পটুয়াখালী থেকে : মা-বাবার অভাব-অনটনের সংসারে নিজের কঠোর পরিশ্রমের ফলে এবার এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে পটুয়াখালীর সুমি আক্তার।
রোববারের ঘোষিত ফলাফলে জিপিএ-৫ পায় সুমি। কিন্তু এতে খুশি নয় সুমি। বরং ফলাফল শুনে কাঁদছে সে। কারণ আগামীতে তার পড়াশোনার কী হবে তা নিয়ে অন্ধকার দেখছে সে।
যে কারনে জিপিএ-৫ পেয়েও কাঁদছে সুমি:- দরিদ্র বাবা-মা তাকে আর পড়াতে পারবে না এই ভাবনায় কাঁদছে সুমি। সুমির ভাষ্য, সামনে যে আমার কপালে কী আছে তা আল্লাহ ভালো জানেন। জানি না ভবিষ্যতে কী হবে।
পটুয়াখালী শহরের চক্ষু হাসপাতাল রোড এলাকার বস্তিতে সুমির পরিবারের বসবাস। সদর উপজেলার লাউকাঠি ইউনিয়নের জামুরা গ্রামের কবির মৃধার মেয়ে সুমি।
২০১৮ সালের এসএসসি পরীক্ষায় টাউন উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পায় সুমি। দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়া সুমির টাকার অভাবে ভালো কলেজে ভর্তি হওয়া প্রায়ই অনিশ্চিত।
একটি টিনের ছাপরা ঘরে সুমির পরিবারের বসবাস। একটি চৌকি, দুটি টেবিল ও হাঁড়ি-পাতিল ছাড়া ঘরের মধ্যে তেমন কিছুই নেই। বইপত্র সাজানো রয়েছে চৌকির ওপর। সেই ঘরের এক কোনে বসেই এতদিন পড়াশোনা করেছে সুমি। মা খাদিজা বেগম অন্যের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করে সংসার চালান। ওই কাজের ওপর নির্ভর করেই চলছে তাদের চার সদস্যের সংসার।
সুমির মা খাদিজা বেগম বলেন, দুই মেয়ের মধ্যে সুমি বড় আর বৈশাখী ছোট। বৈশাখী ফজলুল হক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ছে। সুমি স্কুলের পরীক্ষায় ভালো ফল পেয়েছে। আমরা তো এত পড়ালেখা করিনি তাই ভালো বুঝি না। তার লেখাপড়ার প্রতি খুব ঝোঁক। কিন্তু আমি গরিব মানুষ। এতদিন স্কুলের স্যাররা সাহায্য করেছে তাই মেয়ে লেখাপড়া করেছে। কিন্তু তাকে সামনের ক্লাসে পড়াতে পারবো বলে মনে হয় না।
অশ্রুসিক্ত নয়নে সুমি আক্তার জানায়, বাবা থেকেও নেই। মা কষ্ট করে পড়াশোনা করাইছে। ভালো ফলাফল হয়েছে। জানি না কপালে কী আছে।
ভবিষ্যতে পড়ালেখার পরিকল্পনা ও তার আগামীর স্বপ্ন নিয়ে জানতে চাইলে সুমি জানায়, পড়াশোনা করে ডাক্তার হবো। অসহায় মানুষের চিকিৎসা করবো। সেটা বুঝি আর সম্ভব হবে না। সামনের দিনগুলো আরও খারাপ। সবার সহযোগিতা নিয়ে এতদূর এসেছি। সামনে কী হবে আর আমার কপালে কী আছে তা আল্লাহ ভালো জানেন।
টাউন উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আশুতো চন্দ্র ভদ্র বলেন, সুমি দরিদ্র পরিবারে জন্ম নিলেও অত্যন্ত মেধাবী। তার বাবা থেকেও নেই। মা অন্যের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করায় আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তার কাছ থেকে কোনো টাকা নেয়নি ও সম্পূর্ণ ফ্রি লেখাপড়া করিয়েছে। তার সামনের পড়াশোনা নিয়ে সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে এলে ভবিষ্যতে সে আরও ভালো করবে বলে আমার বিশ্বাস।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. মাহবুব খন্দকার পলাশ বলেন, মেয়েটি অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করেছে। সে ফজলুল হক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পায়। টাউন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ ও একই স্কুল থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন করে। সে তার কষ্টের ফল পেয়েছে। আগামীতে তার পড়াশোনার কাজে সবার এগিয়ে আসা উচিত।
এমটিনিউজ২৪/এম.জে/ এস