শুক্রবার, ২৯ জানুয়ারী, ২০১৬, ০৮:০৭:৫৪

মিসড কল দিলেই পৌঁছে যায় মালামাল

 মিসড কল দিলেই পৌঁছে যায় মালামাল

নীলফামারী : মিসড কল দিলেই পৌঁছে যায় মালামাল- অবিশ্বাস্য মনে হলেও ঘটনা একেবারে সত্যি।  নীলফামারীর সৈয়দপুরের ২৫ বছর বয়সী প্রতিবন্ধী ভুট্টু।  সব প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে অবিরাম গতিতে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

জন্মগতভাবে প্রতিবন্ধী হয়েও হুইল চেয়ারে বসে এক দোকান থেকে অন্য দোকানে পণ্য সরবরাহ করে সংসার চালাচ্ছেন তিনি।  কোনো দোকানে পণ্যের প্রয়োজন হলে মিসড কল দিলেই দ্রুতই তিনি ছুটে যান সেই দোকানির কাছে।

এরপর দোকানদারের চাহিদামতো পণ্য সামগ্রী হুইল চেয়ারে বহন করে নিজেই পৌঁছে দেন দোকানিকে।  প্রতিদিনই উপজেলা শহরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার দোকানে দোকানে পণ্য সরবরাহ করেন তিনি।  এ কাজ করে প্রতিবন্ধী ভুট্টু প্রতিদিন ১শ’ ৫০ থেকে ২শ’ টাকা আয় করেন।  সেই টাকায় চলছে তার সংসার।

এ কাজের মাধ্যমে বাজারের সব দোকানির কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছেন প্রতিবন্ধী ভুট্টু।

নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর উপজেলা শহরের মুন্সিপাড়ায় এক ভাড়া বাসায় থাকেন ভুট্টু।  ২৫ বছরের এই যুবক জন্মগতভাবে প্রতিবন্ধী হলেও বেছে নেননি ভিক্ষার পথ।

জীবনে প্রথম কাজ শুরু করেন এক চানাচুর ফ্যাক্টরিতে।  কয়েক বছর কাজ করার পর আলাদা কিছু করার চিন্তা মাথায় আসে তার।  তখন থেকেই মিসড কলে পথ চলা শুরু হয় ভুট্টুর।

এ অবস্থায় উপজেলা সমাজসেবা অফিসের মাধ্যমে তার চলাচলের জন্য একটি হুইল চেয়ার জোটে ভাগ্যে।  নেমে পড়েন দোকানে দোকানে পণ্য সরবরাহের কাজে।  মহাজনদের সাথে আলোচনা করে নেন, সকালে মালামাল দিলে সন্ধ্যার আগেই টাকা পরিশোধ করবেন।

মানবিক বিবেচনায় দোকান মালিকরা রাজি হয়ে যান।  তারা বাকিতে ডাল ভাজা, চানাচুর, হজমী, চকলেট, ঝুড়ি ভাজা, চিড়া ভাজা, চিপস, ললিপপসহ হরেক রকম পণ্য ভুট্টুকে দেন।

সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত এসব পণ্য ছোট ছোট দোকানে সরবরাহ করেন।  এরপর টাকা তুলে মহাজনের টাকা পরিশোধ করেন।  সব প্রতিবন্ধকতা দূর করে এভাবেই ছুটে চলছেন ভুট্টু।

ভুট্টুর বাবা মোস্তফা ও মা শাহনাজ বেগম অনেক আগেই মারা যান।  বোন ও বৃদ্ধ নানি নিয়ে ভুট্টুর সংসার।  প্রতিদিনের সামান্য আয়ে অতিকষ্টে সংসার চলছে তার।  

প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই ভুট্টু পণ্য নিয়ে ছুটে চলেন দোকানে দোকানে।  মোবাইলে দেখে নেন মালামাল নেয়ার জন্য কোনো দোকানি মিসড কল দিচ্ছেন কিনা।  

প্রতিবন্ধী ভুট্টু ভুলে গেছেন বিয়ের কথাও।  কারণ তার এ অবস্থায় ঝামেলা বাড়াতে চান না তিনি।  পুঁজিপাট্টার অভাব আর দোকানদারদের বাকি মেটাতে মাঝে মধ্যে তার হুইল চেয়ারের চাকা বন্ধ হওয়ার উপক্রম।  থাকার জন্য একখণ্ড জমি কেনার প্রবল ইচ্ছে থাকলেও পারছেন ভুট্টু।
২৯ জানুয়ারি,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে