নিউজ ডেস্ক: জেলা শহরেরর কাজিরপয়েন্ট ও পুরাতন কোর্টে আপিল মোকদ্দমা নিষ্পত্তির নামে ব্যাপক অবৈধ লেনদেনর কারণে জনর্দুভোগ চরমে উঠেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে ঘুষ বাণিজ্য বিষয়ে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তাকে প্রশ্ন করা হলে তার ভাষ্য, ‘কেউ যদি খুশি হয়ে দেয় তাহলে নিই’।
জানা যায়, ৩০ ধারা আপত্তি মামলা নিষ্পত্তির পরও থেমে নেই রমরমা অনিয়ম ও ঘুষ বাণিজ্য। এর সঙ্গে যুক্ত আছেন আট সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার,তাদের সহযোগী পেশকার, আউট সোর্সিং ও বহিরাগত দালালেরা। এসবের ফলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ভূমিসেবা নিতে আসা লোকজনদের, ভুক্তভোগী জমির মালিকরা এসব কথা জানান।
সুনামগঞ্জ সদর সেটেলমেন্ট অফিসারের কার্যালয়ের এক সূত্র জানান, ৩০ ধারা আপত্তি মামলা নিষ্পত্তির পর গত ২৭ মার্চ ২০১৬-এ আপিল মামলা বিচার-নিষ্পত্তির জন্য সদর উপজেলাধীন বিভিন্ন এলাকার ১১৩টি মৌজার ৩ হাজার ২শ’ ৬২ মামলা পরিচালনার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ৯ জন সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসারকে।
তিনি আরও জানান, শহরের পুরাতন কোর্টে উত্তর মল্লিকপুর, নারায়ণতলা, মীরপুরসহ ১০টি মৌজার ৩৫৫টি আপিল মোকদ্দমা মামলা পরিচালনা করছেন সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার অঙ্কজ রাখাইন ও তার সহযোগী পেশকার জাকির হোসেন।
সদর উপজেলার ৯টি মৌজার ৩৬৭টি মামলা পরিচালনা করছেন সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার আবুল কালাম আজাদ ও তার সহযোগী বদিউল আলম। শহরের কাজির পয়েন্টে উমরপুর, শাখাইতি, নারকিলা, হবতপুরসহ ১২টি মৌজার ৩৬২টি আপিল মামলা পরিচালনা করছেন সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার মাহবুবুর রহমান।
বড়ঘাট,ধারারগাঁও,জায়ফর মৌজাসহ ১২টি মৌজার ৩৬২টি আপত্তি মামলা পরিচালনা করছেন সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার হাবিবুর রহমান। হরিণাপাটি,পশ্চিম রামেশ্বরপুর, বনগাঁওসহ ১৪টি মৌজার ৩৫৪টি মামলা পরিচালনা করছেন সেটেলমেন্ট অফিসার কোরবান আলী ও তার সহযোগী পেশকার আবু তাহের। দক্ষিণ নৈনগাঁও,উত্তর নৈনগাও,বিরামপুরসহ ১০টি মৌজার ৩৬৪টি আপত্তি মামলা পরিচালনা করছেন সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার এ কে এম মাহবুবুল আলম।
এদিকে ১৮টি মৌজার ৩৫৭টি মামলা পরিচালনা করছেন উবায়দুল কাদের ও তার সহযোগি পেশকার মাখন। সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার রবিউল আউয়াল পরিচালনা করছেন ১৮টি মৌজার ৩৫১টি আপত্তি মামলা। অপর এক অফিসার ফেটারগাঁও ও সৈয়দপুর মৌজার ৪০৪টি মামলা পরিচালনা করছেন।
আপত্তি মামলার বাদী-বিবাদীরা অফিসে আসার পরই সেটেলমেন্ট অফিসারদের নিয়োজিত আউটসোর্সিং কাজের জন্য টেবিলে বসে থাকা লোকের কাছে হাজিরা বহিতে স্বাক্ষর করতে হয়। এ সময় বাদী-বিবাদী উভয়দের গুনতে ১০০ টাকা, এভাবে প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন আট সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার।
আউটসোসিং-এ যারা কাজ করছেন তাদের মধ্যে আছেন মজনু মিয়া, শহিদ, মাসুদ রানা, ইমান আলী, সুজিতসহ ৯য় জন। পরবর্তীতে শুরু হয় শুনানি। অভিযোগ উঠেছে শুনানি শেষে যারা ২০-৩০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে পারেন, তাদের রায় হয়ে যায় দ্রুত,কাগজ সঠিক থাকলেও যারা টাকা গুনতে পারেন না তাদের সময় ক্ষেপনের নামে নানা হয়রানির শিকার হতে হয়। এভাবে প্রতিদিন বেহাত হচ্ছে লক্ষাধিক টাকা।
পৈন্দা গ্রামের মমিন মিয়া জানান, আপিল মামলার বিচার-নিষ্পত্তির নামে ঘুষের কারখানা খুলেছে। টাকা ছাড়া কাজ হয়না। কাগজ ঠিক থাকলেও নানা কারণ দেখিয়ে বড় অংকের টাকা দাবি করে। আমরা বড় বিপদে আছি। আপনারা এ নিয়ে কিছু লেখেন।
শান্তিপুর গ্রামের শুকুর আলী বলেন, হাজিরা দিলেই বাদী-বিবাদী সবাইকে টাকা গুনতে হয়,নইলে হয়রানির শিকার হতে হয়।
সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার হাবিবুর রহমানের কাছে অনিয়মের বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপত্তি মামলা কতটা নিষ্পত্তি হচ্ছে তা আপনাদের বলার নিয়ম নাই। অনিয়ম হয়ে থাকলে আপনারা লেখেন।
আপত্তি মামলার অফিসার অংকজ রাখাইন বলেন, মামলার কতটি নিষ্পত্তি হয়েছে জানি না। ঘুষ নেওয়া বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, কেউ যদি খুশি হয়ে দেয় তাহলে নিই।
সদর উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিসার কমলেন্দু চৌধুরী জানান, আপিল অফিসারদের অনিয়মের বিষয়টি তদন্ত করে দেখব। প্রমাণিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।-বাংলা ট্রিবিউন
২ মে ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/সবুজ/এসএ