বুধবার, ০৪ এপ্রিল, ২০১৮, ০৩:৫৪:০৩

সবচেয়ে বিশুদ্ধ পানি পঞ্চগড়ে, বোতলজাত করার প্রস্তাব

সবচেয়ে বিশুদ্ধ পানি পঞ্চগড়ে, বোতলজাত করার প্রস্তাব

সরকার হায়দার, পঞ্চগড়: পঞ্চগড়ের পানি দেশের সবচেয়ে সুপেয় এবং পরিশুদ্ধ পানি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা। পঞ্চগড় সুগার মিল লিমিটেড এই পানিকে বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করার জন্য বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনাও পাঠিয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন পঞ্চগড়ের পানিকে বাজার জাত করতে পারলে এই এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতেও ব্যাপক প্রভাব পড়বে।  

পানির শুদ্ধতা যাচাইয়ের জন্য গত কয়েক বছরে প্রায় ২৪ হাজার টিবওয়েল এবং কয়েক’শ রিংওয়েলের পানি সংগ্রহ করে ধারাবাহিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে পঞ্চগড় জনসাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।

এই অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পঞ্চগড়ের পানিতে আর্সেনিকের মাত্রা একবারেই নেই। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সাধারণত প্রতিলিটারে ০.০৫ মিলিগ্রাম আর্সেনিক, ০.৩-১.০ আয়রন,১৫০-৬০০ মিলিগ্রাম ক্লোরাইড এবং ফেকল কলিফর্ম এর মাত্রা প্রতি লিটারে শূন্য মিলিগ্রাম থাকলে তাকে গ্রহণযোগ্য বলা হয়। পঞ্চগড়ের পানিতে আর্সেনিকের মাত্রা প্রতিলিটারে ০.০০৩ মিলিগ্রাম, আয়রন ০.৮৫ মিলিগ্রাম, ক্লোরাইড এর মাত্রা ১৪ মিলিগ্রাম এবং ফেকল কলিফর্ম এর মাত্রা একেবারে শূন্য।

পানিতে এই পদার্থগুলো বেশি মাত্রায় থাকলে শরীরের জন্য ক্ষতিকর। অন্যান্য জেলার পানিতে এসব পদার্থের উপস্থিতি অত্যন্ত বেশি।

তবে পঞ্চগড় পৌরসভা এলাকার পানিতে কিছুটা আয়রণ বাড়ছে। পঞ্চগড়ের পানি বিশুদ্ধ হওয়ার পেছনে কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এর মধ্যে অন্যতম কারণ হিমালয়। সমুদ্র থেকে ২৯ ফিট উঁচু ভূমি দ্বারা বেষ্টিত এই জেলা হিমালয়ের স্রোতধারায় প্লাবিত।

পঞ্চগড় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম বলেন, হিমালয়কে বলা হয় পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম ওয়াটার ট্যাংক। দুই মেরু বাদ দিলে সবচেয়ে বেশি পানি ধারন করে আছে এই পর্বতমালা।

পঞ্চগড় বিশেষ করে এই জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলা হিমালয়ের অত্যন্ত কাছে। ফলে হিমলয়ান স্রোতধারাই এই এলাকার পানির প্রধান উৎস। হিমালয়ান এই পানি প্রাকৃতিকভাবেই বিশুদ্ধ।

পঞ্চগড় পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী  মো. আসফাউদদৌলা জানান, এই জেলার মাটি বালি ও পাথর সমৃদ্ধ হওয়ায় পানি প্রাকৃতিকভাবেই পরিশোধিত হয়ে থাকে। বালি এবং ছোট বড় পাথরে এমন করে পরিশোধিত হয় যে এই পানিতে কোন ক্ষতিকর পদার্থ থাকছেনা।

সুস্বাস্থ্যের জন্য এই পানি অত্যন্ত ভাল। এই জেলায় গড়ে ১৫ থেকে ১৬ ফিট গভীরেই বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যায়। বর্ষাকালে ২ থেকে ৩ ফিট গভীরেই পাওয়া যায় পরিশোধিত পানি। বাংলাদেশের যে কোন বোতলজাত পানির থেকে এই পানি বেশী সুপেয় এবং পরিশুদ্ধ ।

পঞ্চগড় সুগার মিল লিমিটেড চিনি উৎপাদনের পাশাপাশি পঞ্চগড়ের বিশুদ্ধ পানিকে বোতলে ভরিয়ে বাজারজাত করার প্রস্তাবনা পাঠিয়েছেন। কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন পঞ্চগড়ের পানিকে বোতলজাত করে বাজারে ছাড়া হলে চিনিকলে যেমন কর্মসংস্থান বাড়বে তেমনি দেশের অর্থনীতিও সমৃদ্ধ হবে।

পঞ্চগড় সুগারমিল লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহনূর রেজা জানান, চিনিকলের আশেপাশের এলাকার বেশ কিছু টিবওয়েল ও বিভিন্ন সোর্স থেকে পানি সংগ্রহ করে পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া গেছে এই পানি দেশের সবচেয়ে সুপেয় পানি।

এরপর পানি বোতলজাত করে বাজারজাতের প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। চিনি উৎপাদনের পাশাপাশি পানি বোতলজাত করে বাজারজাত করা হলে একদিকে চিনিকলের ক্ষতি যেমন পুষিয়ে নেয়া যাবে মেনি এই জেলার কর্মসংস্থান বাড়বে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।

নদী গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী জানান, পঞ্চগড়ের পানি নি‍‍‍:সন্দেহে প্রাকৃতিকভাবে পরিশোধিত পানি। গবেষণার কাজে আমি বাংলাদেশের সকল জেলায় ঘুরে দেখেছি এমন মিষ্টি স্বাদের পানি আর কোথাও পাওয়া যাবেনা। হিমালয় এবং আশেপাশের এলাকা থেকে ৪৪টি ছোটবড় নদী উৎপন্ন হয়ে এই জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

কিন্তু পঞ্চগড়ের অভিন্ন নদীগুলোতে ভারত বাঁধ দিয়ে পানি আটকে রাখার ফলে পঞ্চগড়ে পানির স্তর দিন দিন নিচের দিকে চলে যাচ্ছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে বিশ বছর পরে পানির স্তর নেমে যাবে ১০০ ফিট নিচে। তাই পানির বাজারজাতের বিষয়টি অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক হলেও পানির প্রাকৃতিক প্রবাহ অক্ষুণ্ণ রাখার উদ্যোগও নিতে হবে।-বিডি প্রতিদিন
এমটিনিউজ২৪.কম/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে