রবিবার, ০৬ আগস্ট, ২০১৭, ০২:৩৬:৫৮

বিদ্যুৎ বিভ্রাটে বরফ সংকট দক্ষিনাঞ্চলের বৃহৎ মাছের মোকামে

 বিদ্যুৎ বিভ্রাটে বরফ সংকট দক্ষিনাঞ্চলের বৃহৎ মাছের মোকামে

আরিফ সুমন, কলাপাড়া, পটুয়াখালী প্রতিনিধি: বিদ্যুৎ বিভ্রাটে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় বরফ সংকটে দক্ষিানাঞ্চলের বৃহৎ মৎস্য বন্দর আলীপুর-মহিপুর।

ফলে মৌসুমের মধ্যভাগে প্রচুর ইলিশ আহরিত হলেও মাছের গুনগত মান বজায় রাখতে হিমশিম খাচ্ছে জেলেসহ সংশ্লিস্ট ব্যবসায়ীরা।

দীর্ঘ দিন প্রতীক্ষার পর মৌসুমের শেষ ভাগে এসে সাগরে জেলেদের জালে আহরিত হচ্ছে প্রচুর ইলিশ। মৌসুমের শুরুতে ইলিশ না পওয়ায় সে সময়ের পুজি আর ঋনের বোঝা হালকা করার সুযোগ পেয়ে খুশি জেলেসহ মৎস্য ব্যবসায়ীরা।

কিন্তু পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বিদ্যুৎ বিভ্রাটে বরফ উৎপাদন ব্যহত হওয়ায় প্রতিদিন নস্ট হচ্ছে শত শত মন ইলিশ। ফলে জেলেসহ মৎস্য ব্যবসায়ীদের খুশী পরিনত হয়েছে দুশ্চিন্তায়। মৎস্য ব্যবসায়ীসহ জেলেদের দাবী, বরফ সংকটে এক সপ্তাহে নস্ট হয়ে গেছে অন্তত দুই হাজার মেট্রিক টন ইলিশ মাছ।

জেলে জাহাঙ্গীর মাঝি জানান, সাগরে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। জাল নিয়ে সাগরে যাওয়া মাত্র ট্রলার বোঝাই করে ইলিশ নিয়ে ঘাটে ফেরা যায়। কেবল বরফ নিতে না পারায় সাগরে যাওয়া যাচ্ছে না। ঘাটে অসংখ্য মাছ ধরা ট্রলার বসে আছে। একই অভিযোগ ফারুক মাঝি, রহিম মাঝি, জয়নাল মাঝিসহ অগনিত জেলেদের।

দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ইলিশ মৌসুমে এখানে এসে ইলিশ ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন মোকামে চালান করে থাকেন তাদের একজন গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ইলিশ ব্যবসায়ী সুধারাম বাবু বলেন, প্রতি বছর মহিপুর-আলীপুর থেকে ইলিশ ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন বাজারে ট্রাক যোগে নিয়ে বিক্রয় করি। এবছর ইলিশের ভরা মৌসুমে বরফ সংকটে মূলধন হারাতে বসেছি। বরফ সংকটের উত্তরন না ঘটলে এবছরের মত ব্যবসা গুটিয়ে ফিরে যেতে হবে।

বিগত বছরে ইলিশ মৌসুমে আলীপুর-মহিপুর মৎস্য বন্দরে বাড়তি বিদ্যুৎ সরবারহ করা হলেও এ বছর এ সুয়োগ দেয়া হয়নি। এছাড়াও প্রতিদিন অন্তত বারো থেকে পনের বার লোডশেডিং এবং লো ভোল্টেজের কারনে উৎপাদন সক্ষমতা হারিয়েছে বরফ মিল গুলো।

বিদ্যুতের এ সমস্যার কারনে ইতিমধ্যে নস্ট হয়ে গেছে বেশ কয়েকটি মিল। বর্তমানে ৩২টি বরফ মিলের বিপরীতে
উৎপাদনে রয়েছে মাত্র ১৮টি মিল। যশোর, খুলনা থেকে অড়ৎ মালিকরা বাড়তি দামে বরফ আমদানি করলেও চাহিদার তুলনায় তা অপর্যাপ্ত। ফলে বৃহৎ এ মৎস্য বন্দরে প্রতিদিন পচে যাচ্ছে শত শত মন মাছ। বাড়তি খরচে লোকসানের মুখে রয়েছেন তারা। বরফ মিল মালিক মজনু গাজী বলেন, প্রতিদিন বারো থেকে পনের বার বিদ্যুৎ যায়। তাও রয়েছে লো ভোল্টেজ সমস্যায়। এতে সঠিক
মানের বরফ উৎপাদন সম্ভব হচ্ছেনা। ইতোমধ্যে এনিয়ে ঝামেলায় আমার মিলে ভাংচুর করে তালা লাগিয়ে দেয়া হয়েছে।

অকন ফিসের মালিক আ.মালেক আকন বলেন, খুলনা, সাতক্ষীরা, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন অন্তত ৫০টি ট্রাক বরফ নিয়ে আসে। ওইসব মোকামে প্রতি ক্যান বরফ ১৫০ থেকে ২ শ’ টাকায় ক্রয় করলেও ট্রাকযোগে এখানে পৌঁছাতে প্রতি ক্যান বরফের মুল্য পড়ছে প্রায় ৫শ’ টাকা।

ফয়সাল ফিসের মালিক হাজী ফজলু গাজী জানান, প্রয়োজনীয় বরফ না পাওয়ায় এক একটি মাছ ধরা ট্রলারে অন্তত ১০ লাখ টাকা লোকসানে হয়েছে। সে হিসেবে অন্তত ২ শ’ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে কুয়াকাটা, মহিপুর ও আলীপুর এলাকার এবারকার ইলিশ মৌসুমে। লাখ লাখ টাকা দাদন দিয়ে আড়ৎদারদের ব্যবসা পথে বসার উপক্রম হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।

মহিপুর মৎস্য আড়ৎদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিমাই চন্দ্র দাস শংকা প্রকাশ করে বলেন, প্রতিবছর ইলিশ মৌসুম এলেই বিদ্যুৎ নিয়ে নানা টালবাহানা করা হয়। মহিপুর আলীপুর মৎস্য বন্দরকে ধ্বংস করে দিতে কোন মহল ষড়যন্ত্র করছে। জলবায়ু পরিবর্তনে ইলিশের জীবন ধারায় পরিবর্তন আসায় এখনো উপক’লের কাছাকাছি ধরা পড়ছেনা ইলিশ। কিছু দিনের মধ্যে ইলিশের প্রচুর্যতা আরো বাড়বে বলে জানালেন কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়ির মৎস্য কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ইলিশের গোলাডাল ম্যাচিউরিটি এখন পর্যন্ত হয়নি বলে উপক’লের কাছাকাছি ইলিশ ধরা পড়ছেনা। ফলে গভীর সমুদ্র থেকে লাল জালের মাধ্যমে জেলেরা ইলিশ আহরন করছে। ৭-১০দিনের মধ্যে ইলিশ উপক’লের মোহনা নদীর কাছাকাছি চলে আসবে। তখন আরো বেশি ইলিশ ধরা পড়বে।

পটুয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কর্তৃপক্ষ তাকে জানিয়েছেন দু- একদিনের মধ্য বিদ্যমান সমস্যার সমাধান করা হচ্ছে। পটুয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জিএম মনোহর কুমার বিশ্বাস জানান, ঘনঘন বিদ্যুৎ যাওয়ার বিষিয়টি ছিল জাতীয় গ্রিডের সমস্যা।

এছাড়া দু’ একদিন আগেও চাহিদার ২৫ শতাংশ বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যায়নি। অনেকটা বিপর্যয় কাটিয়ে উঠে শনিবার চাহিদার প্রায় ৫০ শতাংশ বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা গেছে।
এমটিনিউজ/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে