আহাদুল ইসলাম শিমুল, জিয়ানগর (পিরোজপুর) : ‘গরিবরে দেহার তো আর কেউ নাই। এহানের কেউ কোরবানির গোস্ত কি হেয়া চোহেও দ্যাহে না। ঈদের দিন পোলাপান লইয়া কান্দাকাডি হরা ছাড়া মোগো আর উপায় থাহে না।
কারণ পোলাপানে গোস্ত খাওয়ার লইগ্যা কান্দে। মোগো জোডে না ভাত, মোগো লইগ্যা কি কোরবানি? কই পামু, আর কেডাই বা দেবে মোগো গোস্ত? এমন নানান প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন অতিদরিদ্র কাদের শেখ (৭০)।
তার মতো এমন হাজারও প্রশ্ন সমাজের বিত্তবানদের প্রতি ছুড়ে দিয়েছেন নদী তীরবর্তী জিয়ানগরের বালিপাড়া জাপানি ব্যারাক হাউজের (আবাসন) বাসিন্দারা।
উপজেলার সবচেয়ে নি:শ্ব মানুষ তারা। যারা নদীতে মাছ ধরে ও দিন মজুরের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তিন শতাধিক মানুষের বসবাস এই ব্যারাক হাউজে।
এই মানুষের অধিকাংশ মৌলিক চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। অনেকেই অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটান। গোস্ত খাওয়ার স্বপ্নও দেখেন না তারা।
আবার অধিকাংশ বসতঘরগুলো বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। নেই বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা। আবার চিকিত্সার দরকার হলে ছুটে যেতে হয় ১৫ থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরের হাসপাতালে। এই এলাকায় ভিজিএফের চাল কিংবা বয়স্ক ভাতা পান মাত্র ৩/৪ জন।
গত কয়েক মাস ধরে টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি অতিরিক্ত বৃদ্ধি পাওয়ায় এই ব্যারাকের কর্মযোগ্য মানুষেরা কর্মহীন হয়ে পড়ে।
ফলে অর্থ কষ্ট আরো বৃদ্ধি পায়। তাই প্রতিবারের মতো এবারেও কোরবানির ঈদ আনন্দ কান্না হয়ে তাদের কাছে ধরা দিতে যাচ্ছে।
কোরবানি আসলে সমাজের বিত্তবানদের মুখে হাসি থাকলেও মলিন থাকে এখানকার বাসিন্দাদের মুখ। কারণ শিশু সন্তান যদি কোরবানির গোস্ত খেতে চায় তাহলে কি দিয়ে তাকে সান্ত্বনা দিবেন। সেই চিন্তায় বিমর্ষ হয়ে পড়েন এখানকার অভিভাবকেরা।
স্থানীয় বাসিন্দা আ. জলিল জোমাদ্দার বলেন, ‘মোরা গরিব মানুষ। আশেপাশের গ্রামের মানুষও হেরহমের দনী (ধনী) না। হেইর লইগ্যা কেউর দারে যে কোরবানির গোস্ত চাইতে কেউ যাইবে হেরহমের কায়দাও নাই। গুরাগারা লইয়া কোরবানির দিনে এট্টা মুরহা কিন্না খামু হে উপায়ও নাই। এ বচ্চর যে রহমের দেওই (বৃষ্টি) আর জোয়ারের পানি বাড়চেলে হ্যাতে কোনো কাম কাইজ হরতে পারি নাই কেউ।’
মো. শহিদুল ইসলাম জানান, ‘কোরবানির দিন পোলা-মাইয়ায় গোস্ত খাওয়ার লইগ্যা কান্দাকাডি হরে। কিন্তু কই পামু মোরা গোস্ত। ভাত খাইতেই তো কষ্ট অয়। জীবনে তো কোরবানি দেওয়ার তৌফিক আল্লায় দেয় নাই।’
রওশনা বেগম জানান, ‘কোনো চেয়ারম্যান-মেম্বাররা কেউ এক টুকরা গোস্তও মোগো দেয় না। মোরা যে গরিব হেরা কিছু মনেই হরে না। খালি ভোডের সময় আইয়া কয় মা, খালা, চাচি এট্টা ভোড দিয়েন। হেয়ার পর আর হেগো কোনো খোঁজ থাহে না।’
বালিপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান কবির হোসেন বয়াতী জানান, ‘জাপানি ব্যারাক হাউজের বাসিন্দারা আসলেই খুব কষ্টে আছে। তাদের সহায়তা করা প্রয়োজন। সমাজের বিত্তবানেরা এগিয়ে আসলে সেখানে কোরবানির পশুর গোস্ত পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে’।
ভারপ্রাপ্ত উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মহিউদ্দিন জানান, বালিপাড়া ইউনিয়নে বয়স্ক ভাতা পান ৬৯৮ জন, বিধবা ভাতা পান ২৬৪ জন, ভিজিডি কার্ডপ্রাপ্ত হলেন ৩৬৬ জন, ভিজিএফ কার্ডপ্রাপ্ত হলেন প্রায় ১১শ জন। আর ওই ব্যারাকের প্রায় সব পরিবারই দুস্থ। বরাদ্দের তুলনায় বয়স্ক, বিধবা, দুস্থদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় সবাইকে সহায়তা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। -ইত্তেফাক
১২ সেপ্টেম্বর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম