পটুয়াখালী: এবার দাখিল পরীক্ষায় পাস করেছে পটুয়াখালীর ছেলে বেল্লাল। সে কোনো সাধারণ ছাত্র নয়। দুই পায়ে লিখেই এবার এই পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়েছে সে। চলুন তাহলে শুনে নেই বেল্লালের সফলতার পুরো গল্পটা।
তার পুরো নাম বেল্লাল আকন। জন্ম থেকেই তার দুটি হাত নেই। পা দুটিতেও রয়েছে জন্মগত ত্রুটি। হাত না থাকলেও মনের জোরের কমতি ছিল না বেল্লালের। তাই এবারের দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিয়ে খাতায় উত্তর লিখেছে পা দিয়ে। পাসও করেছে বি-গ্রেডে। এবার কলেজে ভর্তি হয়ে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে চায় সে।
বেল্লাল পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের উমেদপুর গ্রামের খলিল আকন ও হোসনে আরা বেগমের ছেলে। পড়ত উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের উমেদপুর দাখিল মাদ্রাসায়।
এবারের দাখিল পরীক্ষায় বেল্লাল বি-গ্রেডে (৩. ৮৫) পাস করেছে বলে জানিয়েছেন তার স্বজনরা। তবে এ ফলাফলে উচ্ছ্বসিত নয় বেল্লাল। কেননা এর আগে শুধু ডান পায়ের আঙ্গুল দিয়ে লিখে পিএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে সে। এবার দাখিল পরীক্ষায় নিজের সফলতার সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেনি সে। অবশ্য বেল্লালের চেষ্টার ক্রুটি ছিল এ কথা কিছুতেই বলা যাবে না। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার পাশাপাশি পরিবারের দরিদ্রতাও এতে প্রভাব ফেলেছে। তবে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভালো করে এবারের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চায় সে।
তার বাবা খলিল আকন বিভিন্ন স্থানে দিন মজুরের কাজ করে অতিকষ্টে সংসার চালান। কিন্তু ছোট থেকেই পড়াশুনার প্রতি আগ্রহ ছিল বেল্লালের। শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও মনের জোর ছিলো অসীম। একমাত্র ভরসা পা দিয়ে হাঁটাচলা করার পাশাপাশি লেখার কাজটিও শিখে নেয় সে। এক্ষেত্রে তার একমাত্র অনুপ্রেরণা মা হোসনে আরা বেগম। মায়ের উৎসাহে বরাবরই পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করত সে। তাই বিদ্যালয় থেকে শুরু করে গোটা এলাকাজুড়ে রয়েছে বেল্লালের সুনাম।
তার পায়ের জাদুতে মুগ্ধ গোটা পটুয়াখালীর লোকজন। সবাই যখন স্বাভাবিক নিয়মে বেঞ্চে বসে পরীক্ষা দেয়। তখন বেল্লাল দু’পায়ে কাঠের বিশেষ আসনে দাঁড়িয়ে পা দিয়ে লিখে পরীক্ষা দেয়। পা দিয়ে লিখেই সে ইবতেদায়ি ও জেডিসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে বেল্লাল।
ছেলের দু’টি হাত নেই এ নিয়ে অনেক মনোবেদনা ছিল বেল্লাল আর তার মা হোসনে আরা বেগমের। পরে এক শিক্ষকের অনুপ্রেরণায় বেল্লালকে লেখাপড়া করানোর সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ঘরে বসেই বেল্লালকে পড়াতেন আর পায়ের আঙুলের মধ্যে চক গুঁজে দিয়ে লেখা শেখানোর অভ্যাস করাতেন। এরপর বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে উমেদপুর মাদ্রাসায় ভর্তি করেন তাকে। আর এখন তো সেই পা দিয়ে লিখেই দাখিল পাস করেছে সে।
তবে ছেলেকে প্রতিবন্ধী বলতে রাজী নন তার বাবা খলিল আকন। তার ভাষায়, ‘আমার ছেলে প্রতিবন্ধী এটা আমি মানতে নারাজ। কেননা সে তো নিজের যোগ্যতা দিয়েই পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করেছে।’
তাই বেল্লালের লেখা-পড়া বন্ধ করতে চান না তিনি। তার ইচ্ছা, লেখাপড়া শেষ করে সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে বেল্লাল। এটাই তার একমাত্র চাওয়া।
এমটিনিউজ২৪.কম/হাবিব/এইচআর