ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে : ত্রিভুজ প্রেমের কারণেই খুন হয়েছে সিলেটের খাদিম বিসিক শিল্পনগরীর বনফুলের কর্মচারী রাজু ও তপু। ঘাতক শিপনের নেতৃত্বে ৬ জনের টিম ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে তাদের নির্মমভাবে খুন করে। সিলেটের আলোচিত এ জোড়া খুনের ঘটনার ৭ মাস পর শাহপরান থানা পুলিশ রহস্য উদঘাটন করেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনার মূল হোতা শিপন সহ দুইজন ইতিমধ্যে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। গতকাল দিয়েছে ইমন নামের আরো এক আসামি। আর পুলিশের রিমান্ডে রয়েছে দুইজন। আলোচিত এ জোড়া খুনের ঘটনার পর সিলেটের বিসিক শিল্প এলাকার শ্রমিকদের মধ্যে রীতিমতো আতঙ্ক নেমে এসেছিল। বিনিয়োগকারীরা পড়েন দ্বিধাদ্বন্দ্বে। কিন্তু প্রথমদিকে পুলিশ খুনের ঘটনার কোনো রহস্যই উদঘাটন করতে পারেনি। ওই সময় বিভিন্ন সূত্র থেকে পুলিশ ধারণা করেছিল, ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে ওই এলাকার কোনো পক্ষ ক্ষুব্ধ হয়ে বনফুলের ওই দুই শ্রমিককে খুন করেছে। কিন্তু দীর্ঘ ৭ মাসের তদন্ত শেষে পুরো ঘটনার রহস্য উন্মোচিত করেছে পুলিশ।
এখন আদালতে চলছে স্বীকারোক্তির পালা। সিলেটের শাহপরান থানার এসি সাজ্জাদ আলম জানিয়েছেন, আলোচিত এ জোড়া খুনের ঘটনায় মোট ৬ জন অংশ নিয়েছিল বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে। এর মধ্যে ইতিমধ্যে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তদন্ত শেষ করে খুব দ্রুত আদালতে এ জোড়া খুনের মামলার চার্জশিট দাখিল করা হবে বলে জানান তিনি। পুলিশ জানিয়েছে, ঘাতক শিপন তার লোকজনের মূল টার্গেটে ছিলেন বনফুল কোম্পানির কর্মচারী রাসেল। কিন্তু আক্রমণের সময় মারা যায় বনফুল কোম্পানির কর্মচারী রাজু আহমদ ও তপু মিয়া। তারা রাসেলকে রক্ষা করতে এগিয়ে গেলে রাসেল রক্ষা পায় ঠিকই কিন্তু ঘাতকদের হাতে প্রাণ হারান তারা দু’জন।
এ ঘটনার পর আহত রাসেল সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল। কিন্তু রাসেলও প্রথমদিকে পুলিশ ও সাংবাদিকদের কাছে খুনের মূল রহস্য সম্পর্কে মুখ খুলেনি। শাহপরান থানা পুলিশ জানায়, ইতিমধ্যে শিপন ও দুলাল মিয়া সিলেটের আদালতে খুনের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে। পুলিশ বনকলাপাড়া এলাকার বাসিন্দা মানিক মিয়ার ছেলে শিপন ও বাগবাড়ি নরসিংটিলা এলাকার ভাড়াটে বাসিন্দা দুলাল মিয়াকে কয়েক দিন আগে গ্রেপ্তার করে। তাদের গ্রেপ্তারের পরপরই জোড়া খুনের পুরো রহস্য উদঘাটন হয়। শিপন ও দুলাল খুনের ঘটনা স্বীকার করে সিলেটের আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে।
ওই জবানবন্দিতে তারা জানায়, শিপনের খালাতো বোন সুমির সঙ্গে গভীর প্রেম ছিল ঘটনায় আহত রাসেলের। আর শিপনও ভালোবাসতো তার খালাতো বোন সুমিকে। কিন্তু সুমি কখনও শিপনকে পাত্তা দিতো না। অন্যদিকে রাসেলের সঙ্গে গভীর প্রেমে মজে উঠে সুমি। আর এতেই রাসেলের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে শিপন। সে রাসেলকে খুন করার পরিকল্পনা করে। এবং সে সহ ৬ জনের একটি গ্রুপ তৈরি করে। গত ৮ই জানুয়ারি সন্ধ্যায় সিলেট শহরতলীর বিসিক শিল্প এলাকার সামনে সিলেট-তামাবিল সড়কে রাসেল ও তার বন্ধু রাজু এবং তপু বসে আড্ডা দিচ্ছিল।
এ সময় ঘাতক শিপন ও তার সহযোগী উজ্জ্বল, দুলাল মিয়া, নজরুল, ইমন ও শাকিলকে নিয়ে দা, রামদা, চাপাতি ও লোহার রড দিয়ে হামলা চালায়। তারা প্রথমে রাসেলকে ডেকে নিয়ে মারধর শুরু করলে এগিয়ে যায় রাসেলের সহযোগী তপু ও রাজু। এ সময় শিপন ও তার সহযোগীরা তপু ও রাজুকে নির্মমভাবে কুপিয়ে খুন করে পালিয়ে যায়।
এদিকে, আলোচিত এ জোড়া খুনের ঘটনায় পুরো বিসিক এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ আশপাশ থেকে বেশ কয়েকজনকে আটক করলেও খুনিদের শনাক্ত করতে পারেনি। অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে শিপনের নাম। শিপনকে গ্রেপ্তারের পরপরই পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত দুলালকে গ্রেপ্তার করে। এরপর পুলিশ অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে নগরীর গোয়াবাড়ি এলাকার ভোলা মিয়ার ছেলে উজ্জ্বল, কানিশাইল এলাকার কামরুল ইসলামের ছেলে ইমন ও নজরুলকে।
শাহপরান থানার এসি জানান, আদালতে খুনের দায় স্বীকার করে ইমন ও দুলাল জবানবন্দি দিয়েছে। ৫ দিনের পুলিশি রিমান্ডে আছে নজরুল ও উজ্জ্বল। আর ইমন গতকাল আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। তবে, শাকিল নামের আরো একজন পলাতক রয়েছে। তার সন্ধানে ইতিমধ্যে পুলিশ অভিযান শুরু করেছে। -এমজমিন
৯ আগস্ট ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস