শনিবার, ০৫ আগস্ট, ২০১৭, ০৯:৩৯:০৭

ডিমলায় মধ্যযুগীয় কায়দায় এক নারীকে গাছে বেধে নির্যাতন, তোলপাড়

ডিমলায় মধ্যযুগীয় কায়দায় এক নারীকে গাছে বেধে নির্যাতন, তোলপাড়

এম ইসলাম সুজন, নীলফামারী প্রতিনিধি: নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার খালিশা চাপানী ইউনিয়নের বাইশপুকুর গ্রামে বোনের নির্যাতনের বিচার চাইতে গিয়ে দিনব্যাপী মধ্যযুগীয় কায়দায় এক অন্তসত্তা নারীকে  গাছে বেধে অমানবিক নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে বোনের শশুর বাড়ির লোকজনসহ স্থানীয় প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে তোলপাড় চলছে ।
 
অভিযোগ উঠেছে বড় বোনের নির্যাতনের বিচার চাইতে গিয়েই তাকেও মধ্যযুগীয় কায়দায় অমানবিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে।এমনকি সেই নির্যাতনের শিকার নারীর বিরুদ্ধে দিনদুপুরে গরু চুরির অভিযোগে ডিমলা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে ।

সরেজমিনে শুক্রবার বিকেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে,নির্যাতনের শিকার শেফালী বেগম আম গাছের নিচে মাটিতে আহত অবস্থায় গড়াগড়ি দিচ্ছেন, পাশে তার দুই বছরের শিশু সন্তান ইয়াসিন তার মায়ের দিকে মলিন চোখে তাখিয়ে রয়েছেন ।হয়তোবা সে সমাজের সকলের কাছে সে চানতে চাইছেন কি এমন কারনে তার মা’র এ অবস্থা? কিন্তু শিশু হবার সুবাধে সে তার মনের ব্যাকুলতা ভাষায় প্রকাশ করতে পারেনি ।তাই তার মায়ের দিকে অসহায় ভাবে চেয়ে থাকা ছাড়া আর কি-বা করার ছিল তার।

তবে তার মা নির্যাতনের শিকার শেফালী বেগম এই প্রতিবেদকে বলেন, উপজেলার খালিশাচাপানী ইউনিয়নের বাইশপুকুর(৪নং ওয়ার্ড) গ্রামের দেবারূ ইসলামের ছেলে রফিকুল ইসলাম (৪৫)এর সাথে একই এলাকার তার বোন ও মৃত, মবিয়ার রহমানের মেয়ে আকলিমা বেগম(৩৫) এর দীর্ঘ বছর আগে বিয়ে হয় । বর্তমানে আকলিমা ৬ সন্তানের জননী ।

এমতাবস্থায় গত বৃহস্পতিবার তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র আকলিমার দেবর,শাশুরীসহ শশুর বাড়ির অন্যান্য লোকেরা তাকে পিটিয়ে কানের নথি ছিড়ে দিয়ে গুরুত্বর আহত করলে তিনি ছোট বোন শেফালী বেগম(৩০)কে বিষয়টি অবগত করেন। শেফালী বেগম এ ঘটনার পরের দিন শুক্রবার সকালে বড় বোনের নির্যাতনের বিচার চাইতে তার শশুর বাড়িতে গিয়ে কি কারনে বড় বোনকে এভাবে পিটিয়ে  আহত করা হযেছে জানতে চাইলে বড় বোন আকলিমার শশুর বাড়ি লোকেদের সাথে তার বাকবিতন্ডা এক পর্যায়ে হাতা-হাতিতে রুপ নেয়।

এ সময়ে বড় বোনের শশুর বাড়ির লোকেরাসহ স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী সহযোগীতায় ৭মাসের অন্তঃসত্ত্বা শেফালী বেগমকে বেদড়ক ভাবে পিটিয়ে গুরুত্বর আহত অবস্থায় মাঠিতে ফেলে রেখে তারাই স্থানীয় গ্রাম পুলিশের সর্দার রশিদুল ইসলাম সরকারকে খবর দেন ।

গ্রাম পুলিশ রশিদুল ঘটনাস্থলে এসে আহত অন্তসত্তা নারী শেফালীর মুখে কোনো কিছুই শুনবার প্রয়োজন মনে না করে উল্টো বড় বোনের মামা শশুর উক্ত ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক প্রভাবশালী হামিদুলের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলে গ্রাম পুলিশ এবং ওয়ার্ড আ”লীগ সভাপতি আঃ কাদের মিলে  হত্যার উদ্যেশ্যে শেফালীর মাথা মাটিতে চেপে ধরলে তিনি কাদেরের হাতে কামর দিয়ে প্রানে রক্ষা পান।

পরে গ্রাম পুলিশের সর্দার রশিদূল আহত শেফালী বেগমকে মাঠি হতে তুলে আম গাছের সাথে রশি দিয়ে জোরপুর্বক বেধে উক্ত ওয়ার্ড আ”লীগের সাধারন সম্পাদকের ছেলে ও বড় বোনের মামা শশুরের ছেলে আতাউর(৩০),দবিরের ছেলে আলী হোসেন,(৩২)বোনের স্বামী রফিকুল ইসলাম(৪৫),দেবর অফিয়ার(২৩)শাশুরী ওপেয়া বেগম(৫৫) বোন শশুরবাড়ির অন্যান্য লোকেরাসহ স্থানীয় বেশকিছু প্রভাবশালী ফের শেফালীকে বেধড়ক পিটিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করেন।

চোখের সামনে বিনা অপরাধে ছোট বোনকে এমন অমানবিক নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করতে বড় বোন আকলিমা ছুটে আসলে তাকেও গ্রাম পুলিশ রশিদুল লাথি মেড়ে মাঠিতে ফেলে দেয় ।

পরে বিকেলে নির্যাতিত অন্তসত্তা শেফালির অবস্থা বেগতিক দেখে বাধন খুলে দিয়ে বড় বোনের স্বামী ও শাশুরী ওপেয়া বেগম ডিমলা সরকারী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে নির্যাতিতা শেফালীর বিরুদ্ধে ডিমলা থানায় গরু চুরির অভিযোগ দায়ের করলে ডিমলা থানার এসআই ইমাদ উদ্দিন মোহাম্মদ ফিরোজ সঙ্গীয়ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন আহত শেফালীকে চিকিৎসা নেবার পরামর্শ দেন ।
 
এ বিষয়ে অভিযুক্ত উক্ত ওয়ার্ড আ”লীগের সভাপতি আঃ কাদেরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কাওকে মারিনি,্ওই মেয়েটি  অন্যের গরু চুরি করে নিয়ে যাবার সময়ে আমি বাধা দিলে সেই আমার হাতে কামর দেয় ও আমাকে লাথি মারে ।
অপরদিকে অভিযুক্ত আবুল হোসেন বলেন, আমি শেফালীকে ডাংমারতো দুরের কথা তার শরীরে স্পর্শও করিনি,সে দিনদুপুরে গরু চুরি করতে গিয়ে হাতে-নাতে ধরা পড়ে উল্টো নির্যাতনের নাটক সাজিয়েছেন মাত্র ।

 ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী ডিমলা থানার এসআই ফিরোজ বলেন, আমি অভিযোগের ভিত্তিতে সেখানে গিয়ে ওই নারী (শেফালী)কে যদি সে প্রকৃত অসুস্থ হয়ে থাকেন তবে চিকিৎসা নেবার পরামর্শ দিয়েছি। বাকি বিষয়ে অভিযোগের তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে ।

ডিমলা থানার ওসি মোয়াজ্জেম বলেন,গাছে বেধে নির্যাতনের মত  কোনো ঘটনা ঘটেনি, ওই মেয়েটি গরু চুরি করতে গিয়ে  এলাবাসীর হাতে আটক হলে তখন তিনি কয়েকজনকে কামড় দিয়ে আহত করেন
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে