পঞ্চগড় প্রতিনিধি: বাংলা নববর্ষ উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার পঞ্চগড় সীমান্তের নোম্যান্সল্যান্ডে একত্রিত হয়েছিল দুই বাংলার লাখো জনতা। এ যেন বাঙালীর মহা মিলনমেলা। এতে জনতার বাঁধভাঙা জোয়ার।
বেলা ১২টায় বিএসএফ-বিজিবি একমত হয়ে কাঁটাতারের বেড়ার কাছে যাওয়ার অনুমতি দিলে বাঁধভাঙা জোয়ারের মতো উভয় দেশের বিভিন্ন বয়সী মানুষ নোম্যান্সল্যান্ডে প্রবেশ করেন। এপার বাংলা আর ওপার বাংলার এ মিলনমেলা সকাল ১১টা থেকে চলে বিকেল ৩টা পর্যন্ত। মানুষের উপচে পড়া ভিড় সীমান্তের কঠোর নিরাপত্তাকেও হার মানায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিজিবি-বিএসএফ সদস্যদের হিমশিম খেতে হয়।
অমরখানা সীমান্তের ৭৪৪ নং মেইন পিলারের ১ থেকে ৭ নং সাব-পিলার পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার নোম্যান্সল্যান্ড এলাকার কাঁটাতারের বেড়ার দু’পাশে পঞ্চগড় জেলার অমরখানা ইউনিয়নের অমরখানা ও বোদাপাড়া এবং ভারতের জলপাইগুড়ি জেলার রায়গঞ্জ থানার খালপাড়া, ভিমভিটা, গোমস্তাবাড়ি ও বড়ুয়াপাড়া গ্রামসহ দু’দেশের বিভিন্ন বয়সী লাখো মানুষ এ মিলনমেলায় অংশ নেন।
১৯৪৭ সালে পাক-ভারত বিভক্তির পূর্বে পঞ্চগড় জেলার পঞ্চগড় সদর, তেঁতুলিয়া, বোদা ও দেবীগঞ্জ উপজেলা ভারতের জলপাইগুড়ি জেলার অধীনে ছিল। পাক-ভারত বিভক্তির পর এসব এলাকা বাংলাদেশের অর্ন্তভূক্ত হয়। দেশ বিভক্তের কারণে উভয় দেশের নাগরিকদের আত্মীয়-স্বজন দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও দুই দেশের নাগরিকরা তাদের আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে যাওয়া-আসার সুযোগ পেলেও ভারত সীমান্ত এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করায় অবাধ যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে উভয় দেশের নাগরিকদের অনুরোধে প্রায় একযুগ ধরে বিজিবি ও বিএসএফের সহযোগিতায় অমরখানা সীমান্তে ঈদ, পূজা ও নববর্ষ উপলক্ষ্যে দুই বাংলার মিলনমেলা হয়ে আসছে।
বিএসএফ কাঁটাতারের বেড়ার গেট থেকে তাদের সীমান্ত রেখায় এসে অবস্থান নেয়। বিজিবিও একই স্থানে এসে নিজদের মধ্যে কুশল বিনিময় করে। কাঁটাতারের বেড়া ঘেঁষে দু’পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ নিজেদের স্বজনকে খুঁজে বের করে কুশল বিনিময় ছাড়াও প্রিয়জনদের সামর্থ্য অনুযায়ী উপহার সামগ্রী তুলে দেওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করেনি।
পঞ্চগড় দেবীগঞ্জ উপজেলার সালমা বেগম(২৫) বলেন, প্রতি বছরে পহেলা বৈশাখে এ সীমান্তে তাঁরকাটার মধ্যেদিয়ে দু’দেশের স্বজনদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেয়েছি। র্ওশন আরা (১৯) জানায়, প্রতি বছরে এখানে ভারত-বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষের এক মিলনমেলা হয় তা দেখতে এসেছি।
কিছু সময়ের জন্য হলেও দু’দেশে বসবাসরত স্বজনদের কথা বলার সুযোগ করে দেওয়ায় উভয় দেশের সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তারা।
১৪ এপ্রিল,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/ডিআরএ