যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, কপোতাক্ষ নদ সচল করতে প্রায় ২৬২ কোটি টাকার চার বছর মেয়াদী প্রকল্পের ২০১১ সালে অনুমোদন দেওয়া হয়। এ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে ২০১২-১৩ ও ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে তালা উপজেলার পাখিমারা বিলে জোয়ারাধার চালু করার কথা। এ জন্য জমির ক্ষতিপূরণ ও বাঁধ নির্মাণ ববাদ ব্যয় ধরা হয় ১৩ কোটি ৭৮ লাখ তিন টাকা। এক হাজার ৫৬১ দশমিক ৯৬ একর একর জমির ওপর জোয়ারাধার বাস্তবায়ন করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা গেছে, জোয়ারাধার চালু করার জন্য বাঁধ নির্মাণ করতে হবে ১২ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার। বাঁধের তলাদেশ হবে ৪০-৫০ মিটার, উচ্চতা হবে তিন থেকে চার মিটার ও মাথা হবে তিন মিটার।
সরেজমিনে যেয়ে দেখা যায়, জোয়ারধারার জন্য নির্মিত বাঁধ প্রাক্কলন অনুযায়ী নির্মাণ করা হয়নি অনেক স্থানে। ১৩ কিলোমিটার লম্বা এ বাঁধের ২০-২৫ স্থানে ত্রুটি চোখে পড়বে যে কারও। বাঁধের উচ্চতা দুই থেকে আড়াই মিটারের বেশি হবে না। তলাদেশও কম রয়েছে অধিকাংশ স্থানে। বিশেষ করে মাধবখালি, দোহার, গৌতমকাটি, সাতপাখিয়া, তেঘরিয়া, বিটেরচক এলাকার বাঁধের অবস্থা নাজুক। এসব স্থানের বাঁধ মেরামত না করে তড়িঘড়ি করে গত ১১ জুলাই জোয়ারাধারা চালু করা হয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে। মেরামত না করে জোয়ারাধারা চালু করায় ওইসব এলাকা দিয়ে ছিদ্র হয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকে ছয়টি গ্রামে জলাবন্ধতায় দেখা দেওয়ায় মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
জোয়ারাধারা সংযোগ খালের ধসে যাওয়ার বাঁধ এলাকায় কথা হয় দোহার গ্রামের ইমাদুল হক শেখ,শ্রীমন্তকাটি গ্রামের আফিলউদ্দীন ও শুভকরকাটি গ্রামের আব্দুল মালেকসহ অনেকের অভিযোগ, নকসা অনুয়ায়ী বাঁধ না দিয়ে জোয়ারাধারা চালু করা হয়েছে। এতে জলাবন্ধতা থেকে বাঁচানোর চেয়ে ডুবিয়ে মারা ফাঁদ তৈরি করা হয়েছে। এলাকাবাসীর মতামত উপেক্ষা করে প্রবল বর্ষার মধ্যে দিয়ে গত ১১ জুলাই আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের মাধ্যমে পানি উন্নয়ন বোর্ডে জোয়ারাধারা চালু করার জন্য সংযোগ খালের মুখ কেটে দেয়। গত প্রায় এক মাস ধরে বৃষ্টি হওয়ায় ও জোয়ারাধারার বেসিনে জমা পানিতে কয়েকটি এলাকা তলিয়ে গেছে। ভোর রাতে বেঁধে দেওয়া সংযোগ খালের বাঁধ ধসে যাওয়ায় এ বাঁধ ভেঙ্গে তালা উপজেলার খেশরা ও জালাপুর ইউনিয়নের তেঘরিয়া, শুভংকরকাটি, শ্রীমন্তকাটি, আটুলিয়া, দোহার, বালিয়া, সাতপাকিয়া, গৌতমকাটি, আমড়াডাঙ্গা, মাদ্রা, মাগুরা, দরমুড়াগাছা মাধবখালি, গৌতমকাটি, তেঘরিয়া, বিটেরচক, তালবাড়িয়া, গেড়েরবিল, শালিকা, চালতেবাড়ি ও হোকনাসহ ৩০টি গ্রাম তলিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সংযোগ খালের বাঁধের পাশের বাসিন্দা আব্দুস ছাত্তার ও মাজেদ শেখ আতঙ্কে এলাকা ছাড়ার চিন্তা করছেন।
সংযোগ খালের পাশে মুখে হাত দিয়ে চিন্তাগ্রস্ত হয়ে বসে ছিলেন সাতপাখিয়া গ্রামের নার্গিস বেগম। তিনি জানালেন, জলাবন্ধতার করণে তাঁরা দেড় মাস বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র ছিলেন। কয়েকদিন আগে সংযোগ খালের মুখে বাঁধ দেওয়ায় পানি ঢুকা বন্ধ হয়ে যায়। তিনি বাড়ি ফিরে এসেছেন সোমবার। বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় তিনি আবারও চিন্তায় পড়েছেন।
খেসরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী জানান, বর্তমানে ভাটা তাই যেভাবে পানি ঢুকছে লোকালয়ে, জোয়ারে কি হয় তা কি জানে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুরদর্শিতার অভাবে এ ঘটনা ঘটেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী জানান, বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাওয়ায় তারা কয়েকদিন ধরে পানিতে পচনশীল নয় এমন বস্তায় বালি ভরে বাঁধ দেওয়ার চেষ্টা করছেন, কিন্তু এলাকার মানুষ তাদের কাজ করতে দিচ্ছে না। জোয়ারাধারায় যে পরিমান পানি ঢুকছে, ভাটায় তা বের হচ্ছে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, অতবড় বেসিননের জন্য যত বড় সংযোগ খাল কাটা দরকার ছিল তা কাটতে পারেননি। ফলে জোয়ারের সময় ওঠা পানি নামার আগেই আবার জোয়ার এসে যায়। তিনি দাবি করেন এক বছর এমন হতে পারে। পরে ঠিক হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন এলাকার মানুষ কাজ করতে দিলে তারা সংযোগ খালের ধসে স্থানসহ জোয়ারাধারার বাঁধ মেরামতের কাজ করবেন।
তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মাহবুববুর রহমান জানান, পরিকল্পিত ও নকসা অনুযায়ী কাজ না করার বিষয়টি তিনি মনিটরিং কমিটির প্রধান হিসেবে একাধিকবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্টদেরকে অবিহিত করেছেন। কিন্তু তারা গুরুত্বসহকারে তাদের পরামর্শ নেয়নি। তারপর কপোতাক্ষ নদ খনন না করেই জোয়ারাধারা চালু করার পাশাপাশি বর্ষাকালে এটি চালু করায় সমস্যা বেড়েছে। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে তিনি সংযোগ খাল এলাকা পরিদর্শনে যেয়ে দেখেছেন আসলে পাশের বাঁধ খুবই ঝুুঁকপূর্ণ। তিনি বিষয়টি উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন।
১৪ আগস্ট ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস