শুক্রবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২০, ০৯:৩৭:০৪

ক্ষুধার্তদের জন্য নিজের গোলা খুলে দিলেন কৃষক রফিকুল, খালি হাতে ফিরে যায়নি কেউ

ক্ষুধার্তদের জন্য নিজের গোলা খুলে দিলেন কৃষক রফিকুল, খালি হাতে ফিরে যায়নি কেউ

নীলফামারী: করোনার প্রভাবে কর্মহীন হয়ে পড়া হতদরিদ্র ক্ষুধাপীড়িত মানুষের জন্য নিজের ঘরের গোলা খুলে দিয়েছে কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করা এক কৃষক। গ্রামের খেটে খাওয়া ও দিন এনে দিন খাওয়া মানুষগুলো প্রতিদিনই ভীড় করছেন তার বাড়িতে। কাউকেই ফিরিয়ে দিচ্ছেন না খালি হাতে। প্রতিজনকেই ন্যুনতম ৫ কেজি থেকে ১০ কেজি পর্যন্ত চাল তুলে দিচ্ছেন স্বপরিবারে। অতীত জীবনের অভিজ্ঞতা লব্ধ তীক্ত উপলব্ধি থেকেই তার এ উদ্যোগ বলে জানিয়েছেন মানবতাবাদী এ মানুষ। যার সহযোগিতায় দীর্ঘ কয়েকদিন থেকে দু’বেলা খেয়ে বেঁচে আছে কয়েকশ’ অসহায় পরিবার। ঘটনাটি নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড পশ্চিম হাজিপাড়ার।

গত কয়েকদিন যাবত এ সং'ক্রান্ত খবর পাওয়া যাচ্ছিল বিভিন্ন জন থেকে। তাই বিষয়টি যাচাই করতে বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টায় সরেজমিনে উপস্থিত হই ঘটনাস্থলে। যাওয়ার পথেই দেখা যায়, দলে দলে লোকজন চাল নিয়ে ফিরছেন ওই গ্রামের কৃষক মোঃ রফিকুল ইসলামের বাড়ি থেকে। বাড়িতে পৌছে দেখি উঠানে প্রায় অর্ধ শতাধিক হতদরিদ্র মানুষ। ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা থেকে তারা এসেছেন কিছু চালের জন্য। ঘরের বারান্দায় রাখা বস্তা থেকে ৫ কেজি করে চাল মেপে দিচ্ছেন কৃষক রফিকুল। 

একে একে প্রত্যেককেই চাল দিলেন তিনি। তাকে সহযোগিতা করছেন তার স্ত্রী গৃহিনী মনি বেগম ও বড় ছেলে সৈয়দপুর শহরের জামে আরাবিয়া মাদরাসার নুরানী বিভাগের ছাত্র মুরাদ ইসলাম (১০)। আগতদের দেয়া শেষ না হতেই আরও অনেকে এসে উপস্থিত। কিন্তু তারপরও কৃষক পরিবারের কারই মুখে নেই বিন্দু মাত্র বিরক্তি বা বি'ষাদের ছাপ। অত্যন্ত আনন্দের সাথেই সবাইকেই চাল দিয়ে চলেছেন তারা।

এরই ফাকে কথা হয় ৪ নং ওয়ার্ডেরই হুকলিপাড়া ও খোর্দ্দপাড়া থেকে আগত কয়েকজনের সাথে কথা হয়। এর মধ্যে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী যুবক শাহিনের সাথে। সে জানায়, বিগত প্রায় ১ সপ্তাহ যাবত রফিকুল ইসলাম তার পাড়াসহ আশে পাশের কয়েকটি পাড়ার হতদরিদ্র মানুষকে তার সামান্য সামর্থ দিয়েই সহযোগিতা করে চলেছেন। যা এলাকার অনেক ধনী ব্যক্তিও করছেন না। 

এমনকি চেয়ারম্যান মেম্বাররাও সরকারী ত্রাণ না আসার অজুহাতে এগিয়ে আসেনি। তারা ব্যক্তিগতভাবে কোন সহযোগিতাই করছেন না সাধারণ খেটে খাওয়া ক্ষুধার্ত মানুষগুলোকে। এমতাবস্থায় রফিকুল ইসলাম তার ভান্ডার খুলে দিয়েছেন এলাকাবাসীর জন্য। যার ফলে ভিক্ষুক থেকে শুরু করে রিক্সা-ভ্যান চালক, দিনমজুর, ক্ষুদ্র দোকানদার, ফেরিওয়ালাসহ নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্ত যারাই অভাবগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন তারা কিছুটা হলেও সহায়তা পাচ্ছেন। এতে অন্যান্য এলাকার মত আমাদের এলাকায় তেমন হা হা কার পরেনি।

হতদরিদ্র লক্ষী রানী বলেন, রফিকুল ভাইয়ের বলতে গেলে কিছুই নাই। সামান্য কৃষি কাজ করে সংসার চালায়। কিন্তু তা থেকেই তিনি যেভাবে আমাদের মত গরীবের জন্য এতবড় কাজ করছেন। এটা দেখে ধনী মানুষগুলোর শিক্ষা নেওয়া উচিত।

মোঃ সলিম বলেন, চেয়ারম্যান মেম্বাররাও যেখানে ত্রাণ দিতে হিমশিম খাচ্ছে সেখানে রফিকুল ভাই যে এমন একটা সাহসী উদ্যোগ নিয়েছেন তা সত্যই প্রশংসার যোগ্য। কিন্তু এতে তার বিন্দুমাত্র অহং'বোধ নেই। বরং তার কথা বিপদেই যদি মানুষের পাশে না দাঁড়াতে পারি তাহলে কি হবে বেঁচে থেকে।

অমিছা বেগম বলেন, পরায় এক মাস ধরি ভিক (ভিক্ষা) করির পারিছি না। ঘরত এক দানা খাবার নাই। মেম্বারের কাছত গেইলে কয়ছে সরকারী ত্রাণ যতনা আসিছে তাক শেষ। পাড়ার মাইনসের কাছে শুনি আনু রফিকুলের বাড়িত। এলা ৫ কেজি চাউল পাছো। আরও মেলা মানুষ যায় আসছে তায় পাইছে। আল্লাহ ভালো করুক।

চাল দেয়ার মাঝে এক মুহূর্তের জন্য কথা হয় কৃষক রফিকুল ইসলামের সাথে। তিনি জানান, আমি তেমন শিক্ষিত মানুষ নই। জীবনে অনেক কষ্ট করে বর্তমান পর্যায়ে এসেছি। এক সময় আমিও ক্ষুধার জ্বালায় অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করেছি। কিন্তু কারো কাছে হাত পাততে পারেনি। তাই জানি এমন পরিস্থিতিতে মানুষ কতটা অসহায় হয়ে পড়ে।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে