নীলফামারী থেকে : নীলফামারী সরকারি কলেজের মেধাবী ছাত্রী লতা রায়। এবার বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় পেয়েছেন 'এ' প্লাস। হতে চান চিকিৎসক। এজন্য মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য আবেদনও করেছেন। এখন লিখিত পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন লতা রায়। কিন্তু বাবার অভাবের সংসার।
তিনি নিজেও প্রচণ্ড মাথার যন্ত্রণায় ভোগেন। অর্থের অভাবে চিকিৎসাও করাতে পারেন না। তাই অর্থ জোগাতে রাস্তায় নেমেছিলেন বাদাম বিক্রি করতে। লোকজন যাতে তাকে চিনে না ফেলে সেজন্য বোরকা পরেই বাদাম বিক্রি করেন লতা রায়। লতা রায়ের বাদাম বিক্রির বিষয়সহ তার পারিবারিক অবস্থা স্থানীয় মাধ্যমে জানতে পারেন নীলফামারী সদর আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।
তিনি ঢাকায় থাকায় বিষয়টি খোঁজ নিতে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুদ রহমান ও জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক ইসরাত জাহান পল্লবীকে রোববার (১৪ মার্চ) লতার বাড়ি পাঠান। সেখানে আসাদুজ্জামান নূর মোবাইলে লতার সঙ্গে কথা বলেন এবং তার মাথা ব্যথার চিকিৎসাসহ লেখাপড়ার দায়িত্ব নেন। পাশাপাশি তাৎক্ষণিকভাবে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয় লতা রায়কে।
লতা রায় বলেন, ''আমি নিজের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে বাদাম বিক্রি করতে রাস্তায় নামতে বাধ্য হই। নীলফামারী শহরে এসে বাদাম বিক্রি করতাম, যা লাভ হতো তা খারাপ ছিল না। এভাবে অল্প অল্প করে টাকা জমাচ্ছিলাম। একটি বড় হতাশা থেকে মুক্তি পেলাম। আমাদের সংসদ সদস্য আসাদুজ্জান নূর আমার সব দায়-দায়িত্ব নিয়েছেন। আপনারা আমার জন্য প্রার্থনা করবেন, আমি যেন মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়ে একজন চিকিৎসক হতে পারি। চিকিৎসক হতে পারলে এলাকার গরিব-দুঃখী মানুষের চিকিৎসাসেবা দিতে পারব।''
নীলফামারী সদরের গোড়গ্রাম ইউনিয়নের ডারারপাড় নিজপাড়া গ্রামের জগন্দ্র রায়ের মেয়ে লতা রায়। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লতার বয়স যখন সাড়ে চার বছর তখন তার মা ভানুমতি রায় মারা যান। বাবা জগন্দ্র রায় দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সেই ঘরে রয়েছে হিমন রায় নামের ১৫ বছরের ছেলে। সংসারে অভাব-অনটন থাকায় এখন লতা রায়ের বাবা ঢাকায় ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করছেন। সংসারে অভাব-অনটন থাকায় প্রাইভেট পড়িয়ে নিজের লেখাপড়ার খরচ চালিয়েছেন এতদিন। মেডিকেলে পড়ার খরচ অনেক। তাই বাড়তি আয়ের জন্য বাদাম বিক্রির পথ বেছে নিয়েছেন লতা রায়।