নীলফামারী: নীলফামারীর সৈয়দপুরে গবাদিপশুর খামারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী মো. নজরুল ইসলাম (৬৫) ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী সালমা বেগমকে (৫৫) গলা কেটে হত্যার ১০ দিনের মাথায় ঘটনার নেপথ্যের কাহিনী পুলিশ উদ্ধার করেছে।
সেই সঙ্গে হত্যাকারী ওই খামারের কেয়ারটেকার আব্দুল রাজ্জাককে মঙ্গলবার গ্রেফতার করা হয়েছে। এ দিন বিকালে গ্রেফতার ওই কেয়ারটেকার হত্যাকাণ্ডের ঘটনার নেপথ্য তুলে ধরে নীলফামারী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাহিদ হাসানের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবাববন্দি দিয়েছে।
কেয়ারটেকার আব্দুল রাজ্জাক (৪০) নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার বাবুরহাট গ্রামের খয়রাত হোসেনের ছেলে বলে জানায় পুলিশ।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সৈয়দপুর সার্কেল) অশোক কুমার পাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আদালতের কাছে কেয়ারটেকার তার জবানবন্দিতে জানান, ভেড়া ও গরুর এই খামার প্রতিষ্ঠার পর থেকে তিনি এই খামারে কর্মরত। খামারের মালিক ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী এবং তাদের ছেলেরা তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতেন। ঠিকমতো বেতন প্রদান করতেন না। রোগে আক্রান্ত হয়ে খামারের কোনো ভেড়া মারা গেলে ভেড়ার দাম বেতনের অংশ থেকে কেটে নিতেন। ছুটি চেয়ে বাড়ি যেতে চাইলে তারা ছুটিও দিতেন না। ছোটখাটো দোষত্রুটি পেলে মারধর করতেন।
কেয়ারটেকার জবানবন্দিতে বলেন, ঘটনার দিন ২৬ জানুয়ারি রাতে খামারের মালিক নজরুল ইসলামের কাছে ৭দিন ছুটি চেয়ে বাড়ি যাওয়ার জন্য বললে তার দ্বিতীয় স্ত্রী সালমা বেগম ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে তাকে লাঠি দিয়ে আঘাত করেন। তাও সহ্য করে তিনি কিছুই বলেননি। ওই রাতে খামারের ভেড়ার পালে একটি ভেড়া অসুস্থ হয়ে পড়ে চিৎকার করতে থাকে। এ সময় তিনি খামারের মালিকের ঘরে গিয়ে তাদের ডাক দেই। এ সময় খামারের মালিকের স্ত্রী সালমা বেগম ঘুম থেকে উঠে এসে তাকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে লাঠির আঘাত করলে তিনি আর নিজে সংযত করতে না পেয়ে তার হাতে থাকা ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে আঘাত করেন।
কেয়ারটেকার আদালতে আরও বলেন, স্ত্রীর চিৎকারে ঘর থেকে বের হয়ে ছুটে আসেন খামার মালিক নজরুল ইসলাম। তিনি তার স্ত্রীকে রক্তাক্ত দেখতে পেয়ে তার হাতে থাকা ধারালো অস্ত্র দিয়ে আমাকে (কেয়ারটেকার) আঘাত করলে আমি পাল্টা আঘাত করে তাকেও হত্যা করি। পরে স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যু নিশ্চিত করতে তাদের গলা ও পায়ের রগ কেটে দেই।
পরে কেয়ারটেকার আব্দুর রাজ্জাকের স্বীকারোক্তি জবাববন্দি রেকর্ড করে তাকে জেলহাজাতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
উল্লেখ্য, সৈয়দপুর উপজেলার খাতামধুপুর ইউনিয়নের বালাপাড়া গ্রামে হাজী আসলামের জমি লিজ নিয়ে গড়ে তোলা ভেড়ার খামারে গত ২৬ জানুয়ারি রাতের ওই হত্যাকাণ্ডের পর কেয়ারটেকার আব্দুর রাজ্জাকও দুই লাশের সঙ্গে আহত অবস্থায় ঘটনাস্থলে পড়েছিল। তাকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল। ওই ঘটনায় ২৮ জানুয়ারি ৪ জনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করা হয়।
আসামি করা হয় কেয়ারটেকার আব্দুর রাজ্জাক, খামারের জমির মালিক হাজী আসলামের ছেলে সজল, তার বন্ধু সুজাত ও কাউয়াকে।
কেয়ারটেকার আব্দুর রাজ্জাককে পুলিশি হেফাজতে রেখে রংপুর মেডিকেল থেকে গত তিন দিন আগে সৈয়দপুর ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে এসে চিকিৎসা চলছিল। তিনি সুস্থ হয়ে উঠলে হাসপাতালেই প্রাথমিকভাবে পুলিশের কাছে এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেন। এরপর মঙ্গলবার সৈয়দপুর হাসপাতাল থেকে তাকে রিলিজ দেয়া হলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠালে ১৬৪ ধারায় হত্যাকাণ্ডের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রের্কড করা হয়।