মহিনুল ইসলাম সুজন, জেলা প্রতিনিধি নীলফামারী: অবশেষে জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপে বয়স্ক ভাতার কার্ড পেলেন সেই বৃদ্ধ। ” বয়স্ক ভাতার কার্ড চেয়ে ইউপি সদস্যের হাতে থাপ্পর খেলেন ৭৭ বছরের বৃদ্ধ” শিরোনামে গত রবিবার (১৩ নভেম্বর) আমাদের এই অনলাইন নিউজপোর্টালসহ দেশের বিভিন্ন গনমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের পর অবশেষে নীলফামারীর জেলা প্রশাসকের আন্তরিক হস্তক্ষেপে বয়স্ক ভাতার কার্ড পেয়েছেন নীলফামারীর কিশোরীগঞ্জ উপজেলার চাঁদখানা ইউনিয়নের নগরবন গ্রামের মৃত আব্বাস উদ্দিনের ছেলে ও ৭৭ বছরের বৃদ্ধ বাচ্চু মামুদ। সেই সঙ্গে কার্ড চাওয়ায় বৃদ্ধকে থাপ্পর মারবার অপরাধে এবং উৎকোচ গ্রহনকারী উক্ত ইউনিয়নের ১নং ওয়াডের ইউপি সদস্য লুৎফর রহমান ওই বৃদ্ধর পা-হাত ধরে ক্ষমা চেয়ে উৎকোচের অর্থ ফেরত দিতে বাধ্য হয়েছেন।
কিশোরীগঞ্জ উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মনিমুন আকতার এই প্রতিবেদককে জানান, সংবাদ প্রকাশে বিষয়টি সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নীলফামারী জেলা প্রশাসক জাকীর হোসেনেরর দৃষ্টিতে পড়লে তাৎক্ষনিক ভাবে ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দেন।তাই তরিগরি করে কিশোরীগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম মেহেদী হাসানকে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য নির্দেশ দেন।
তাই তিনিও কালক্ষেপন না করে আজ সোমবার (১৪ নভেম্বর) সকালে বৃদ্ধ বাচ্চু মামুদকে তার বাড়ি হতে উপজেলা সমাজ সেবা অফিসে নিয়ে এসে তাকে বয়স্কভাতার কার্ড তৈরী করে যাহার নম্বর (কার্ড নম্বর ৬২৭১)ওই বৃদ্ধ কে প্রদান করেন।
আর বৃদ্ধ বাচ্ছু মামুদ সংবাদ প্রকাশের পর তার বয়স্ক ভাতা কার্ড হাতে পেয়ে খুশিতে কেদে কেদে বলেন,সাংবাদিকদের রিপোর্ট যে কারেন্টের মতো কাজ করে তার আর এক বাস্তব প্রমান আমি নিজেই।আমি তাদের(সাংবাদিকদের) জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি তারা যেনো পরিবার পরিজন নিয়ে সর্বদাই ভালো,সুস্হ থাকেন।এবং সমাজে আমার মত যারা অসহায় ব্যক্তি রয়েছেন তাদের খুজে বের করে তাদেরও কথা সব সময়ে তারা তাদের লেখনির মাধ্যমে তুলে ধরেন।সমাজে অনেক ব্যক্তিই রয়েছেন যারা সরকারের অনেক সুবিধার পাবার প্রাপ্য হবার পরেও তা না পেয়ে প্রভাবশালী সংশ্লিষ্টদের শক্র হয়ে যাবার ভয়ে প্রতিবাদ না করে চুপচাপ থেকে যান।কিন্তু বর্তমান সরকার জন সাধারনের জন্য কতই না সুযোগ সুবিধা করে দিছেন!
আমি ডিসি সারের(স্যারের)জন্যও অনেক দোয়া করব।আমি শুনেছি সারের(ডিসি স্যারের) মা বলে (নাকি)এই ক'দিন আগে মারা গেইছে(গেছে),আমি দোয়া করি সারের(ডিসি স্যারের)মা কে বিধাতা জান্নাত বাসী করুক।
এদিকে ইউপি সদস্য লুৎফর রহমান একবাক্যেই নিজের ভুল স্বীকার করে জানান, জীবনে মানুষ যা ঠকে শিখে তার মত শিক্ষা হয়না।আমিও আজ ঠকে যা শিখলাম তা জীবনে আমি তো ভুলবইনা,আমাকে দেখে অনেকেই এই ভুল থেকে নিজেদের বিরত রাখবেন।তাই আমি নিজ ভুলের জন্য বাবা সমতুল্য ওই বৃদ্ধর পা-হাত ধরে ক্ষমা চেয়ে কার্ডের জন্য নেয়া উৎকোচের টাকা ফেরত দিয়েছি।
প্রসঙ্গগতঃনিজের বয়স্ক ভাতা পাবার যোগ্য হবার পরেও তা না পেয়ে পাঁচ হাজার টাকা উৎকোচ দিয়েও দীর্ঘ চার বছরেও বয়স্ক ভাতার কার্ড পাননি উক্ত বৃদ্ধ বাচ্চু মামুদ।টাকা হাতিয়ে নেয়া নীলফামারী কিশোরীগঞ্জের চাঁদখানা ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়াডের ইউপি সদস্য লুৎফর রহমান কার্ডের জন্য ৫ হাজার টাকা উৎকোচ নিয়েছিলেন।উৎকোচ দেবার দীর্ঘদিন পরও কার্ড না পেয়ে টাকা ফেরত চাইতে গেলে উক্ত ইউপি সদস্য ওই বৃদ্ধকে থাপ্পর মারেন। এ ঘটনায় ওই বৃদ্ধ গতকাল রবিবার কিশোরীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন।
১৫ নভেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস