এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : ‘আমাদের এখন আর বাজারে মরিচ নিয়ে যেতে হয় না। মানুষ মোবাইলে কল দিয়ে বোম্বাই মরিচ চায়।’ মরিচ চাষ করে স্বাবলম্বী কৃষক জাকির মুন্সীসহ শতাধিক কৃষক এভাবে তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের কৃষকরা। দেশে-বিদেশে চাহিদা থাকায় ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ব্যাপকভাবে চাষ হচ্ছে এই মরিচ।
এ অঞ্চলের মরিচের ঘ্রান ও গুণগতমান ভালো হওয়ায় প্রতিবছর এখান থেকে চাহিদা মতো মরিচ কেনেন পাইকারী ব্যবসায়ীরা। এর ফলে ভালো দাম পাচ্ছেন চাষিরা। সচ্ছলতা ফিরে এসেছে ইউনিয়নের কৃষকদের ঘরে ঘরে।
এক সময় ঘরোয়া চাহিদা পূরণের জন্য বাড়ির আঙিনায় ও ঘরের কোণে বোম্বাই মরিচের দু-একটি গাছ লাগানো হতো। এখন অন্যান্য কৃষিকাজের চেয়ে বোম্বাই মরিচ চাষে বেশি লাভ হওয়ায় অনেকেই মরিচ চাষ করছেন।
সারা দেশে সাধারণত কৃষকরা কাঁচা মরিচ চাষ করলেও পটুয়াখালীর নীলগঞ্জ ইউনিয়নের মতো আধুনিক পদ্ধতিতে বাণিজ্যিকভাবে বোম্বাই মরিচ চাষাবাদ খুব একটা দেখা যায় না। এখানকার কৃষকরা তাদের জমি উঁচু করে বেড তৈরি করেন। এর পর সেখানে বাঁশ কিংবা লোহার পাইপ দিয়ে কাঠামো তৈরি করে তার উপর পলিথিন শিট দিয়ে ঢেকে দেন। আর এই শিটের নিচে চলে মরিচ আবাদ। এতে তাদের খুব বেশি খরচ না হলেও লাভ অনেক বেশি। বর্তমানে পাইকারি বাজারে তারা প্রতি পিচ বোম্বাই মরিচ দুই থেকে তিন টাকায় বিক্রি করছেন।
ইউনিয়নের কুমিরমারা গ্রামের কৃষক জাকির মুন্সী বলেন, ‘বাড়ির পাশে ৪ শতক জমিতে আমি দুটি পলিথিন শিটের বেড তৈরি করে মরিচ লাগিয়েছি। এতে আমার খরচ হয়েছে মোট ১০ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত আমি ৫৪ হাজার টাকার মরিচ বিক্রি করেছি। এখনো যে মরিচ আছে তাতে আমি অন্তত দেড় লাখ টাকা বিক্রি করতে পারব।’
তিনি জানান, ‘এখন আর মাকে মরিচ নিয়ে বাজারে যেতে হয় না। মোবাইলে কল দিয়ে পাইকাররা বিকাশে টাকা পাঠিয়ে দিলে আমরা গাড়িতে মরিচ পাঠিয়ে দিই। আর অন্যান্য ফসল পরিবহণে সমস্যা হলেও বোম্বাই মরিচ পরিবহণ সব থেকে সহজ। গত সপ্তাহে একটি বাজারের ব্যাগে করে মরিচ নিয়ে গিয়ে আট হাজার টাকায় বিক্রি করেছি।’
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের পটুয়াখালী সরেজমিন গবেষণা বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আধুনিক কৃষির সঙ্গে নীলগঞ্জের কৃষকরা সরাসরি সম্পৃক্ত। তারা অসময়ে ফসল ফলিয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। তাদের উৎপাদিত পণ্যের জন্য নতুন বাজার তৈরি হয়েছে। বোম্বাই মরিচ এখন এ এলাকার কৃষকদের কাছে একটি অর্থকরী ফসল হিসেবে পরিচিত। সরকারের কৃষি বিভাগও এ বিষয়ে তাদের সার্বিক সহযোগিতা করে আসছে।’
তবে নীলগঞ্জ ইউনিয়নের কৃষকরা শুধু বোম্বাই মরিচ নয়; তারা গ্রীষ্মকালীন বিভিন্ন শাক-সবজিও উৎপাদন করছেন। তাদের উৎপাদিত ফসলের তালিকায় আছে তরমুজ, টমেটো, রেড বিট, ক্যাপসিকাম, রক মেলন, লেটুসপাতা, থাইপাতাসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ফসল। এসব চাষাবাদের জন্য তারা পলিথিন শেট দিয়ে যে হাউজ তৈরি করছেন এর নাম দিয়েছেন কৃষকের গ্রিন হাউজ।