নাটোর থেকে : অন্যের পুকুরপাড়ে ভাঙ্গা টিনের বেড়ার ছাউনিতে বসবাস করেন অসহায় রাফিওন বেগম। স্বামী ও দুই সন্তানকে নিয়ে পুকুর পাহারা দিয়ে চলছে তার সংসার জীবন। আশেপাশে নেই কোন বাড়িঘর। ভয়ভীতি উপেক্ষা করে দিন ও রাত কাটাতে হয় তাদের। নেই কোনো ভূমি, ঘর বা মাথা গোঁজার ঠাঁই।
তাই উচ্ছেদের ভয় মাথায় নিয়েই গত দশ বছর ধরে পুকুরপাড়ে থাকছেন তারা। এমন হতাশাগ্রস্থ দুস্থ পরিবারের দেখা মিলেছে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের বেড়গঙ্গারামপুর গ্রামে। নাজিরপুর ইউনিয়নের বেড়গঙ্গারামপুর গ্রামের টলটলি পাড়ায় কুমারখালি গ্রামের আলতুব হোসেনের লিজ নেওয়া পুকুরের এক কোণায় তৈরি ঘরে বসে স্বামী ও দুই সন্তানকে নিয়ে পুকুর পাহারা দিচ্ছেন রাফিওন বেগম।
সেই ঘরটাও পুকুর মালিকের দেওয়া। স্বামী আক্তার হোসেন পুকুর পাহারা দেওয়ার পাশাপাশি দিনমজুরের কাজ করেন। রাফিওন বেগমের দুই ছেলে। বড় ছেলে পঞ্চম শ্রেণীতে পড়াশোনা করে এবং ছোট ছেলে এ বছর স্কুলে ভর্তি হয়েছে। কারো সহায়তা না পেয়ে বাধ্য হয়ে তাদের পুকুর পাহারা দিতে হচ্ছে।
পুকুর মালিক আলতুব হোসেন বলেন, আক্তারের বাবা মৃত আরমান সরদারের জীবন কেটেছে পুকুর পাহারা দিয়ে। জমি ও ঘরবাড়ি না থাকায় পুকুরপাড়েই থাকতে হচ্ছে আক্তারের পরিবারকে। দুই সন্তানসহ দিন এনে দিন খেয়ে চলছে তাদের সংসার। বর্তমানে তাদের একমাত্র আশ্রয়স্থল এই পুকুরপাড়।
রাফিওনের ভূমিহীন স্বামী আক্তার হোসেন বলেন, আমার বাবার কোনো জায়গাজমি ছিল না। পুকুর পাহারার ওপর নির্ভর করে ছোট্ট ঘর করে দিয়েছেন পুকুর মালিক। তাই পরিবার নিয়ে মেঘ, বৃষ্টি, ঝড়, তুফানের সঙ্গে যুদ্ধ করেই পশুপাখির মতো বসবাস করতে হচ্ছে। দুর্যোগ আতঙ্কে এক মুহূর্তও শান্তিতে ঘুমাতে পারি না।
রাফিওন বেগম বলেন, আমি এক অসহায় পরিবারের মেয়ে। বিয়ের পর স্বামীকে নিয়ে অন্যের পুকুরপাড়ে মিলেছে ঠিকানা। আমাদের দেখার কেউ নেই। সরকারি কোনো সহায়তা পাইনি। শুনেছি যাদের জমি আছে ঘর নাই, ঘর আছে জমি নাই, তাদেরকে প্রধানমন্ত্রী গৃহের ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। আমার বাড়ি জমি কিছুই নেই। উপজেলা প্রশাসন আমাদের খোঁজ খবর নিয়ে গৃহের ব্যবস্থা করে দিলে সুস্থ ও সুন্দরভাবে জীবনযাপন করতে পারতাম।