বরিশাল থেকে : এইচএসসি প্রথম বর্ষের ক্লাস করছিলেন ফাতিমা জিনাত। হঠাৎ একজন সহপাঠী দেখলেন তার ডান চোখ থেকে রক্ত ঝরছে। এ অবস্থায় নেয়া হয় তাকে হাসপাতালে। পর্যায়ক্রমে ঢাকার কয়েকটি হাসপাতালেও তার চোখের জন্য চিকিৎসক দেখানো হয়েছে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। দিনদিন অবস্থার অবনতি হচ্ছে। গত চার আগস্ট থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত একমাস দুই দিনের মধ্যে মাত্র তিনদিন তার চোখ থেকে রক্ত ঝরেনি। বাকি দিনগুলোতে রক্ত ঝরেছে।
কোনোদিন পাঁচবার, কখনো সাতবার আবার সর্বোচ্চ ১০ বার করেও হঠাৎ হঠাৎ রক্ত ঝরে। রক্ত চোখ থেকে গড়িয়ে মুখ পর্যন্ত চলে আসে। প্রথমদিকে রক্ত ঝরার সময় জিনাত খেয়াল করতে পারত না, যে রক্ত ঝরছে। অন্য কেউ দেখে তাকে জানালে সে ভয়ে কখনো কখনো জ্ঞান হারিয়ে ফেলতো। আর এখন রক্ত ঝরার সময় সে চোখে যন্ত্রণা অনুভব করে। রক্ত যখন আসে তখন চোখের নিচ দিয়ে ব্যথা মাথার দিকে ওঠে। চোখের মণির ভিতরে ও মাথায় ব্যথা অনুভব করে। নাক, মুখ গরম হয়ে যায়। মনে হয় যেন তাপ বের হচ্ছে। ৫ই সেপ্টেম্বর থেকে জিনাত বরিশাল মেডিকেলে চিকিৎসাধীন। মঙ্গলবার রাতে তাকে ঢাকা আনার কথা রয়েছে।
এসব তথ্য মোবাইলে এ প্রতিবেদককে বরিশাল থেকে জানান জিনাতের বাবা মোহাম্মদ মামুন। তার বাড়ি পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের পাঁচজুনিয়া গ্রামে। দুই ভাই-বোনের মধ্যে জিনাত বড়। জিনাতের বাবা জানান, জিনাত পঞ্চম শ্রেণি ও অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পেয়েছে। এসএসসিতে গলাচিপা গার্লস হাইস্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ ৪.৮৩ পেয়েছে। একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগে আমতলী সরকারি ডিগ্রি কলেজে ভর্তি করা হয়। হঠাৎ করে মেয়ের এই সমস্যায় তিনি খুবই চিন্তিত। একের পর এক চিকিৎসক দেখিয়েও কোনো সমাধান হচ্ছে না। মামুন জানান, অসুস্থ হওয়ার পর প্রথমে পটুয়াখালীর বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালে নেন। সেখান থেকে বাড়ি আনার পর অবস্থার কোনো উন্নতি না দেখে ৭ই আগস্ট ঢাকায় জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে সন্তোষজনক কিছু বলতে পারেনি। ওই দিনই ওখান থেকে ফার্মগেটে ইস্পাহানী ইসলামিয়া চক্ষু ইনস্টিটিউটে নিয়ে আসা হয়। সেখানে ১১ই আগস্ট পর্যন্ত রাখা হয়।
পরীক্ষা করে সেখানকার চিকিৎসকরা জানান, হেমোলাক্রিয়া নামে একটি রোগে আক্রান্ত সে। ওখান থেকে চিকিৎসকরা জিনাতকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন এবং দুই মাস পর আবার আসতে বলেন। জিনাত ভালো হবে কিনা জানতে চাইলে চিকিৎসকরা তেমন কিছু জানাননি। কিন্তু তিনি জিনাতকে বাড়ি না নিয়ে ১২ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় চক্ষু বিভাগে নিয়ে যান। সেখানেও তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে গাইনি বিভাগে নেয়ার পরামর্শ দেন। গাইনি বিভাগে গেলে সেখানেও কয়েকটি পরীক্ষা করে চিকিৎসকরা জানায়, কোনো সমস্যা নেই। এরপর চক্ষু বিভাগ থেকে দুটি ড্রপ ব্যবহার করতে দেয়। কয়েকটি ড্রপ ব্যবহারের পরও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ২৬শে আগস্ট চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হককে দেখানো হয়।
তিনিও দুইটি ড্রপ দিয়ে বলেন, ‘ভালো হয়ে যাবে। পরে কোনো সমস্যা হলে আমার কাছে নিয়ে আসবেন।’ এরপর তিন দিন ভালো ছিল। রক্ত ঝরেনি। তারপর থেকে আবার রক্ত ঝরা শুরু হয়েছে। ২৮শে আগস্ট তাকে নিয়ে বাড়ি চলে যান। তিনি বলেন, চার সেপ্টেম্বর দুপুরের দিকে বাড়িতে বসে জিনাত তার মাকে বলে সে বুকে ব্যথা অনুভব করছে। কিছুক্ষণ পর বলে তার শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। এরপর সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। জ্ঞান ফেরার পরে তার মুখ দিয়ে রক্ত ও লালা বের হয়। এটা দেখে তাকে পটুয়াখালী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা বরিশালে নেওয়ার পরামর্শ দিলে ৫ই সেপ্টেম্বর বরিশাল মেডিকেলে নিয়ে আসা হয়। তারা ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। রাতে বরিশাল থেকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এমজমিন
৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি