মঙ্গলবার, ২৩ মে, ২০১৭, ০৭:০০:২৫

'মায়ের মুখে হাসি ফোটালেও কে মুছবে শতাব্দীর চোখের জল'

'মায়ের মুখে হাসি ফোটালেও কে মুছবে শতাব্দীর চোখের জল'

উত্তম কুমার হাওলাদার, কলাপাড়া(পটুয়াখালী): মায়ের দিন-রাত ঘাম ঝড়ানো কষ্ট দেখে গুমড়ে কাঁদলেও অদম্য ইচ্ছাশক্তি নিয়ে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে শতাব্দী কর্মকার। কিন্তু উচ্চ শিক্ষা অর্জন ও বাবার শেষ ইচ্ছা বাস্তবায়নের স্বপ্ন,“স্বপ্নই” থেকে যাচ্ছে।

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার খেপুপাড়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে মায়ের মুখে হাসি ফোটালেও এখন নিজের ভবিষৎ চিন্তায় উদ্বিগ্ন মেধাবী শিক্ষার্থী শতাব্দী।

দুই বছর আগে আকস্মিক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে স্বামী গোপাল কর্মকার মৃত্যুবরন করায় দুই মেয়েকে নিয়ে অথৈ সাগরে পড়ে সুবর্না কর্মকার। তখন শতাব্দী নবম শ্রেণির ছাত্রী। আর বড় মেয়ে মিতু কর্মকার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী।  

পারিবারিক অস্বচ্ছলতায় দুই মেয়ের শিক্ষাজীবনই যখন বন্ধের পথে তখন নিজে টিউশনি করিয়ে দিনরাত পরিশ্রম করে দুই মেয়ের পড়াশোনা ও দুই মুঠো ভাত তুলে দেয়ার দায়িত্ব নেয় মা সুবর্না কর্মকার।

শতাব্দী জানায়, পারিবারিক অস্বচ্ছলতা থাকলেও বাবার স্বপ্ন ছিলো আমাকে ডাক্তার করবে। কিন্তু বাবার অকাল মৃত্যুর সাথে সমাধি হয় তার স্বপ্ন। মায়ের কঠোর শ্রমে এসএসসি পাশ করলেও এখন কলেজে ভর্তি হতে পারবো কিনা এ চিন্তা দারিদ্র্যতার মতো অক্টোপাশের মতো ঘিরে ধরেছে।  

শতাব্দী বলেন, দিদি অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্রী। তার লেখাপড়ার খরচ জোগাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে, সেখানে আমাকে ভালো কলেজে ভর্তি, ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন এখন আমাদের পরিবারের আকাশ কুসুম কল্পনা।

শতাব্দী মা সুবর্না কর্মকার বলেন, ওর বাবার মৃত্যুর পর মেয়েকে ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া, জামাকাপড় কিনে দিতে পারিনি। সায়েন্সের ছাত্রী হলেও টিউশনি দিতে পারিনি। শুধু আমার টিউশনির দেড়/দুই হাজার টাকা উপার্জনে কি দুই মেয়ের লেখাপড়ার খরচ, সংসার খরচ চালানো সম্ভব। তারপরও মেয়ে নিজ ইচ্ছায় এই সফলতা পেলেও এখন গুমড়ে কাঁদছে। আর্থিক দৈন্যতায় কলেজে ভর্তি হতে পারবে কিনা এ চিন্তায়।

খেপুপাড়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আনোয়ার হোসেন জানান, দারিদ্র্যতাকে জয় করে শুধু অদম্য ইচ্ছা ও পড়ালেখার প্রতি আন্তরিকতার কারণে শতাব্দী এই ভালো ফলাফল করেছে। এখন যদি কেউ তার পাশে না দাঁড়ায় তাহলে হয়তো এখানেই থেমে যাবে শতাব্দীর শিক্ষাজীবন।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে