মীরগঞ্জ থেকে: গেল দু’বছর আগে জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলায় শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘আলোর মিছিল’ যে সবুজায়ন আন্দোলন শুরু করেছিল তা এখন ছড়িয়ে গেছে দেশের নানা প্রান্তে। সবশেষ মঙ্গলবার রাজশাহীর বাঘা উপজেলার মীরগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজেদের এক দিনের টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে সহস্রাধিক গাছের চারা রোপণ করেছে। এর মধ্যে বজ্রপাত প্রতিরোধে ৭০০ তালবীজ রোপণ করেছে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় ২০১৫ সালে ‘একদিনের টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে গাছ রোপণ’-এর এই অভিনব থিম আবিষ্কার করেন অদম্য তরুণ সাংবাদিক জুবায়ের আল মাহমুদ রাসেল। তিনি মূলত ২০১০ সাল থেকে সৃজনশীল মানুষ গড়তে বিভিন্ন স্কুলে বইপড়ার আন্দোলন শুরু করেন। এরপর ২০১৫ সাল থেকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় শিক্ষার্থীদের সচেতন করার মাধ্যমে একদিনের টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে গাছ রোপণ শুরু করেন। যা এখন বৃক্ষরোপণ উৎসবে পরিণত হয়েছে। ওই বইপড়া কর্মসূচিতে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরাই মূলত প্রথমবার বৃক্ষরোপণ করে।
সবশেষ মঙ্গলবার রাজশাহীর বাঘা উপজেলার মীরগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।এতে ওই বিদ্যালয়ের ৫ শতাধিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অংশ নেন শিক্ষকরাও।
মীরগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় আয়োজিত এই উৎসব উদ্বোধন করেন বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ফজলুল হক। উৎসবে অন্যান্যর মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মীরগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বকুল, মীরগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মশিউর রহমান, হরিরামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শাহ্ আলম, মীরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল্লাহেল বাকী, বডার গার্ড বাংলাদেশের মীরগঞ্জ সীমান্ত ফাঁড়ির বিওপি কমান্ডার আরশাদ আলী, এবং মীরগঞ্জ কলেজের প্রভাষক রেদুয়ানুর রহমান মাসুম।
জানতে চাইলে মীরগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বকুল জানান, ‘একদিনের টিফিনের টাকায় গাছ রোপণের এই থিম অনুযায়ি গেল বছরও তার প্রতিষ্ঠানে বৃক্ষরোপণ হয়েছে। এবার দ্বিতীয় বারের মতো হলো। বরাবরের মতো এবারও শিক্ষার্থীরা যেমন স্বতস্ফুর্তভাবে এই উৎসবে অংশ নিয়েছে, তেমনি শিক্ষকরাও।’
মিস্টার বকুল আরও জানান, মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘আলোর মিছিল’ দু’বছর আগে যে আন্দোলন শুরু করেছে সেই আন্দোলনের অংশ হিসেবেই আজ তিনি তার বিদ্যালয়ে এই উৎসব আয়োজন করেছিলেন। পাশাপাশি বজ্রপাত প্রতিরোধে এবার তিনি শিক্ষার্থীদের তাল গাছ রোপণেও উৎসাহিত করেছেন।
মিস্টার বুকল জানান, ‘আমি প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে বাড়ি থেকে অন্তত একটি করে তাল বীজ নিয়ে স্কুলে আসতে বলেছি। পাশাপশি টিফিনের টাকা দিয়েও কেনা হয়েছে গাছ। সব মিলিয়ে ৭০০ তাল বীজ এবং তিন শতাধিক মেহগনির চারা রোপণ করা হয়েছে। তাল বীজগুলো মীরগঞ্জ বিওপি সংলগ্ন পদ্মা নদীর বাঁধের দুই ধার দিয়ে দুই কিলোমিটার পর্যন্ত রোপণ করা হয়। আর মেহগনির চারা শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করা হয়। শিক্ষার্থীরা নিজেদের টিফিনের টাকায় কেনা গাছ নিজ নিজ বাড়িতে রোপণ করেছে।’
বৃক্ষরোপণ উৎসব সম্পর্কে আলোর মিছিলের প্রতিষ্ঠাতা ও সাংবাদিক জুবায়ের আল মাহমুদ জানান, ২০১৫ সাল থেকে শুরু হওয়া বৃক্ষরোপণ আন্দোলনের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত অন্তত দেড় লাখ গাছ রোপণ হয়েছে।
তিনি জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সহযোগিতার মাধ্যমে এ বছর তিনি তার সবুজায়ন আন্দোলন রাজশাহীর বাঘা ও চারঘাট, পাবনার ঈশ্বরদী ও নাটোরে বড়াইগ্রাম উপজেলায় ছড়িয়ে দিতে পেরেছেন। এ কারণে ২০১৫ সালে ১৭ হাজার এবং ২০১৬ সালে ৩০ হাজার গাছ রোপণ হলেও এবছর উল্লেখিত এই চার উপজেলায় অন্তত লক্ষাধিক গাছের চারা রোপণ হয়েছে।
আগামীতে তিনি এই আন্দোলন দেশব্যাপি ছড়িয়ে দিতে চান বলেও জানান। এ কারণে এরই মধ্যে বিভিন্ন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদের সঙ্গে এই সবুজায়ন আন্দোলন বিষয়ে আলোচনা করছেন তিনি। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করেও তিনি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করছেন।
এমটিনিউজ২৪ডটকম/আ শি/এএস