সিরাজগঞ্জ: যমুনার ভাঙনে বসতভিটা বিলীন হওয়ায় সিরাজগঞ্জের চৌহালীতে মৃত্যুর আগেই কবরস্থানে বসবাস শুরু করেছেন হতভাগ্য কয়েকটি পরিবার।শত বছরের পুরনো মিটুয়ানী কবরস্থানে টিনের ঘর তুলে সপরিবারে বসবাস গড়ে তুলেছেন তারা।
এ ছাড়া পাকা সড়ক যমুনা গ্রাস করায় কবরস্থানের মধ্যে দিয়ে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ পথচারীরা অবাধে যাতায়াত করছে।স্থানীয়রা নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের দাবি জানিয়ে দ্রুত কবরস্থানের পবিত্রতা রক্ষায় ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
সোমবার দুপুরে স্থানীয়রা জানান, যমুনার রাক্ষুসী থাবায় বিগত ৫ বছরে চৌহালী উপজেলার খাষপুখুরিয়া থেকে বাঘুটিয়া ইউপির ভুতেরমোড় পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার এলাকায় অন্তত সাড়ে চার হাজার ঘরবাড়ি, ১৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পাকা সড়ক শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ কয়েক হাজার একর ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। এ বছর বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই যমুনার ভাঙনের তাণ্ডবলীলায় মিটুয়ানী ও খাষপুখুরিয়া এলাকায় প্রায় আড়াই শতাধিক বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়।
এ কারণে শত শত পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়ে। এ ছাড়া কয়েকশ’একর আবাদি জমি ও গাছপালা হারিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই না পেয়ে নদীর পাশে অবস্থিত শত বছরের ঐতিহ্যবাহী মিটুয়ানী কবরস্থানের ওপর বসবাস শুরু করেছে স্থানীয় কয়েকটি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার।
শুধু বসবাসই নয়, কবরস্থান গৃহস্থলি কাজ ও যাতায়াতের জন্য সড়ক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে কবরস্থানে আশ্রয় নেয়া বয়োবৃদ্ধ আতর আলী জানান, প্রয়োজন কোনো আইন মানে না। ধর্মীয় বিধান বর্হিভূত হলেও কোনো পথ না পেয়ে কবরস্থানেই ভাঙ্গাঘর তুলেই বসবাস করে আসছি। বসতভিটা যখন ছিল তখন একা একা কবরস্থানে যেতেই ভয় পেতাম। আর এখন বাধ্য হয়ে বসবাস করি।
তবে স্থানীয় ইউপি সদস্য রবিউল ইসলাম বলেন, যদিও বসতভিটা হারানোদের নিদারুণ কষ্ট, তারপরও কবরস্থানের পবিত্রতা রক্ষায় তাদের উচিত হবে অন্যস্থানে বসবাস গড়ে তোলা।
এ বিষয়ে চৌহালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ সরকার জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের পরিকল্পনা সরকার গ্রহণ করলেও এখনও তা বাস্তবায়িত হয়নি। তাই স্কুল-কলেজ মাঠ, পরিত্যক্ত জায়গাসহ কবরস্থানের মধ্যে বসবাস শুরু করেছেন।
তবে চৌহালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহা. আবু তাহির জানান, মিটুয়ানী কবরস্থানের ভিতরে কয়েকটি পরিবার টিনের ঘর তুলে বসবাস করছে একরম একটি খবর আমি জেনেছি। বসতভিটা নদীতে বিলীন হওয়ায় মানবিক কারণে তাদের সুযোগ দিয়েছেন স্থানীয়রা। তবে নদীভাঙনে বিধ্বস্তদের পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে। ব্যবস্থা হলে কবরস্থানে আশ্রয় নেয়াদের অগ্রাধিকারভিত্তিতে সুযোগ দেয়া হবে।যুগান্তর