এমটি নিউজ ডেস্ক : অভাবের কারণে তৃতীয় শ্রেণিতে উঠেই স্কুল ছেড়েছিলেন। ১৩ বছর বয়সে বাধ্য হয়েছিলেন বিয়ের পিঁড়িতে বসতে। দিনমজুর স্বামীর সংসারে এসেও অভাব পিছু ছাড়ছিল না। একবেলা খাবার জুটলেও অন্য বেলা উপোস থাকতে হতো। এরই মধ্যে স্বপ্ন দেখেন নিজে কিছু করার।
এ অবস্থায় ২০১২ সালে ছাগল পালন শুরু করেন। দেখতে দেখতে ছোটখাটো একটি খামার হয়ে যায় তাঁর। সংগ্রামী মানুষটির নাম পারুল রানী। বাড়ি রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামে। গত ৮ বছরে ১৫৫টির বেশি ছাগল
বিক্রি করে আয় করেছেন অন্তত সাত লাখ টাকা। শুধু নিজের ভাগ্য বদল করে থেমে থাকেননি। প্রতিবেশী ও আশপাশের গ্রামের অভাবগ্রস্ত নারীদেরও পথ দেখিয়েছেন। বিষ্ণুপুরসহ আশপাশের তিনটি গ্রাম মিলিয়ে ২০০ নারী এখন ছাগল পালন করছেন।
পারুলের মতো তাঁদেরও বাড়িতে এখন ছাগলের খামার। নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার বাহাগিলি গ্রামে ১৯৮৮ সালে জন্ম পারুল রানীর। চার ভাইবোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। ২০০১ সালে বাবা মহেশ চন্দ্র কিশোরী পারুলকে বিয়ে দেন রংপুরের
তারাগঞ্জ উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের সুজা বর্মণের সঙ্গে। বাবার বাড়ির পর স্বামীর বাড়িতে এসেও অভাব, দারিদ্র্য মেনে নিতে পারেননি পারুল। কিছু করার স্বপ্ন থেকে শুরু করেন পিঠা বিক্রির ব্যবসা। এতে কিছু আয় হয়। তিন মাসের লাভের টাকায়
কেনেন ১০টি হাঁস ও ১০টি মুরগি। ৯ মাস পর সেগুলোর বাচ্চা বিক্রি করে এবং পিঠা বিক্রির জমানো টাকায় একটি দেশি জাতের ছাগল কেনেন। পাশাপাশি ধান সেদ্ধ করে চালের ব্যবসাও শুরু করেন। ছয় মাস পর ছাগলটি তিনটি বাচ্চা দেয়। চাল বিক্রি
করেও ৩ হাজার ৮০০ টাকা জমা হয়। এই টাকা দিয়ে ২০১২ সালে আরও দুটি ছাগল কেনেন। বছর না ঘুরতেই কেনা ছাগল দুটিও বাচ্চা দেয় চারটি। এভাবে বাড়তে থাকে ছাগলের সংখ্যা। ২০১৬ সালে ছাগল বিক্রি করে আয় করেন ৮০ হাজার টাকা। ওই টাকা দিয়ে ২৮ শতক জমি বন্ধক নেন। চলতি বছর ২০টি ছাগল বিক্রি করে পারুল আয় করেছেন ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা।
বর্তমান তাঁর খামারে ৩০টি ছাগল আছে। লাভের টাকায় খড়ের ঘরের জায়গায় টিনের ঘর করেছেন পারুল। কিনেছেন ২২ শতক জমি। আছে একটি গাভিও। এখন ছাগল পালন করে বছরে দেড় লক্ষাধিক টাকা আয় করছেন। পারুলের সাফল্য দেখে প্রতিবেশী নারীরাও ছাগল পালনে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। পারুল তাঁদের
ছাগল পালনের পরামর্শ দেন। ধীরে ধীরে কুর্শা ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর, অনন্তপুর, পূর্ব কুর্শা গ্রামের দুই শতাধিক নারী ছাগল পালনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন। বিষ্ণুপুর গ্রামের মণিকা রানী জানান, এখন নিজের প্রয়োজনীয় জিনিসের জন্য স্বামীর কাছে হাত পাততে হয় না। পারুলের কাছে ছাগল পালন শিখে তিনি এখন নিজে বছরে ৫০-৬০ হাজার টাকা আয় করছেন। ছাগল বিক্রির লাভের টাকায় ২৮ শতক জমি বর্গাও নিয়েছেন। গাছপালায় ঘেরা বাড়িতে শাকসবজি চাষ করছেন।
ওই গ্রামের ছাগল পালন করে স্বাবলম্বী হওয়া বিউটি রানী বলেন, ‘আগোত ঘরোত বসি আছনো। পারুল দিদির পরামর্শে তাঁর খামার থাকি একটা ছাগল কিনি পালন শুরু করছি। এখন ১০টা ছাগল আছে। ছাগল বেচা টাকায় সংসার ভালো চলোছে। ছেলেমেয়েরাও স্কুলে পড়ছে।’ অনন্তপুর গ্রামের সিন্ধুবালার সংসারে অভাবের কারণে প্রায়ই ঝগড়া লাগত। এসব থেকে মুক্তি দিয়েছে ছাগল পালন।
তিনি বলেন, ছাগল পালন করতে বেশি জায়গার দরকার হয় না। অল্প টাকাতে হয়। তিন হাজার টাকা দিয়ে পারুল রানীর পরামর্শে তিন বছর আগে ছাগল পালন শুরু করেছেন। বিক্রি বাদে এখন তাঁর ৮টি ছাগল আছে। ছাগল বিক্রির টাকায় স্বামী চালের ব্যবসা করছেন। পরিবারের সবার প্রিয় হয়ে উঠেছেন তিনি। সূত্র: প্রথম আলো