মৌলভীবাজার থেকে : স্বপ্ন ছিল বিদেশে গিয়ে সংসারের অভাব-অনটন মেটানো। বিবাহ উপযুক্ত দু’বোনের বিয়ে দেবেন। সংসারের সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনবেন। কিন্তু এসব যে দুঃস্বপ্ন তা বিদেশ পাড়ি দেয়ার কিছুদিন পরেই বুঝতে পারলেন তিনি।
এমন স্বপ্নভঙ্গ তরুণের নাম সাইফুল ইসলাম। তার বাড়ি হবিগঞ্জের মিরপুর এলাকায়। তার বাবা ইটের ভাটায় মাটির কাজ করেন। বিদেশ ফেরত সাইফুল বলেন, ইলেট্রিক কাজের হেলপার-ভিসার লোভ দেখিয়ে আমাকে কাতার নেয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনো কাজকর্ম দেয়নি ও করতে পারিনি।
তিনি বলেন, প্রাণভয়ে কিছুদিন সেখানে থেকে অনেক কষ্টে টাকা-পয়সার ব্যবস্থা করে দেশে পালিয়ে এসেছি। আমার মতো আলমগীর, রুবেল অনেকে খুব কষ্টে সেখানে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বিদেশে একটা ঘরে বন্দি ছিলাম। কখনো খেতে পারতাম, কখনো পারতাম না।
সাইফুল বলেন, দিনের পর দিন এই অবস্থায় পাগলপ্রায় হয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। ইয়াকুব আলীর কয়েকটা ফোন নম্বরে ফোন দিলে সে ফোন ধরতো না। এই অবস্থায় এলাকার এক লোক দয়া ধরে বিদেশ থেকে গত এক সপ্তাহ আগে বাড়িতে পাঠায়।
তিনি বলেন, বড় স্বপ্ন নিয়ে কাতার গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে কোনো কাজ করতে পারিনি। দিনের পর দিন একটি ঘরে চোরের মতো থাকতে হয়েছিল। কখনো রুটি, পানি ও শুধু পিয়াজ দিয়ে মাখিয়ে ভাত খেতে হতো, বেশির ভাগ সময় উপোস থাকতে হতো। না খেয়ে শরীর চিকন হয়ে মরার উপযুক্ত হয়েছিলাম। এখনো সেই দিনের কথা মনে পড়লে ভয়ে আঁতকে উঠি। হয়তো আর ক’দিন থাকলে সেখানে না খেয়ে মরেই যেতাম।
সাইফুল বলেন, সাতগাঁও এলাকার আঐ গ্রামের কাতারপ্রবাসী ইয়াকুব আলীর মা আলপিনা বেগম আমাদের কাছ থেকে দুই কিস্তিতে ৩ লাখ টাকা নিয়েছেন। লিখিত কাগজও দিয়েছিলেন বিদেশে কিছু হলে টাকা ফেরত দিবে। অথচ বিদেশ থেকে ফেরত আসার পর টাকা দেবে তো দূরের কথা কোনো কথাই বলা যাচ্ছে না।
এভাবে শুধু আমাকে না, অনেক মানুষকে তিনি ছেলেকে দিয়ে কাতারের ভিসা দিয়ে চাকরি দেয়ার কথা বলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তার স্বামীর নাম নোয়াজ আলী। পেশায় কাঠমিস্ত্রি।
সাইফুলের চাচি জোছনা ভানু কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ঋণ করে সাইফুলকে টাকা দিয়েছি কাতার যাওয়ার জন্য। কাতার প্রবাসী ইয়াকুব আলীর মা আলপিনা আমাদের কাছ থেকে সাইফুলকে কাতার নিয়ে ভালো চাকরি দেবে বলে ৩ লাখ টাকা নিয়েছেন। কিন্তু এখন সেই টাকা চাইতে গেলে নানা কথা বলছেন।
তিনি বলেন, আমাদের বাড়িতে দু’জন বিবাহযোগ্য মেয়ে রয়েছে। টাকার অভাবে তাদের বিয়ে দিতে পারছি না। ঋণ করে টাকা নেয়াতে পাওনাদার এসে আমাদের নানা কথাবার্তা বলছেন। আমরা গরিব, কি করে ওই ঋণ শোধ করবো- বলেন দিশাহারা জোছনা বানু।
ভূনবীর ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার বদরুল আলম বকুল বলেন, ঘটনা সত্যি। এই আলপিনা বেগমের বিরুদ্ধে বিদেশ পাঠানোর নামে অবৈধভাবে অর্থ আত্মসাতের আরো অভিযোগ রয়েছে। তার আপন দেবর তাহের আলীর কাছ থেকেও প্রতারণা করে ৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এটা নিয়ে মৌলভীবাজার আদালতে মামলাও হয়েছে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভূনবীর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান চেরাগ আলী ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, এই আলপিনা বেগম খুবই বিপজ্জনক। সাতগাঁও এলাকার বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে বিদেশ পাঠানোর কথা বলে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। নারী বলে তাকে কেউ কিছু বলার সাহস করে না। কেউ যদি সেই নারীর নামে মামলা করেন তার সাক্ষী হিসেবে আমি আদালতে দাঁড়াবো। সূত্র : মানবজমিন