নিউজ ডেস্ক : নীলফামারী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী সুরভী রায় বৃষ্টি আত্মহত্যার ঘটনায় বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে তার সহপাঠীরা।
রবিবার বিকেলে বিদ্যালয় চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে চৌরঙ্গী মোড়ে সড়ক অবরোধ করে সন্ধ্যা পর্যন্ত অবস্থান করে তারা। পরে সেখারে স্বাধীনতা অম্লান স্মৃতি স্তম্ভে নিহত সহপাঠীর সমবেদনায় মোমবাতি প্রজ্জলন করে ফিরে যায় তারা।
সহপাঠীদের অভিযোগ, নির্বাচনী পরীক্ষায় কম নম্বর দিয়ে কটাক্ষ করা হয়েছে। ওই কটাক্ষ সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে বৃষ্টি। বিক্ষোভ চলাকালে ওই ঘটনায় দায়ি শিক্ষকের বিচার দাবিতে স্লোগান তুলে তারা।
সহপাঠীরা অভিযোগ করে জানায়, নিতহ সুরভী রায় বৃষ্টি দশম শ্রেণির মানবিক বিভাগের একজন মেধাবী ছাত্রী। পঞ্চম শ্রেণিতে এ এবং জেএসসিতে এ প্লাস গ্রেড অর্জন করেছে সে। এবারে দশম শ্রেণির নির্বাচনী পরীক্ষা শেষে উত্তরপত্রের নম্বর দেখানো হয় কয়েকদিন ধরে।
গত ২ নভেম্বর ভূগোল বিষয়ে দুই নম্বর এবং ইতিহাস বিষয়ে পাঁচ নম্বর দেখানো হয়েছে তাকে। ওই নম্বর নিয়ে ক্লাসরুমে বন্ধুদের সামনে ভূগোল বিষয়ের শিড়্গক মকছেমুল হাকিম কটাক্ষ করে কথা বলায় নিজেকে অপমানিত বোধ করে মানষিকভাবে ভেঙে পড়ে বৃষ্টি। এ কারণে আত্মহত্যা করেছে সে।
তারা আরো অভিযোগ করে বলেন, 'বিদ্যালয়ের কোচিং বাণিজ্য এর জন্য দায়ী। ক্লাসের শিক্ষকের কাছে কোচিং না করলে পরীক্ষার খাতায় নম্বর কম দেওয়া হয়। যেটি বৃষ্টির ক্ষেত্রেও ঘটেছে। এ ছাড়া নির্দিষ্ট গাইড বই থেকে পরীক্ষার প্রশ্ন করা হয়। সেটির সঙ্গে না মিললে নম্বর দেওয়া হয় না।
বৃষ্টি জেলা সদরের কুন্দপুকুর ইউনিয়নের পূর্বপাটকামুড়ি গ্রামের ভিস্মু দেব রায়ের মেয়ে। তিন বোনের মধ্যে সবার বড় সে। বাড়ি থেকে স্কুল দুরে হওয়ায় লেখাপড়ার জন্য ছোটবেলা থেকেই জেলা শহরের মিলনপল্লী গ্রামে মামা কৃষ্ণ রায়ের বাড়িতে অবস্থান করে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করে বৃষ্টি। গত শনিবার বিকেলে ওই বাড়ির একটি ঘরে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে সে।
বৃষ্টির মামা কৃষ্ণ রায় বলেন, 'স্কুলে কি হয়েছে সেটি বাড়িতে এসে বলেনি বৃষ্টি। তবে তার মানষিক অবস্থা খাবাপ দেখা গেছে। শনিবার বিকেলে আত্মহত্যার আগে একটি চিরকুট লিখে রাখে। তাতে অভিভাবকের উদ্দেশ্য লেখা ছিল 'আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ি না। আমি তোমাদের মান রাখতে পারলাম না। '
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য বিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষক মকছেমূল হাকিমকে পাওয়া যায়নি। তাঁর মুঠোফোনে কথা বলার চেষ্টা করা হলে ফোন কল রিসিভ করে বলেন এক মিনিট পরে ফোন দিচ্ছি। এরপর ফোনটি বন্ধ রাখেন।
এ ব্যাপারে নীলফামারী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাহের বানু বলেন, 'ওই ছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনা শুনেছি। আমি আজকে (রবিবার) সকালে তার বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা করেছি। আজ বিকেলে নির্বাচনী পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। তাতে বৃষ্টি উত্তীর্ণ হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে তার সহপাঠীরা কেন বিক্ষোভ নিয়ে রাস্তায় নেমেছে তা আমার জানা নেই। বিষয়টি আমি জেলা প্রশাসককে জানিয়েছি। '
তবে বিদ্যালয়ে কোচিং বাণিজ্য এবং নির্দিষ্ট গাইডবই পড়ানোর অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খালেদ রহীম বলেন, 'আমি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে বলেছি। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের অভিযোগ শুনার জন্য সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মামুন ভুইয়াকে দায়িত্ব প্রদান করেছি।
নীলফামারী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাবুল আকতার বলেন, 'ওই ছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনায় গত শনিবার সন্ধ্যায় লাশ উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।
এমটিনিউজ২৪/এম.জে/এস