এবার ঘরে ঘরে গিয়ে দরজার কড়া নেড়ে কুরবানি ঈদের মাংস নিজ হাতে বিতরণ করলেন এক ইউএনও মাহবুব হাসান। আর এসব কোরবানির মাংস হাতে পেয়ে তাদের মাঝে অনেকের আনন্দাশ্রু বইতে দেখা গেছে।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, নীলফামারীর জলঢাকায় বিভিন্ন ইউনিয়নের আশ্রয়নে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর উপহার ঈদের কুরবানির মাংস নিয়ে আকস্মিক উপস্থিত হন উপজেলা নির্বাহী অফিসার।
এসময় ধর্মপাল ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সবুজপাড়ায় আশ্রয়নের বাসিন্দা সুরুজ্জামান জানান, তিন বছর আগে অভাবের তাড়নায় রিকশা চালাতে ঢাকায় যান। একদিন পেছন হতে দানবের মতো কী যেন এসে আমাকে চাপা দেয়। জ্ঞান ফিরে দেখেন তিনি হাসপাতালে।
বাম হাত ও বাম পা অকেজো। সেই থেকে তিনি পঙ্গু হয়ে আছেন। দুজন ছেলে সন্তান, তারাও ছোট। এতোদিন রাস্তার ধারে একটা ভাঙ ছাপড়ায় ছিলেন। আয়ের উৎস তার স্ত্রী। কতদিন অনাহারে কেটেছে তার হিসাব জানেন না। গতবছর প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরের জন্য আবেদন করলে তা থেকেও অজ্ঞাত কারণে তার নাম বাদ পড়ে। বিষয়টি তিনি ইউএনও-কে জানালে তিনি সরেজমিন অবস্থা দেখে একটি করে ঘর বরাদ্দ দেন। বলেন, ঘর পেয়ে আমরা খুশি হয়েছি। আমরা প্রতি ওয়াক্ত নামাজ শেষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্য দোয়া করি।
মাংস হাতে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে মীরগঞ্জহাট আশ্রয়নের বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন বলেন, আমি বাসে হেল্পারি করতাম। একদিন সড়ক দুর্ঘটনায় ডান পা বিচ্ছিন্ন হলে আমি চিরতরে পঙ্গু হয়ে যাই। সেই থেকে সীমাহীন কষ্টে চলে আমার জীবনগাড়ি। আশ্রয়নের ঘর পেয়ে এখন ঝড়-বৃষ্টিতে আমাদেরকে আর আতঙ্কে থাকতে হয় না। প্রধানমন্ত্রীর যেসব উপহার আসে তা ইউএনও স্যার নিজ হাতে বিতরণ করেন। ঈদের আগে নগদ টাকা ও কাপড় পেয়েছি। আজ মাংস পেলাম। আমরা অনেকেই শুধু মাংস রান্নার ঘ্রাণ উপলব্ধিই করে যাই। অভাবের কারণে অনেক সময় মুখে ওঠে না। এখানে এসে অনেক সুবিধা পাচ্ছি। এসব আমরা কল্পনাও করি নাই, যেন স্বপ্ন দেখছি।
এদিকে কুরবানির মাংস বিতরণের সময় সাথে ছিলেন ইউএনও-পত্নী ফারজানা সুলতানা পলি, ধর্মপাল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জমিনুর রহমান, কৈমারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রেজাউল হক বাবু, গোলনা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কামরূল আলম কবির, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান স্টালিন, ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান হাবি, তবিবর রহমান, সাংবাদিক আবেদ আলী প্রমুখ।