সুনামগঞ্জ : সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুতে তার নির্বাচনী এলাকা দিরাই-শাল্লায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। এখানকার পাঁচ লাখ বাসিন্দা শোকে হতবিহ্বল হয়ে পড়েছে। তাদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে গভীর হতাশা।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে দিরাই-শাল্লার মানুষ ডাকতো সেনবাবু বলে। স্থানীয় সকল শ্রেণিপেশার মানুষের কাছে তার পরিচিতি ছিল ‘দুখু সেন’ হিসেবে।
তার মৃত্যুতে দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে গত রবিবার থেকে চলছে তিন দিনের শোক কর্মসূচি। উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে কালো পতাকা উত্তোলন, কালো ব্যাজ ধারণ, ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনাসহ নানা শোক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। লাখো মানুষের অংশগ্রহণে সোমবার শেষকৃত্য অনুষ্ঠান হবে বলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা জানান।
১৯৭০ সালের প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে তার সমর্থনে দিরাই বাজারে সবশেষ নির্বাচনী জনসভায় আসেন তৎকালীন বিরোধী দল ন্যাপের নেত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী। সেই সময়ের নির্বাচনি প্রচারপত্রে প্রার্থী হিসেবে তার নাম হিসেবে ব্যবহার করা হয় দুখু সেন।
দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আছাবউদ্দিন সর্দার বলেন, ‘সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত মানুষকে আপন ভেবে কাছে টেনে নিতেন। তাদেরকে ছায়া দিয়ে গেছেন একটি বটবৃক্ষ হিসেবে। গরিব-দুঃখী মেহনতি মানুষের ভাষা বুঝতেন সহজেই। তাকে দুখু সেন থেকে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তে রূপান্তরিত করেছে দিরাই-শাল্লার মানুষ। নিজের নির্বাচনি এলাকার কোনও পরিবারের মানুষ কী দিয়ে ভাত খেয়েছে সেই খবরও রাখতেন তিনি।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. সিরাজউদ্দৌলা তালুকদার বরেন, ‘দিরাই-শাল্লাবাসী একজন অভিভাবক হারিয়েছে। উন্নয়নকামী রাজনীতিবিদ হিসেবে তার আলাদা গ্রহণযোগ্যতা ছিল। হাওর অধ্যুষিত দিরাই-শাল্লা উপজেলায় বিদ্যুতায়ন, পাকা সড়ক যোগাযোগ স্থাপন, স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠা এবং মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির ছাড়াও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়ন হয়েছে তার হাত ধরেই।’
উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা অভিরাম তালুকদার বলেন, ‘দিরাই-শাল্লাবাসী মনে করতো সেন বাবু তাদের ঘরের মানুষ।’
আবুল খায়ের জানান, ‘এলাকার বিরোধ দেখা দিলে সামাজিক সালিশের ভিত্তিতে তা ন্যায্যভাবে মীমাংসা করে দিতেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। ছোটখাটো বিষয় নিয়ে গরিব মানুষজন মামলা মোকদ্দমায় জড়ালে সর্বশান্ত হয়ে পড়বে জানিয়ে বাদী-বিবাদী উভয় পক্ষকে নিয়ে বসে তা নিষ্পত্তি করে দিতেন তিনি।’
স্থানীয় রাজনীতিবিদদের অনেকের মতে, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ছিলেন একজন অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিবিদ, সংস্কৃতিমনা মানুষ। শৈশবে মঞ্চনাটক করতেন এলাকায়। শিক্ষকতা করেছেন বেশ কিছুদিন।
সমবয়সী মনোরঞ্জন রায় বলেন, ‘সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত শৈশবে সবার সঙ্গে মিলে খেলাধুলা করতেন। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে সবসময় তাকে পাওয়া যেতো।’
উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুছ জানান, ‘এমসি কলেজে হিন্দু হোস্টেলে থেকে লেখাপড়া করতেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। তখন কলেজ ক্যাম্পাসে আয়োজিত গান, কবিতা, নাটকসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যমণি ছিলেন তিনি। বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনা নিয়ে সাজানো নাটক বিশেষ করে সিরাজউদ্দৌলা ও মোহনলাল চরিত্রে অভিনয় করে সুনাম কুড়ান তিনি।’
সুনামগঞ্জ কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক জিএস ও আওয়ামী লীগ নেতা বেলায়েত হোসেন জানান, ‘কলেজে পড়ার সময় সংস্কৃতি ও রাজনীতির প্রতি অসম্ভব আগ্রহ ছিল সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের। মহকুমা সদরে যত নাটক ও সাংস্কৃতিক আড্ডা হতো সবকটিরই প্রাণ ছিলেন তিনি। বিভিন্ন যাত্রা ও নাটকের সংলাপ তিনি এত বিশুদ্ধভাবে উচ্চারণ করতেন যে, তা শোনার জন্য শ্রোতা-দর্শকরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা অধীর আগ্রহে দাঁড়িয়ে থাকতেন।’ -বাংলা ট্রিবিউন।
০৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম