ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে : ‘স্ক্যান্ডাল’ মাথায় নিয়ে সিলেট ছেড়েছিল বেপরোয়া মুন্নী। পাড়ি জমিয়েছিল রাজধানী শহর ঢাকায়। বেছে নিয়েছিল হোটেল জীবন। প্রথমে ঢাকার কয়েকটি হোটেলে তার কদর ছিল বেশি। কিন্তু ধীরে ধীরে মুন্নীর সেই কদরে ভাটা পড়ে। সিলেটের স্টাইলিশ মুন্নী এক সময় হোটেল ছেড়ে চলে আসে রাস্তায়। সেই মুন্নী ফের চলে এসেছে সিলেটে।
এবার সিলেটে এলেও তার চরিত্র বদলায়নি। বরং নতুন স্টাইলে বেপরোয়া মুন্নী সিলেটে বেড়াতে আসা লন্ডনি যুবকদের নিঃস্ব করে চলেছে। ফের সে পরিণত হয়েছে পুরুষখেকো মক্ষীরানী রূপেও। সিলেটের তিন্নি-মুন্নীর বেপরোয়া জীবন নিয়ে প্রায় তিন বছর আগে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত কয়েকটি রিপোর্টের প্রেক্ষিতে সিলেটে মুন্নীর বেপরোয়া জীবনে ধস নামে। এক পর্যায়ে সিলেটে টিকে থাকাই দায় হয়ে পড়ে তার। স্ক্যান্ডালে জড়িয়ে যাওয়ার ভয়ে অনেক পরিচিতজনই তাদের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। কেউ কেউ মুন্নীকে সিলেট ছাড়ার পরামর্শ দেন।
মুন্নীর ঘনিষ্ঠজনেরা জানিয়েছেন, সিলেটে তার বেপরোয়া জীবনের নানা কাহিনী লোকমুখে ছড়িয়ে যাওয়ার পর মুন্নী এক সময় একাই পাড়ি জমায় রাজধানী শহর ঢাকায়। সেখানে হোটেলে মনোরঞ্জনের রানী হয়ে উঠে সে। বেশ কয়েকটি নামিদামি হোটেলে মুন্নীর ডাক পড়ে প্রথমে। কদর থাকায় দুই হাতে টাকা কামিয়েছেও। কিন্তু ঢাকায় মুন্নীর কদর বেশিদিন টিকেনি। ধীরে ধীরে কমে আসে তার চাহিদাও।
ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন, ঢাকায় হোটেলে মুন্নীকে প্রায়ই নির্যাতন করা হতো। আর মদ খেয়ে মাতাল হয়ে পড়তো মুন্নী নিজেও। তার বেপরোয়া আচরণের কারণে হোটেলে তাকে কন্ট্রোল করাও কষ্টকর হয়ে পড়তো। আচরণের কারণে মুন্নীর দিকে মুখ ফিরিয়ে নেন ঢাকার ঘনিষ্ঠজনরাও। এ কারণে জীবনের তাগিদে মুন্নী রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়। এসব ঘটনা সিলেটে ফিরে মুন্নী তার ঘনিষ্ঠজনদের জানিয়েছেন।
প্রায় দুই বছর আগে ফের সিলেটে ফিরে আসে মুন্নী। সুনামগঞ্জের এক যুবকের সঙ্গে গড়ে তোলে প্রেমের সম্পর্ক। এরপর ওই যুবককে বিয়ে করেছে জানিয়ে সিলেট নগরীর জিন্দাবাজার এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নেয়। স্বামী সহ বাসা ভাড়া নিলেও মুন্নী আগের মতো প্রকাশ্যে ছিল না। নিজেকে আড়াল করার জন্য বেছে নেয় বোরকা। সিলেটের যুবকদের কাছে অতি পরিচিত মুন্নী বোরকায় নিজেকে আড়াল করে ফের শুরু করে প্রতারণা।
পূর্বের মতো লন্ডনি ছেলেদের পেছনে ছুটতে থাকে। পেয়ে যায় এক লন্ডনিকেও। ফেসবুকে প্রেম করার পর ওই লন্ডনির সঙ্গে বেশ সংখ্য গড়ে তোলে। পাশাপাশি দুই হাতে লুটতে থাকে টাকাও। প্রেমের ভান করে মুন্নী ওই লন্ডনির কাছ থেকে পর্যায়ক্রমে লুটে নেয় ৭-৮ লাখ টাকা। তবে, টাকা লুটার আগে মুন্নী ওই লন্ডন প্রবাসীকে নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছে সিলেটের জাফলং, বিছকান্দি, লালাখাল সহ কয়েকটি পর্যটন স্পট। কয়েকটি বিলাসবহুল বাংলোতেও রাতের পর রাত তাদের নিয়ে কাটিয়েছে। আর মুন্নীর ওই বেপরোয়া জীবনের কাছে স্বামীর সঙ্গে তার বিরোধ ঘটে।
এরপর থেকে মুন্নী জিন্দাবাজার এলাকার ওই বাসা ছেড়ে দেয়। বেশ কয়েক মাস সে নগরীর শিবগঞ্জ টিলাগড় এলাকায় বসবাস করছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। প্রায় দিনই মুন্নী অপরিচিত যুবকদের সঙ্গে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়তো। এসব কারণে ওই এলাকায় অনেকটা বিতর্কের মুখে পড়ে সে। সাম্প্রতিক সময়ে মুন্নী আরেক লন্ডন প্রবাসীর প্রেমে মজেছে বলে জানা গেছে। ওই লন্ডন প্রবাসী মুন্নীর টানে ছুটে এসেছে সিলেটে। মুন্নীকে নিয়ে বসবাস করছেন অজ্ঞাতস্থানে। আর গত দুই বছরে পরপর কয়েকটি ঘটনায় এখন মুন্নীর ওপর ক্ষুব্ধ অনেক যুবক।
তারা জানিয়েছেন, প্রেমের ফাঁদে ফেলে মুন্নী তাদের কাছ থেকে টাকা লুটে নিয়েছে। কয়েক দিন মুন্নী কারও ফোন ধরছে না। এমনকি প্রায় সময় সে মোবাইল বন্ধ করে রাখে। ওই যুবকরা জানিয়েছেন, মুন্নীর প্রতারণায় কোনো ফাঁক নেই। সে খুব কৌশলে যুবকদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে টাকা লুটে নেয়। এরপর যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেয়। সামাজিক চক্ষু-লজ্জার ভয়ে ওই সব যুবক পরবর্তীতে আর বিষয়টি নিয়ে ঘাটাঘাটি করেন না। করলেও তারা গোপনে টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চালান। কিন্তু মুন্নীর অতি সতর্কতার কারণে তার নাগাল পায় না কেউ। এই মুন্নীর বাড়ি সিলেটে নয়, কুমিল্লায়।
পিতা-মাতার সিলেটে থাকার কারণে মুন্নীর বেড়ে ওঠা এখানে। এক সময় সে শাহী ঈদগাহ এলাকায় বসবাস করতো। কাজ করতো নয়াসড়কের একটি বিউটি পার্লারে। এরপর বান্ধবী তিন্নিকে নিয়ে মুন্নী সিলেটে বেপরোয়া জীবন কাটিয়েছেন। লন্ডনি যুবকদের সঙ্গে প্রেমের অভিনয় করে লুটে নিয়েছে বহু টাকা। আর তাদের এসব কার্যকলাপে ক্ষুব্ধ হয়ে ফেসবুকে অনেক যুবক তিন্নি-মুন্নীর কর্মকাণ্ড নিয়ে সরব হয়ে উঠেন। জানান প্রতিবাদও।
এখন তিন্নি-মুন্নী নামের ফেসবুক আইডিতে সচল রয়েছে। এতোসব ঘটনার পরও মুন্নী সিলেটে রয়েছে সেই বেপরোয়া কায়দায়। লন্ডনি যুবকদের টার্গেট করে চালিয়ে যাচ্ছে তার বেপরোয়া জীবনের কর্মকাণ্ড। -মানবজমিন
১৪ আগস্ট ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস