শংকর দাস, পটুয়াখালী থেকে : অব্যাহত ভাঙনের কারণে সৌন্দর্য হারাতে বসেছে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত। এই অবস্থায় ভাঙন থেকে সৌন্দর্যের এ লীলাভূমি রক্ষায় পরিকল্পনা নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। ‘কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত রক্ষা ও উন্নয়ন’ নামের এ প্রকল্পের মাধ্যমে ভারতের কেরালা সমুদ্রসৈকতের আদলে এখানে স্থাপন করা হবে ‘গ্রিন সি ওয়াল’ ও ‘জিওটিউব’।
গ্রিন সি ওয়াল হলো সৈকতের ভাঙন রুখতে মাটিভর্তি বড় বড় বস্তা ফেলে সবুজ বেষ্টনী তৈরি করা। সেখানে ঘাস জন্মে সবুজ রং ধারণ করবে। পরিবেশবান্ধব ও দৃষ্টিনন্দন এই বেষ্টনীর ওপর দিয়ে হাঁটা যাবে এবং ওপরে বসে সাগরে অপরূপ সৌন্দর্য অবগাহন করা যাবে। আর জিওটিউব হলো বালুবোঝাই প্লাস্টিকের টিউব। সৈকতের বালু ক্ষয় রোধে আধা মিটার ও এক মিটার চওড়া জিওটিউব তৈরি করে তা সৈকত থেকে ১৫-২০ মিটার দূরে সাগরের পানিতে ফেলা হবে। এতে ঢেউ বাধাগ্রস্ত হবে এবং বালু ক্ষয় বন্ধ হবে। তখন নতুন করে চর পড়ে সৈকত সাগরের দিকে বর্ধিত হবে। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২০০ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে অব্যাহত ভাঙন থেকে সৈকত ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা পাবে বলে মনে করছে পাউবো।
পাউবোর কলাপাড়া কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতকে ভাঙন থেকে রক্ষা ও উন্নয়নের জন্য পাউবোর প্রধান প্রকৌশলী (নকশা) মো. জাহাঙ্গীর কবিরসহ শীর্ষ কয়েকজন কর্মকর্তার একটি প্রতিনিধিদল গত বছরের অক্টোবরের শেষের দিকে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (আইআইটি) মাদ্রাজে একটি সেমিনারে অংশ নেয়। তখন প্রতিনিধিদলটি কেরালায় আরব সাগরের তীরে গ্রিন সি ওয়াল পরিদর্শন করে। এরপর ওই সৈকতের আদলে কুয়াকাটায় প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
পরে গত বছরের নভেম্বরের শুরুতে আইআইটি মাদ্রাজের সাগর প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ভি সুন্দর কুয়াকাটা পরিদর্শনে আসেন। তার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে পাউবো কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত রক্ষা ও উন্নয়নের নকশা প্রণয়ন করে। এ নকশায় কুয়াকাটায় গ্রিন সি ওয়াল নির্মাণের পাশাপাশি ও জিওটিউব বসানোর বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
পাউবো বলছে, সবুজ বেষ্টনী ও জিওটিউবের মাধ্যমে কুয়াকাটা সৈকতকে ছোট ও সরু হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করা যাবে। তাদের মতে, ভাঙনকবলিত স্থানে গ্রিন সি ওয়াল স্থাপন করা হলে ভাঙন রোধ করা যাবে। পাশাপাশি সমুদ্রের স্বাভাবিক জোয়ারের লোনা পানি প্রবেশ রোধ করা যাবে। আর ভাটার টানের সময় সৈকতের ওপরের স্তরের মিহি বালু গভীর সমুদ্রের দিকে চলে যায়। এ কারণে সৈকত ক্রমেই ছোট ও সরু হয়ে যাচ্ছে। জিওটিউব বসানো হলে সেটা রোধ হবে। এর মাধ্যমে কুয়াকাটা সৈকতকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।
এদিকে ১ সেপ্টেম্বর পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম কুয়াকাটা সৈকতের ভাঙনকবলিত জিরো পয়েন্টসহ কয়েকটি এলাকা এলাকা পরিদর্শন করেন। আনিসুল ইসলাম কুয়াকাটা সৈকত নতুন করে যাতে না ভাঙে, সে জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেন।
কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আবদুল বারেক মোল্লা বলেন, ভাঙনের ফলে সাগরকন্যা কুয়াকাটা সৈকত সৌন্দর্য হারাচ্ছে। এর ফলে পর্যটকদের আগমন কমে যাবে, বিনিয়োগকারীরা কুয়াকাটা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন। সরকার কুয়াকাটা নিয়ে ব্যাপক উন্নয়নের পরিকল্পনা নিলেও সবার আগে প্রয়োজন ভাঙন প্রতিরোধ। তা না হলে উন্নয়ন টেকসই হবে না। তাই পাউবোর ওই প্রকল্প বাস্তবায়ন জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
প্রকল্পের বিষয়ে পাউবোর কলাপাড়া কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবুল খায়ের বলেন, কুয়াকাটা সৈকতের বালু ক্ষয় এবং মূল ভূখণ্ডের ভাঙন রোধে টেকসই প্রযুক্তি ব্যবহারের অংশ হিসেবে ওই পরিকল্পনা নিয়েছেন তারা। এর আওতায় কুয়াকাটার জিরো পয়েন্ট থেকে পূর্ব দিকে সাড়ে তিন কিলোমিটার ও পশ্চিমে দেড় কিলোমিটার এলাকা সুরক্ষিত করা হবে। ইতিমধ্যে সম্ভাব্যতা যাচাই ও নকশার কাজ শেষ হয়েছে। এখন এ-সংক্রান্ত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হবে। সেটি অনুমোদিত হলে দুই বছরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করা হবে।
সৈকতের কোল ঘেঁষে পানিতে জিওটিউব ফেলা হলে পর্যটকদের কোনো সমস্যা হবে কি না? নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের বলছেন, এই জিওটিউব পানির নিচে এমনভাবে থাকবে, যা দৃশ্যমান হবে না। ফলে জোয়ারের সময় জিওটিউবের কারণে সাগরে পর্যটকদের গোসলে কোনো সমস্যা হবে না। এ ছাড়া জিওটিউবের কারণে জেলেদের নৌকা চলাচলে যাতে সমস্যা সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়টিও প্রস্তাবিত নকশায় বিবেচনায় আনা হয়েছে। প্রথম আলো
২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি