পটুয়াখালী থেকে : বিবাহোত্তর সংবর্ধনার সব কার্যক্রম চলছিল বেশ ধুমধাম করে। কনে পক্ষ ঢাকডোল পিটিয়ে আনন্দ উল্লাস করে গাড়ি বহর নিয়ে হাজির হন বরের বাড়িতে। কিন্তু সেই অনুষ্ঠানেই খবর ছড়িয়ে পড়ে বর মারা গেছেন। এমনই হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে মির্জাগঞ্জ উপজেলার মাধবখালী ইউনিয়নের বাজিতা গ্রামে।
বিয়ের সব আয়োজন রেখেই ওই দিন বুধবার (২ ডিসেম্বর) বিকেল ৫টায় নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবর স্থানে দাফন করা হয় বর মো. রফিকুল ইসলামকে (২৫)। মির্জাগঞ্জ উপজেলার ইতিহাসে এমন ঘটনায় এলাকা জুড়ে শোক ছড়িয়ে পড়ে। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, সোমবার (৩০ নভেম্বর) মির্জাগঞ্জ উপজেলার মাধবখালী ইউনিয়নের বাজিতা গ্রামের সফেজ মিয়ার ছেলে মো. রফিকুল ইসলামের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী বেতাগী উপজেলার বাসন্ডা গ্রামের মো. মন্নান মিয়ার মেয়ে ময়না আক্তারের (১৮) বিয়ে হয়।
ওইদিনই নববধূকে নিয়ে আসা হয় বরের বাড়ি বাজিতা গ্রামে। একদিন পরই মঙ্গলবার রাতে বর রফিক নিজের বাড়িতে স্বাভাবিক জ্বর অনুভব করেন। বুধবার সকালে চিকিৎসার জন্য তাকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে নেওয়া হয়। এদিকে নির্ধারিত তারিখ বুধবার বর রফিকের বাড়িতে কনের পক্ষের জন্য বৌভাতের আয়োজন করা হয়। বৌভাতে কনে পক্ষের লোকজন বরের বাড়িতে পৌঁছালেই খবর আসে রফিক আর বেঁচে নেই। বিয়ের আনন্দ ওখানেই থেমে যায়।
এদিকে, স্বামীর মৃত্যুর খবরে জ্ঞান হারিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন নববধূ ময়না আক্তার। তার শরীরেও স্বাভাবিক জ্বর দেখা দিলে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে ভর্তি ময়না এখন সুস্থ রয়েছেন। নিহত রফিকুল ইসলামের চাচা পশ্চিম চৈতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আনসার উদ্দিন জানান, রফিকের বাবা সেনাবাহিনীর চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টে রেকর্ড অফিসে (সিভিল বিভাগ) কর্মরত।
একমাত্র ছেলেকে নিয়ে মা বাড়িতে থাকতেন। রফিক ও আমি রোববার একসঙ্গে বিয়ের সব কেনাকাটা করি। কিন্তু এখন আমাদের মাঝে রফিক নেই। সব কিছুই শেষ হয়ে গেল। একমাত্র সন্তান ছেলেকে হারিয়ে বাবা-মা উভয়েই পাগল প্রায়। আত্মীয়-স্বজনসহ এলাকাবাসীর সান্ত্বনা দেওয়ার কোনো ভাষা নেই। মেহমানদের জন্য রান্না করা খাবার বাড়ির আঙিনায় থরে থরে সাজানো পাতিলেই রয়ে গেছে।