নিউজ ডেস্ক: নানা অভিযোগের ভিত্তিতে মৌলভীবাজারের বিভিন্ন মার্কেটে অভিযান চালান জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের ভ্রাম্যমাণ আদালত। দেশি পণ্যে বিদেশি স্টিকার, অস্বাভাবিক দামে পণ্য বিক্রি, বিদেশি পণ্যে ইচ্ছামতো দাম বসিয়ে বিক্রিসহ নানা অভিযোগে বিভিন্ন দোকান মালিককে জরিমানা করা হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক আল-আমিনকে জিম্মি করে মারধর করেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ভেজালবিরোধী অভিযান চালানোর সময় এ ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালককে জিম্মি অবস্থা থেকে উদ্ধার করে।
ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, যখন তখন ভোক্তা অধিকারের অভিযানের কারণে আমাদের ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে। আমাদের না জানিয়ে অভিযান চালানো যাবে না।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিয়মিত ভেজালবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার মৌলভীবাজার জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালকের নেতৃত্বে ভেজালবিরোধী অভিযান চালানো হয়।
এ সময় সেন্ট্রাল রোডের ব্যবসায়ীরা জেলা ভোক্তা অধিকার অধিদফতরের সহকারী পরিচালককে মারধর করেন। সেই সঙ্গে তাকে জিম্মি করে রাখেন। পরে সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন।
জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, দুপুরে অভিযান চালিয়ে শহরের কোর্ট রোডের রাজমহলে ইফতার সামগ্রীতে পোকা থাকায় ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এরপর সেন্ট্রাল রোডের একটি কাপড়ের দোকানে গিয়ে বিদেশি প্যান্টের দাম ২ হাজার ৪০০ টাকা দেখে কাগজপত্র দেখতে চান ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক। পরে কাগজপত্রে ধরা পড়ে এটি দেশি প্যান্ট এবং দাম ৭০০ টাকা। তাই ওই দোকানকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এরপর সেন্ট্রাল রোডের এমবি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের পণ্যের অতিরিক্ত দাম, নিজেদের মতো দাম নির্ধারণের অভিযোগে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এরপর বিলাস ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে গিয়ে পণ্যের অতিরিক্ত দাম, বিদেশি পণ্যের দাম নিজেদের মতো করে নির্ধারণ, দেশি পণ্যকে বিদেশি ব্র্যান্ড নাম দিয়ে বিক্রি করার অভিযোগ করলে বিলাস কর্তৃপক্ষ আপত্তি জানায়।
এ নিয়ে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়লে আশপাশের ব্যবসায়ীরা একজোট হয়ে জেলা ভোক্তা অধিকারের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আল-আমিনকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। সেই সঙ্গে মারধর করে পাশের একটি দোকানে নিয়ে তাকে জিম্মি করে রাখেন। এ সময় আশপাশের ব্যবসায়ীরা দোকান বন্ধ করে রাস্তায় অবস্থান নেন। পরে ভোক্তা অধিকারের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আল-আমিনকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে পুলিশ।
মৌলভীবাজার জেলা বিজনেস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন বলেন, কোনো ধরনের লাঞ্ছিতের ঘটনা ঘটেনি। আমরা ব্যবসায়ী নেতারা উত্তেজিত ব্যবসায়ীদের হাত থেকে ভোক্তা অধিকারের সহকারী পরিচালককে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে রেখেছি।
বিলাস ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের মালিক সুমন আহমদ বলেন, সারা বছর জেলা ভোক্তা অধিকার ঘুমিয়ে থাকে। কিন্তু যখন ২০ রমজান আসে, জমজমাট ব্যবসার সময় তারা অভিযান পরিচালনা করে ব্যবসায় ব্যাঘাত ঘটান।
মৌলভীবাজার সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদুল ইসলাম বলেন, ভেজালবিরোধী অভিযানে গেলে ভোক্তা অধিকারের সহকারী পরিচালককে লাঞ্ছিত করেন ব্যবসায়ীরা। সেই সঙ্গে তাকে জিম্মি করে রাখা হয়। পরে আমরা গিয়ে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসি।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক আল-আমিন বলেন, পণ্যের অতিরিক্ত দাম, বিদেশি পণ্যে নিজেদের মতো করে দাম বসানো এবং পণ্যের গায়ে থাকা দামকে টেম্পারিং করে নিজেদের মতো দাম বসানোর অভিযোগে অভিযান চালানো হয়। কিন্তু অভিযানের সময় আমাদের লাঞ্ছিত করে সরকারি কাজে বাধা দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।