪ টি গেটই খুলে দেয়া হয়। ফলে এ পানিতে হাতিবান্ধা উপজেলার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিঙ্গিমারী, সিন্দুনা, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়নসহ গোটা জেলার চর এলাকার ৩২ গ্রামের মানুষ জন পানি বন্দি হয়ে পড়ে। হাজার হাজার একর আমন ধানের ক্ষেতসহ অনেক ফসলী ক্ষেত তিস্তার পানিতে ডুবে পচে নষ্ট হয়ে যায়। নদী ভাঙ্গন ও বন্যার কারণে ইতোমধ্যে চর এলাকা গুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে গেছে। পানি বন্দি পরিবার গুলো মাঝে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট দেখা দেয়। তারা অনাহারে - অর্ধাহার আর বিভিন্ন রোগের প্রার্দুভাবে ক্লান্ত ও বিধবস্ত হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। পাশা পাশি বিভিন্ন পানি বাহিত রোগ দেখা দিয়েছে। গত ২০ দিনে গোটা লালমনিরহাট জেলায় বন্যার কারণে প্রায় ৫ শতাধিক মানুষ পানি বাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এদের মধ্যে অনেকেই স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। প্রায় ২০ দিন পর এবার বন্যায় পানি বন্দি ও নদী ভাঙ্গনের শিকার পরিবার গুলোর জন্য এাণ বরাদ্দ হয়েছে । ১৫ হাজার ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের বিপরীতে মাত্র ১৮ মেঃ টন চাল বরাদ্দ পেয়েছে বন্যার্ত  ইউনিয়ন গুলো। আর এ চাল বিতরণ করতে গিয়ে বিপাকে পড়ে ইউনিয়ন চেয়ারম্যানরা। হাতিবান্ধা উপজেলার সির্ন্দুনা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নুরুল আমিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তার ইউনিয়নে প্রায় ৩ হাজার পরিবার পানি বন্দি ও ৫ শতাধিক বসতভিটা নদী গর্ভে চলে গেছে । সর্বমোট প্রায় সাড়ে ৩ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সেখানে তিনি বরাদ্দ পেয়েছেন মাত্র ১৮ মে ঃ টন চাল। তিনি জানান, যা ১০ কেজি করে বিতরণ করেতে হবে। বাদ যাচ্ছে আরও দেড় হাজার পরিবার , তাদের আমি কি দিবো ? সিঙ্গিমারী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন দুলু জানান, একজন জন প্রতিনিধি হিসেবে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার গুলোর জন্য যখন এ সামান্য এাণ নিয়ে বিতরণের জন্য যাই, তখন যে আমাদের ওই পরিবার গুলোকে নিয়ে কতটা বিপাকে পড়তে হয় তা ভাবতে কষ্ট লাগে। বিভিন্ন এাণ বিতরণ কেন্দ্র গুলো ঘুরে দেখা গেছে, এ এাণ নিয়ে জন সাধারণের মাঝে চরম ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। জন প্রতিনিধিরা ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার গুলোর তোপের মুখে পড়েছে।

হাতীবান্ধা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ফেরদৌস আলম জানান, ত্রাণ বিতরণ চলছে। আরও বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ সবাইকে সহযোগিতা করা হবে।
২৯ জুলাই ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে