তাহিরপুর প্রতিনিধি (সুনামগঞ্জ): মধ্যরাতে অজ্ঞান দুই নারী প্রতি মানবিকতা দেখাল পুলিশ। দ্বীনি সিনিয়র মাদ্রাসার আরবি প্রভাষক মাওলানা মিসবাহ উদ্দিনের স্ত্রী ও তার বাসার কাজের মেয়ে রাতের খাবার খেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েন।৯৯৯ এ কল করার পর মধ্যরাতে টহল পুলিশের গাড়ি অজ্ঞান নারী ও বাসার কাজের মেয়েকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করান।
শুক্রবার দুপুরে শঙ্কামুক্ত অবস্থায় অনেকটা সুস্থ হয়ে স্বামী ও দু’সন্তানের কাছে ফিরেছেন ওই নারী। সেই সঙ্গে বাসায় ফিরেছে কাজের মেয়েটিও।
বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে প্রভাষকের স্ত্রী মুশফিকা ফেরদৌস (২৯) ও কাজের মেয়ের নুরী বেগমের (১৮) অসুস্থতায় বেগতিক অবস্থা দেখে রাস্তায় এসে গাড়ি খোঁজতে থাকেন অসুস্থ দু’জনকে হাসপাতালে নেয়ার জন্য।
কিন্তু মফস্বলের শহর রাত ১১টার পরেই রাস্তাগুলো নিথর হয়ে থাকে। এত রাতে রিকশা কিংবা গাড়ি পাওয়া অনেকটা দুষ্কর হয়ে পড়ে।
রাস্তার এদিক-ওদিক ঘুরতে ঘুরতে প্রায় আধাঘণ্টা থেকে পৌনে এক ঘণ্টা সময় পেরিয়ে গেলেও স্ত্রী ও কাজের মেয়েকে হাসপাতালে নেয়ার জন্য গাড়ির কোনো ব্যবস্থা করতে পারছিলেন না।
আশপাশের প্রতিবেশীদের সাহায্য নিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে অসুস্থ রোগীদের হাসপাতাল নিতে অটো কিংবা রিকশার গ্যারেজও কাকুতি-মিনতি করে কোনো সাড়া পাননি।
গাড়ি না পেয়ে প্রভাষকের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ছে। কোনো রকম কূলকিনারা না পেয়ে, অবশেষে শেষ আশ্রয়স্থল ভেবে কল দেন "৯৯৯" এ।
প্রভাষক তার সমস্যার কথা বিস্তারিত খুলে বলেন। পুলিশ হেল্প লাইন "৯৯৯" থেকে উনার সমস্যা সমাধানে শতভাগ আশ্বাস দেয়া হয় এবং পাঁচ মিনিটের ব্যবধানে রাত ২টায় সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার রাতের টহল ডিউটিরত তিনটি গাড়ি এসে পৌর শহরের ষোলঘর, সুরমা-১৬১/৪ নম্বর বাসার সামনে হাজির হয়।
পুলিশের গাড়ি দেখার পর প্রভাষক যেন নতুন জীবনই ফিরে পেয়েছেন।শুধু তাই নয়, সুনামগঞ্জ সদর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) আব্দুল্লাহ আল মামুন ও ওসি ডিবি কাজী মোক্তাদির হোসেন এবং এএসআই নিজামসহ সব ফোর্সরা দ্রত বাসার ভেতরে থেকে অজ্ঞান দুজনকে পুলিশের টহল গাড়িতে করে মধ্যরাতে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে যান এবং চিকিৎসা করান।
বর্তমানে তারা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ।
প্রভাষক মিসবাহ উদ্দিন বলেন, শুক্রবার বেলা ৩টার দিকে আমার স্ত্রী ও কাজের মেয়েকে হাসপাতাল থেকে বাসায় নিয়ে এসেছি কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে আরেকটু দেরিতে তাদেরকে হাসপাতালে নেয়া হতো, তাহলে তাদের দুজনকেই চিরতরে হারাতাম। আমার দু’সন্তান হয়তো এতিম হয়ে যেত।
কাজের মেয়েটাও আমার মেয়ের মতো। পুলিশ মধ্যরাতে টহল গাড়িতে করে দু’জন অসুস্থকে হাসপাতাল পৌঁছে দিয়ে এবং চিকিৎসা করিয়ে যে মানবিকতার দৃষ্টান্ত দেখিয়েছেন তাতে একজন নাগরিক হিসেবে গোটা পুলিশ বাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।-যুগান্তর