মঙ্গলবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৮, ০১:৪৮:০৫

সুবিধায় সাজু কোণঠাসা রনি

সুবিধায় সাজু কোণঠাসা রনি

লায়েকুজ্জামান, এমরান হাসান সোহেল, সাইমুর রহমান এলিট, পটুয়াখালী থেকে : সাগরপারের দুই উপজেলা গলাচিপা ও দশমিনা নিয়ে পটুয়াখালী-৩ আসন। ঝড়-জলোচ্ছ্বাসসহ বৈরী পরিবেশ মোকাবেলা করেই চলতে হয় এখানকার মানুষকে। রোজকার জীবনসংগ্রামের মধ্যেই নির্বাচনী মিটিং-মিছিলেও শামিল হচ্ছে তারা। নৌকা আর ধানের শীষের নেতাকর্মীরা তো সারাক্ষণ ব্যস্ত ভোটের প্রচারে।

দশমিনার বেতাগী ইউনিয়নের পিচঢালা পথে মাঝরাতেও আওয়াজ শোনা যায় স্লোগানের। বেতাগী বাজারে গিয়ে দেখা গেল, বাজারজুড়ে লোক আর লোক। চায়ের দোকানগুলো লোকে ঠাসা। আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহজাদা সাজুর নির্বাচনী ক্যাম্পে ডেকসেটে বাজছিল নির্বাচনী গান। ক্যাম্পের সামনে ছন্দের তালে নাচছিল কয়েক কিশোর। বয়স্করা চায়ের কাপে ঠোঁট লাগিয়ে উপভোগ করছিলেন ওই নাচ-গান। একটি চায়ের দোকানে বসে কথা হয় বয়স্ক ভোটার আবুল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ভোট আসলে তো একটু-আধটু আনন্দ হবেই।’ কাকে ভোট দেবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভোট হলো গোপন ব্যাপার। এডা বলব না। তবে আমাদের এখানে সব  সময় নৌকা পাস করে, বিএনপি চান্স পায় না।’

পটুয়াখালীর এই আসনে ভোটারসংখ্যা দুই লাখ ৯৮ হাজার ৪৯৭। নিকট অতীতে এ আসনে বিএনপির প্রার্থীর জেতার কোনো রেকর্ড নেই। ১৯৯৬ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের খ ম জাহাঙ্গীর জিতেছেন তিনবার। একই দল থেকে গোলাম মাওলা রনি জয় পেয়েছেন একবার।

এবার এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহজাদা সাজু। তিনি প্রধান নির্বাচন কশিনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার ভাগ্নে। বিএনপির প্রার্থী হয়েছেন ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকিটে বিজয়ী গোলাম মাওলা রনি। অন্য প্রার্থীরা হলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কামাল খান ও জাতীয় পার্টির সাইফুল ইসলাম। বেশ কয়েকজন ভোটারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ আসনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে নৌকা ও ধানের শীষের মধ্যে।

বিএনপির প্রার্থী গোলাম মাওলা রনি মিষ্টভাষী লোক হিসেবে এলাকায় পরিচিত। তবে তাঁর সময়ে এলাকায় কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন না হওয়ার অভিযোগ আছে। এ ছাড়া শেষ মুহূর্তে দল বদল করে তিনি ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন। এতে একদিকে আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা তাঁকে বেঈমান আখ্যা দিয়ে তাঁর পরাজয় নিশ্চিত করতে একাট্টা হয়েছে, অন্যদিকে রনিকে ভালোভাবে গ্রহণ করতে পারেনি বিএনপির অনেক নেতাকর্মীও। স্থানীয় যুবদলের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘রনির সময়ে বিএনপি ঘরানার বহু লোক নির্যাতিত হয়েছে। সেই নির্যাতন ভুলে কিভাবে আমরা রনিকে গ্রহণ করব!’

বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন হাসান মামুন, শাহজাহান খান ও গোলাম মোস্তফা। দল প্রথমে হাসান মামুন ও শাহজাহান খানকে মনোনয়ন দিয়েছিল। পরে তা উল্টে যায় রনি বিএনপিতে যোগ দেওয়ায়। শাহজাহান খান ও গোলাম মোস্তফাকে দু-একবার রনির পক্ষে গণসংযোগে দেখা গেলেও এখন পর্যন্ত মাঠে নামেননি হাসান মামুন। স্থানীয় বিএনপির বড় অংশের নিয়ন্ত্রক মামুন। চুপচাপ আছে তাঁর অনুসারীরাও।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহজাদা সাজু পেশায় ব্যবসায়ী। ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন। এলাকায় তাঁদের পরিচিতি আওয়ামী লীগ পরিবার হিসেবেই। পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির অধিকারী তিনি। দলের সাবেক এমপি খ ম জাঙ্গীর হোসাইন এবং তাঁর অনুসারীরাও তাঁর পক্ষেই কাজ করছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগে কোনো বিরোধ দেখা যাচ্ছে না।

গলাচিপা উপজেলার বকুলবাড়িয়া ইউনিয়নের আবুল কাশেম বলেন, ‘ধানের শীষের লোকদের তো ভোট চাওয়ার তোড়জোড় দেখছি না। আওয়ামী লীগের লোকেরা একবার দিনে আসে আবার রাতেও ভোট চাইতে আসে।’

গোলাম মাওলা রনির স্ত্রী কামরুন্নাহার রুনুর অভিযোগ, গত ১৫ ডিসেম্বর তিনি গণসংযোগে বেরোলে তাঁর ওপর যুবলীগের কর্মীরা হামলা চালায়।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহজাদা সাজু  বলেন, ‘এলাকার মানুষ ও দলীয় নেতাকর্মীরা ইতিবাচকভাবেই আমাকে গ্রহণ করেছে। দলীয় লোকেরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে মাঠে কাজ করছে। জয়ের ব্যাপারে আমি আশাবাদী।’

বিএনপির প্রার্থী গোলাম মাওলা রনি বলেন, ‘আমার নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দেওয়া হচ্ছে। আমার স্ত্রীর ওপর হামলা হয়েছে।’ তাঁর দাবি, নির্বাচন সুষ্ঠু হলে তিনি জিতবেন।-কালের কণ্ঠ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে