মাগুরা: স্ত্রীর মর্যাদা ও সন্তানের পিতৃত্বের দাবি নিয়ে স্বামীর বাড়ির সামনে দুই দিন যাবৎ অবস্থান করছেন তন্নী খাতুন নামের এক নারী। শনিবার সকালে শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে উঠেছিলেন তিনি। তবে সেখানে তার ঠাই হয়নি। বরং শ্বশুর মনিরুজ্জামান মন্নু তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন। অবশেষে নিরুপায় হয়ে ১৫ দিনের কন্যা সন্তানকে নিয়ে স্বামীর বাড়ির গেটে অবস্থান করছেন ওই নারী। স্ত্রীর মর্যাদা না পেলে আমৃত্যু স্বামীর বাড়ির সামনেই অবস্থানের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। ঘটনাটি ঘটেছে মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার রাড়ীখালী গ্রামে।
তন্নী খাতুন অভিযোগ করেন, ২০১৭ সালে তিনি মহম্মদপুর উপজেলার বিনোদপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে ক্লাস করে বাড়ি ফিরছিলেন। পথিমধ্যে সৌদি প্রবাসী প্রতিবেশি চাচাতো ভাই এনামুল কবীর লিটনের সঙ্গে তার দেখা হয়। এ সময় লিটন তাকে বলেন, পার্শ্ববর্তী ধোয়াইল গ্রামে বিয়ে দেয়া তার বড় বোন রানী খাতুন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ফরিদপুর মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে। তার বাড়ি লোকেরা দ্রুত তাকে ফরিদপুর যেতে বলেছে। এবস্থায় তিনি লিটনকে বড় ভাই হিসেবে বিশ্বাস করে তার মোটরসাইকেলে ওঠেন। পরে ফরিদপুর নেয়ার কথা বলে তিনি তাকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নেন। এরপর জোর করে তাকে ঢাকা নিয়ে একটি বাসায় আটকে রাখেন। বিয়ের জন্য চাপ দিলে আট দিনের মাথায় কাজী অফিসে নিয়ে লিটন তাকে বিয়ে করেন। কিছুদিন ঢাকার একটি বাসায় তারা বসবাস করেন। এক পর্যায়ে তিনি গর্ভবতী হলে স্বামী লিটন তার গর্ভের সন্তান নষ্ট করা জন্য চাপ দেন। তবে তিনি এতে রাজি হননি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে স্বামী লিটন তার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করেন।
এরপর গত ৬ জানুয়ারি তাকে ঝিনাইদহের আরাপপুর বাস স্ট্যান্ডে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। পরে মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার রাড়িখালী গ্রামে শ্বশুর বাড়িতে আসলে তারা সেখান থেকে তাকে তাড়িয়ে দেয়। তারপর থেকে তার স্বামী লিটনও বাড়ি থেকে গা ঢাকা দিয়েছে। অবশেষে তিনি বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেন। স্থানীয় ইউপি মেম্বার ও গন্যমান্য ব্যক্তিরা শ্বশুর মনিরুজ্জামান মন্নুর সাথে একাধিকার সালিশ বৈঠক করলেও তিনি পুত্র বধূকে বাড়িতে ঠাঁই দেননি। এবস্থায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি তার একটি কন্যা সন্তান জন্ম হয়।
অবশেষে তিনি এ ঘটনার বিচার চেয়ে মাগুরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে মামলা দায়ের করেছেন। একই সঙ্গে কন্যা সন্তানকে নিয়েই শনিবার সকালে তিনি স্বামীর বাড়িতে গেলে শ্বশুর মন্নু মিয়া তাকে বাড়ির বাইরে বের করে দেন। এরপর থেকে সারাদিন তিনি ১৫ দিনের শিশু সন্তানকে নিয়ে স্বামীর বাড়ির সামনে অবস্থান করছেন। স্বামী, সন্তানের স্বীকৃতি না পাওয়া পর্যন্ত আমৃত্যু তিনি সেখানেই অবস্থা করবেন বলে ঘোষণা দেন।
তন্নীর বাবা আলাল বিশ্বাস বলেন, মান সম্মানের দায়ে এক পর্যায়ে মেয়েকেসহ গোটা পরিবার বিষ খেয়ে মরতে চেয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিবেশিরা মরতে দেননি। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু সমাধান চান।
স্থানীয় ইউপি মেম্বর খালেক মেম্বর বলেন, বিষয়টি মিমাংসার জন্য তিনিসহ গোটা গ্রামবাসী একাধিকবার শালিশ করেছেন। কিন্তু লিটনের বাবা মনিরুজ্জামান মন্নু কারও অনুরোধই রাখেননি।
অভিযুক্ত লিটনকে পাওয়া না যাওয়ায় তার বাবা মনিরুজ্জামান মন্নুর সঙ্গে কথা বলতে তার বাড়িতে গেলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি বাড়ির গেট খোলেননি।
এমটিনিউজ২৪.কম/এইচএস/কেএস