সুনামগঞ্জ থেকে : একজন নিরপরাধ অটোরিকশা চালককে অস্ত্র মামলায় ফাঁসানোর দায়ে নিজের ছেলেকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন এক মা। সোমবার সকালে সুনামগঞ্জ শহরে এঘটনা ঘটেছে।
সুনামগঞ্জের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার তাপসরঞ্জন ঘোষের কার্যালয়ে এসে ছেলে সালমান ইসলামকে সোপর্দ করেন মা স্বপ্না বেগম। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে।
সালমানের বাড়ি সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার পৈন্দা গ্রামে। গত আগস্ট মাসে সুনামগঞ্জ সদর থানায় এ মামলাটি দায়ের করা হয়। এ সময় স্বপ্না বেগম অশ্রুসজল কণ্ঠে বলেন, আমার ছেলে নির্দোষ একজন মানুষকে ফাঁসিয়েছে। তাই নিজেই ছেলেকে পুলিশে সোপর্দ করতে এসেছি।
পুলিশ ও বিভিন্ন তথ্যসূত্রে জানা যায়, গত ১৪ আগস্ট সুনামগঞ্জ শহরের একটি সিএনজি ফিলিং স্টেশন থেকে জগন্নাথপুর উপজেলার পূর্ব বুধারাইল গ্রামের অটোরিকশা চালক নূর মিয়াকে (৩৮) লোহার তৈরি একটি পাইপগানসহ আটক করে পুলিশ।
এ ঘটনায় সুনামগঞ্জ সদর থানায় নূর মিয়ার বিরুদ্ধে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়। পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে অটোরিকশা চালক নূর মিয়া নির্দোষ। তাকে গ্রাম্য বিরোধের কারণে ফাঁসানো হয়েছে। ওই মামলায় এক মাস ১১ দিন কারাভোগের পর ছাড়া পান তিনি।
পুলিশ জানায়, গ্রাম্য বিরোধের কারণে নূর মিয়া এবং তার দুই চাচাতো ভাই আকবুল মিয়া ও সুমিম মিয়াকে ফাঁসানোর ষড়যন্ত্র করেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী কয়েছ মিয়া (৩৫)।
এতে জড়িত ছিলেন গ্রামের আনিছুর রহমান ও সালমান ইসলাম। ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে নূর মিয়ার অটোরিকশায় পাইপগান রেখে পরিকল্পিতভাবে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে ভিন্ন ঘটনা।
পুলিশের তদন্তে ঘটনাটি বেরিয়ে আসার পর নিজেদের জালে নিজেরাই ফেঁসে যান যড়যন্ত্রকারীরা। অস্ত্র মামলায় উল্টো আসামি হন কয়েছ মিয়া, আনিছুর রহমান ও সালমান ইসলাম।
তাদের মধ্যে কয়েছ মিয়াকে ২৯ অক্টোবর সিলেট এমএজি ওসমানী বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জামিনে আছেন অপর আসামি আনিছুর রহমান।
মা কর্তৃক পুলিশে সোপর্দ হওয়ার পর প্রতিক্রিয়ায় সালমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি ভুল করেছি। আমার আম্মা ফোনে আমাকে বুঝিয়ে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করার কথা বলেন। আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। আমার মায়ের কথা মেনে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছি।’
সালমানের মা স্বপ্না বেগম বলেন, ‘আমার একমাত্র ছেলে সালমান। পাঁচ মেয়ের সবাই লেখাপড়া করছে। ছেলেকে মানুষ করতে পারিনি বলে আমার অনেক কষ্ট। আমি জানতে পেরেছি আমার ছেলে নির্দোষ একজনকে ফাঁসিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি চাই সে দোষ করে থাকলে তার শাস্তি হোক এবং এর মাধ্যমে ভবিষ্যতের জন্য সংশোধন হোক। আর যাতে অপরাধের সঙ্গে যুক্ত না হয়। এতে আমার যত কষ্টই হোক আমি করতে রাজি।’
স্বপ্না বেগম পুলিশকে জানান, ইতোপূর্বে একটি হত্যা মামলায়ও অভিযুক্ত হয়ে জামিনে আছে তার ছেলে সালমান।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার তাপসরঞ্জন ঘোষ বলেন, গত আগস্টে সুনামগঞ্জ সদর থানায় অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনে যে মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল, পুলিশের তদন্তে বের হয়ে আসে মামলাটি অন্যকে ফাঁসানোর উদ্দেশ্যে করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ফাঁসানোর ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল তাদের দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু সিএনজি অটোরিকশায় পাইপগান আছে বলে যে পুলিশকে খবর দিয়েছিল সেই সালমানকে দুই মাস ধরে খোঁজ করেও কোনো হদিস পাচ্ছিল না পুলিশ।
সিনিয়র এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, সোমবার সকালে সালমানের মা ফোন দিয়ে বলেন আমার সঙ্গে দেখা করবেন এবং তার ছেলেকে পুলিশে সোপর্দ করবেন। আমি তাকে আসতে বললে তিনি ছেলেকে নিয়ে আমার কার্যালয়ে আসেন এবং পুলিশের কাছে নিজ হাতে তাকে সোপর্দ করেন।
এমটিনিউজ/এসবি