নিউজ ডেস্ক: গোলাম মাওলা রনিহাজার হাজার মানুষ নিয়ে গলাচিপা থানা ঘেরাওয়ের নির্দেশ দিয়ে সেখানে অবস্থান নিতে বলেছেন পটুয়াখালী-৩ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সাবেক এমপি গোলাম মাওলা রনি। গলাচিপার স্থানীয় এক নেতাকে এমন নির্দেশ দেওয়ার ফোন আলাপ রবিবার (১৬ ডিসেম্বর) ভিডিও শেয়ারিং ওয়েবসাইট ইউটিউবে ফাঁস হয়েছে। এই নির্দেশের কথা রনি নিজেও স্বীকার করেছেন।
তবে তিনি দাবি করেছেন, তার স্ত্রীর গাড়িতে হামলার পর পুলিশ মামলা না নেওয়ায় তিনি নেতাকর্মীদের থানায় অবস্থান নিয়ে পুলিশকে মামলা নিতে বাধ্য করার চেষ্টা করেছিলেন। যদিও পুলিশ এরপরও মামলা নেয়নি।
শনিবার (১৫ ডিসেম্বর) গলাচিপার এক নেতার সঙ্গে গোলাম মাওলা রনির এমন একটি ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে। উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মো. শাহজাহান খানসহ ওইদিন গলাচিপার একাধিক নেতাকে এভাবে থানা ঘেরাও করার নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে গোলাম মাওলা রনি নিজেই স্বীকার করেছেন।
শনিবার গোলাম মাওলা রনির স্ত্রী কামরুন্নাহার রুনু নেতাকর্মীদের নিয়ে পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু তালেব মিয়ার বাড়ি থেকে ফেরার পথে তার গাড়িতে এ হামলা হয়। এ সময় তার ব্যবহৃত মাইক্রোবাসটি ভাঙচুর করা হয়। কয়েকজন কর্মী-সমর্থকও আহত হন।
এ বিষয়ে অভিযোগ করতে কামরুন্নাহার নেতাকর্মীদের নিয়ে গলাচিপা থানার দিকে যান। এ সময় শাহজাহান খান রনিকে মোবাইলে ফোন দেন। তিনি ফোন করে বলেন, ‘ভাই এইমাত্র শুনলাম যে, গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা লোকজন নিয়ে হাসপাতালের দিকে যাইতেছি।’
এর জবাবে গোলাম মাওলা রনি বলেন, ‘তোমরা আগে গাড়িটা নিয়ে থানায় যাও। থানায় গিয়ে এই সুযোগে প্রার্থীসহ সবার নামে মামলা দিয়ে দাও। আমি ওপরে প্রেসার ক্রিয়েট (চাপ সৃষ্টি) করতেছি। তোমরা সমস্ত নেতারা থানা ঘেরাও করো। এভরিবডি (প্রত্যেকে) থানা ঘেরাও করো। ওখানে বসে তোমার ভাবিকে বাদী করো। তার ওপর হামলা হয়েছে, তার গাড়ির ওপর হামলা হয়েছে বলে সবাইকে (সবার বিরুদ্ধে নাম) মামলায় দিয়ে দাও। মামলা না নেওয়া পর্যন্ত তোমরা ওখান থেকে নামবা না। এটা কিন্তু আমাদের সুযোগ এবং সব জায়গায় ফোন দিয়ে হাজার হাজার মানুষ নিয়ে থানা ঘেরাও করো। এটা আমাদের সুযোগ। ঠিক আছে।’
অপর প্রান্তে ফোনদাতা এ সময় বলেন, ‘ওকে ওকে।’
ফোনালাপের বিষয়ে গোলাম মাওলা রনি বলেন, ‘আমার স্ত্রী থানার মধ্যে দুই-তিন ঘণ্টা বসেছিল। আমার স্ত্রীর ওপর হামলা হয়েছে, বোন আহত হয়েছে। ভাড়া গাড়ি ভাঙা হয়েছে। সে বিষয়ে তারা অভিযোগ করতে থানায় গিয়েছিল, কিন্তু থানা মামলা নেয়নি। তখন আমি নেতাকর্মীদের বলেছি, থানায় গিয়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে, যাতে মামলা নেয়। এটা আমার গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু থানা তারপরও মামলা নেয়নি।’
গলাচিপার অনেকে দাবি করেছেন, স্থানীয় নেতা শাহজাহান খানের সঙ্গেই রনির কথা হয়েছিল। তবে শাহজাহান খান বলেছেন, ‘ঘটনার দিন তার সঙ্গে আমরা কথা হয়েছে। তবে থানা ঘেরাও করার নির্দেশের বিষয়ে আমাকে বলেনি। আমাকে মামলা করার বিষয়ে বলেছেন।’
গলাচিপা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) হুমায়ুন কবির বলেন, ‘এ রকম একটি টেলিফোন আলাপের কথা আমরা শুনেছি। তবে এটা নিয়ে এখনও কোনও তদন্ত শুরু করিনি।’
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন