সিরাজগঞ্জ থেকে : অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে সিরাজগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বন্যা কবলিতদের মধ্যে ইতোমধ্যে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
দেখা দিয়েছে হাত-পায়ে ঘা। আর চরাঞ্চলগুলো একেবারে তলিয়ে যাওয়ায় উঁচু জায়গার অভাবে অনেকে ঘরে চালে বা নৌকায় আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে চাল ও নগদ টাকা বিতরণ করা হলেও চরাঞ্চলে এখনো অনেকস্থানে তা পৌছেনি।
এদিকে বুধবার ভোরে এনায়েতপুরে গোপাল-পাঁচিল বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ শতাধিক মিটার ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। এতে বসতবাড়ীতে পানি ওঠার পাশাপাশি প্রায় দেড়হাজার হেক্টর আমান ধান তলিয়ে গেছে।
পাহাড়ি ঢলের কারণে গত ছয়দিনদিন ধরে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ১৫০ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যা অতীতের ২৮ বছরের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। ফলে জেলার পাঁচ উপজেলার তিন লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
বিশেষ করে সদরের কাওয়াকোলা ইউনিয়নের ২০টি গ্রাম সম্পন্ন তলিয়ে গেছে। একটু টুকরো উচু জায়গাও নেই মানুষের আশ্রয় নেয়ার মতো। বাধ্য হয়ে কেউবা নৌকায় কেউবা ঘরের চালে কেউবা চৌকি উচু করে রান্নাবান্না করে মানবেতর জীবনযাপন করছে। টিউবওয়েল তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। সার্বক্ষণিক পানিতে থাকায় হাত-পায়ে ঘা দেখা দিয়েছে।
এছাড়াও অনেক পানিবন্দী মানুষেরা ওয়াপদা বাঁধে আশ্রয় নিযে মানবেতর জীবনযাপন করছে। সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে গোপালপুর-পাঁচিল বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের একশত মিটার এলাকা বুধবার ভোরে ভেঙ্গে গেছে। এতে প্রবলবেগে বাঁধের অভ্যন্তরে পানি প্রবেশ করছে।
পানি প্রবেশের ফলে এনায়েতপুর থানার জালালপুর, খুকনী ও শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরী ও বেলতৈল ইউনিয়নের অন্তত এক থেকে দেড় হাজার হেক্টর আমন ধান তলিয়ে গেছে।
ইতোমধ্যে কিছু ঘর-বাড়ি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও পানি ওঠতে শুরু করেছে। বাধটি শাহজাদপুর উপজেলা সদরের সাথে এনায়েতপুরের ২টি ইউনিয়নের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র রাস্তা হওয়ায় যাত্রা পথে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
কাওয়াকোলা ইউনিয়নের দোরতা গ্রামের আব্দুস সাত্তার ও তারা মিয়া জানান, ইউনিয়নে উচু জায়গা নেই যেখানে আশ্রয় নিবো। সবখানেই পানি আর পানি। টিউবওয়েল তলিয়ে গেছে। বন্যার পানি দিয়ে রান্না কাজ করা হচ্ছে। গ্রাম এক দুটি টিউবওয়েল পানি ওঠছে। সেখান সাতরিয়ে গিয়ে পানি আনতে হচ্ছে। অনেক সময় পানি ফুরিয়ে গেলে বন্যার পানিও খেতে হচ্ছে।
কাওয়াকোলা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান টি.এম.শাহাদত হোসেন ঠান্ডু জানান, কাওয়াকোলা ইউনিয়নের ২০টি গ্রাম সম্পন্ন পানিতে তলিয়ে গেছে। মানুষ চরম দুর্ভোগের মধ্যে জীবযাপন করছে। দেখা দিয়েছে খাদ্য ও পানির সংকট।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুর রহিম জানান, মাত্র ছয়দিনের বন্যায় জেলার ৪০টি ইউনিয়নের ২৯০টি গ্রাম বন্যাকবলিত হয়ে ২৬৪ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। . ২৪৩ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। সরকারীভাবে ইতোমধ্যে ৩৩৫ মে.টন চাল সাড়ে ১২ লক্ষ টাকা বিতরনের জন্য ৫টি উপজেলায় বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা ইতোমধ্যে বিতরণ শুরু হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ হাসান ইমাম পেইঞ্জ জানান, পানি বিপদসীমার ১৫০ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে পানি স্থিতিশীল হতে পারে। আর এনায়েতপুরের বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ নয়, তবে সংযোগ সড়ক ভেঙ্গে গেছে। এতে গ্রামের ভিতর পানি ঢুকছে। শুস্ক মৌসুমে এটি মেরামত করে দেয়া হবে।
এমটিনিউজ২৪/এম.জে