এস আলম তুহিন, মাগুরা থেকে : নির্বাচনকে সামনে রেখে মাগুরাতেও রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের প্রস্তুতির পাশাপাশি ঘর গোছাতে ব্যস্ত। মাগুরাতে দুটি নির্বাচনী আসন। দুটি আসনেই সম্ভাব্য প্রার্থীরা স্ব-স্ব নির্বাচনী এলাকায় ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টারের মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ভোটারদের।
পাশাপাশি প্রত্যেকটি এলাকাতে দলীয় ও ব্যক্তিগতভাবে মতবিনিময়, কর্মিসভা, পথসভাসহ বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানে সাহায্য সহযোগিতা করছেন। এ অবস্থায় প্রতিটি দলের ভেতরে নির্বাচনী আমেজ বইতে শুরু করেছে।
বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগে প্রকাশ্যে কোনো গ্রুপিং নেই, তবে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা আছে। ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নির্বাচনে বেশির ভাগ চেয়ারম্যানই আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। যে কয়েকজন বিদ্রোহী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন তারাও আওয়ামী লীগের। সে হিসাবে এখানে আওয়ামী লীগের অবস্থান শক্ত।
মাগুরাতে বিএনপি তৃণমূল পর্যন্ত দুটি গ্রুপে বিভক্ত। একটি সাবেক মন্ত্রী বর্তমান বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, অন্যটি জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল। গ্রুপিং থাকার পরও অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা ভালো আছেন। বর্তমান আহ্বায়ক কমিটিতে তৃণমূল নেতাদের মূল্যায়ন করা হয়েছে বলে তারা মনে করেন। যে কারণে গ্রুপিং থাকার পরও দল অনেক সংগঠিত।
তার প্রমাণ হিসেবে দেখা গেছে, এবার রমজানে তারা বেশ কয়েকটি ইফতার পার্টি করেছে। যেখানে ছিল দলীয় নেতাকর্মীদের উপচেপড়া ভিড়। বর্তমান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির বড় কোনো কর্মকাণ্ড চোখে পড়ে না। ঘরোয়াভাবেই তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়ে থাকে। মাগুরা সদর ও শ্রীপুর উপজেলা নিয়ে মাগুরা-১ আসন। সেখানে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত বর্তমান সংসদ সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এটিএম আব্দুল ওয়াহ্হাব।
জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বিশিষ্ট শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. প্রফেসর এমএস আকবরের মৃত্যুর পর উপ-নির্বাচনে তিনি এমপি নির্বাচিত হন। তিনি আগামী দিনেও মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি তার এলাকায় নির্বাচনকে সামনে রেখে জনসংযোগ করছেন।
তিনি বলেছেন, রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, বিদ্যুৎসহ নানা ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। আগামী দিনে মাগুরা-শ্রীপুরের বড় বড় উন্নয়নমূলক কাজ শুরু করতে যাচ্ছেন। আর এলাকার উন্নয়নকাজে বরাদ্দ করিয়ে আনার ক্ষমতাও রয়েছে তার। এ কারণে তার প্রত্যাশা, তিনিই দলের মনোনয়ন পাবেন। দলের মনোনয়ন পেলে মাগুরাবাসী আরো ভালো কিছু উপহার দেবেন বলে তিনি আশাবাদী।
দলের অনেকের সঙ্গে তার দূরত্ব রয়েছে- এমন অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জানান, তার সঙ্গে বর্তমানে কারো কোন দূরত্ব নেই। বরং সম্পর্ক ভালো রয়েছে। তিনি কোনো অভিনয়ে বিশ্বাসী নন, কাজে বিশ্বাসী। এই আসন থেকে সম্ভাব্য দুই প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। তারা হচ্ছেন সাবেক জেলা পরিষদ প্রশাসক সৈয়দ শরিফুল ইসলাম ও শ্রীপুরের শ্রীকোল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান কুতুবউল্লাহ হোসেন মিয়া কুটি।
তবে সাবেক ছাত্রনেতা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব অ্যাডভোকেট সাইফুজ্জামান শিখর আগামী নির্বাচনে এ আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন বলে দলীয় নেতাকর্মীরা মনে করেন। সে অনুযায়ী তিনি এ আসনের প্রতিটি মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে থাকার চেষ্টা করেন। আগামী নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন পেলে নেতকর্মীদের এক করে আসনটি ধরে রাখতে পারবেন বলেও তারা আশা করেন।
সাইফুজ্জামান শিখর জানিয়েছেন, মাগুরার মানুষ তার বাবা আছাদুজ্জামানকে কয়েক দফায় এমপি নির্বাচিত করেছিলেন। এ কারণে মাগুরার মানুষের প্রতি তারও দায়বদ্ধতা রয়েছে। তিনিও মাগুরার উন্নয়নে শামিল হয়েছেন। আগামী দিনে মাগুরার মানুষের কল্যাণ শতভাগ নিশ্চিত করতে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে চাইছেন। দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরাও তাকে ব্যাপক সহযোগিতা করছেন।
এ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেতে অনেকেই দৌড়াচ্ছেন। তাদের মধ্যে ২০০৮ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী সাবেক পৌর মেয়র ইকবাল আখতার খান কাফুর, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও জিয়া পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা কবির মুরাদ, সাবেক জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি বর্তমান প্রবাসী মনোয়ার হোসেন খান, শ্রীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা বদরুল আলম হিরো আলোচনায় রয়েছেন।
জাতীয় পার্টি যদি এককভাবে নির্বাচনে যায় সেক্ষেত্রে জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট হাসান সিরাজ সুজা একমাত্র প্রার্থী। মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও জিয়া পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা কবির মুরাদ বলেন, বিএনপির চরম দুঃসময়ে তিনি আট বছর মাগুরা জেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। আন্দোলন করতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এখনও তিনি দেড় ডজনের বেশি মামলার আসামি। এসব কারণে দল তাকে মূল্যায়ন করবে। প্রায় একই ধরনের মন্তব্য করেছেন বিএনপির আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী সৈয়দ মোকাদ্দেস আলী।
তিনি বলেছেন, দলের জন্মলগ্ন থেকে শুরু করে দলের দুঃসময়েও তিনি দলের পাশে থেকেছেন। বর্তমান তিনি নেতাকর্মীদের পাশে নিয়ে তিনি কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
দলের সম্ভাব্য প্রার্থী ইকবাল আকতার খান জানান, মাঠ পর্যায়ে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি ভোটারদের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক থাকায় তিনিই দলের অন্যতম মনোনয়ন দাবিদার।
বিএনপি নেতা আহসান হাবীব কিশোর বলেছেন, তরুণ ছাত্র বয়স থেকেই তিনি বিএনপি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। করপোরেট রাজনীতিরা বিএনপিতে এসে দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। অথচ তার মতো অনেকেই শত বাধার পরও মাঠে রাজনীতি করছেন। এ কারণে মাঠের কর্মী হিসেবে তিনি দলের মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।
বিএনপির হরতাল-অবরোধ চলাকালে ২০১৫ সালে মাগুরার মঘির ঢালে পেট্রোল বোমায় পাঁচ শ্রমিক হত্যা মামলার আসামি মনোয়ার হোসেন খান দেশের বাইরে সিঙ্গাপুর রয়েছেন। তবে জানা গেছে, আগামী সংসদ নির্বাচনে তিনি মাগুরা-১ আসনের জন্য মনোনয়ন চাইবেন।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে জেলা জাসদের সভাপতি ( বাদল-আম্বিয়া ) এটিএম মহব্বত আলী, গণফোরামের জেলা সভাপতি ডা. মিজানুর ও ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সভাপতি অধ্যক্ষ কাজী ফিরোজের নাম শোনা যাচ্ছে। এমজমিন
এমটিনিউজ/এসবি