শনিবার, ২৫ মার্চ, ২০১৭, ০৪:১৬:৩৮

প্যারা-কমান্ডোদের জঙ্গিবিরোধী ২য় অভিযান ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’

প্যারা-কমান্ডোদের জঙ্গিবিরোধী ২য় অভিযান ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’

সিলেট থেকে : সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ির আতিয়া মহলে গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক জঙ্গিদের ঘিরে রাখার কারণে ৩০ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ওই বাড়ির অসংখ্য মানুষ অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। পুলিশ, কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সদস্য, র‌্যাব এবং সোয়াট বাহিনীর সদস্যরা বারবার চেষ্টা করলেও জঙ্গিরা আত্মসমর্পন করেনি।

বেসামরিক লোকজনের যাতে কোনো সমস্যা না হয়, এ বিষয়টি মাথায় রেখে তাই শনিবার সকাল ৯ টার পর ‘অপারেশন ‘টোয়াইলাইট’ সাংকেতিক নাম দিয়ে সেখানে অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনীর ১৭ পদাতিক ডিভিশনের প্যারা-কমান্ডো ফোর্স।  এটি দেশের ইতিহাসে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে প্যারা-কমান্ডোদের দ্বিতীয় অভিযান।

এর আগে ২০১৬ সালের গুলশান হামলায় অংশ নেয়া জঙ্গিদের হাত থেকে দেশি-বিদেশি জিম্মিদের উদ্ধার করতে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে দেশের ইতিহাসে প্রথম প্যারা-কমান্ডোদের ব্যবহার হয়। ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাত সোয়া নয়টার দিকে পাঁচ জঙ্গি রাজধানী গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরায় ঢুকে ভিতরের দেশি-বিদেশি নাগরিকদের জিম্মি করে। জিম্মি অবস্থার অবসান করতে ঘটনার ১০ ঘন্টা পর সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে সরকার প্রধানের নির্দেশে সেনাবাহিনীর ফার্স্ট প্যারা-কমান্ডো ব্যাটালিয়ন ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ পরিচালনা করেন।

শনিবার সকাল ৮টা থেকে ১৭ পদাতিক ডিভিশনের মেজর জেনারেল আনোয়ারুল মোমেনের নেতৃত্বে অভিযান শুরু করে প্যারা-কমান্ডো দল । এখনও সেই অভিযান চলছে। শনিবার দুপুর ২ টার দিকে ২ জন নারী, ২ জন পুরুষ ও ১ শিশুকে বের করে নিয়ে আসার সময় গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এরপরই শুরু হয় প্যারা-কমান্ডোদের চূড়ান্ত অভিযান।

অভিযানে মুহুর্মুহু গুলির শব্দে প্রকম্পিত হয়ে উঠেছে পুরো শিববাড়ী এলাকা। সেনাদের লক্ষ্য করে জঙ্গিরা গুলি ছুঁড়েছে বলেও জানা গেছে। গুলি বিনিময়ের এক পর্যায়ে আতিয়া মহল থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। এ ধোঁয়া গোলাগুলির কারণে, নাকি ভেতর থেকে কোনো কিছু বিস্ফোরণের কারণে ঘটেছে কি না তাৎক্ষণিকভাবে কিছু জানা যায়নি।

এসময় শিমুল কর নামে ওই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা গুলিবিদ্ধ হন। এতে আশেপাশের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। বেলা সোয়া দুইটার দিকে আতিয়া মহলে বিকট শব্দে গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটে। এরপরই এক সেনা সদস্যকে আহত অবস্থায় ভেতর থেকে বের করে নিয়ে আসা হয়। এর মিনিট দশেক পর আরেক সেনা সদস্যকে আহত অবস্থায় বের করে নিয়ে আসেন মেডিকেল কোরের সদস্যরা।

শনিবার সকাল ৮টার দিকে সেনা কমান্ডোরা সেখানকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ‘টোয়াইলাইট’ (গোধূলি) নামের অভিযান শুরু করেন। সেনাবাহিনীর ১৭ পদাতিক ডিভিশনের লে. কর্ণেল ইমরুল কায়েসের নেতৃত্বে এ অভিযান শুরু হয়। অভিযানের শুরুর আগে র‍্যাব-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকসহ উৎসুক জনতাকে সেখান থেকে সরিয়ে দেয়।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডো ব্রিগেড:

যুক্তরাষ্ট্রের নেভি সিল, যুক্তরাজ্যের স্পেশাল এয়ার সার্ভিসের (এসএএস) মতো বাংলাদেশের রয়েছে প্যারা-কমান্ডো ব্যাটালিয়ন। যারা চিতা নামেও পরিচিত। দেশের অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীদের কর্মক্ষমতা যেখানে শেষ, ঠিক সেখান থেকেই শুরু হয় প্যারা-কমান্ডোদের কাজ। বন্দি ও জিম্মি উদ্ধার, কাউন্টার টেরোরিজম, মানব পাচার ও মাদক চোরাচালান রোধ, বিশেষ উদ্ধার অভিযানসহ জল, স্থল এবং আকাশে যেকোনো বিশেষ অভিযানে দায়িত্ব দেয়া হয় সেনাবাহিনীর এই প্যারা-কমান্ডোদের। তাদের মূলমন্ত্র ‘ডু অর ডাই’ বা ‘বাঁচো অথবা মরো’। এই এলিট বাহিনীর সদর দপ্তর সিলেট ক্যান্টমেন্ট।

প্যারা-কমান্ডো বাহিনী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি স্বাধীন ও বিশেষ অপারেশন বাহিনী। সেনাবাহিনীকে আরও বেশি শক্তিশালী ও কর্মক্ষম করে গড়ে তোলার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সেনাবাহিনীর দীর্ঘমেয়াদী আধুনিকায়ন কর্মসূচি ফোর্সেস গোল-২০৩০ শুরু হয়। যার মূল লক্ষ্য ছিলো বাহিনীর সদস্যদের আকার বৃদ্ধির পাশাপাশি তাদেরকে উচ্চ পর্যায়ের প্রশিক্ষণ ও আধুনিক প্রযুক্তি ও অস্ত্রে সজ্জিত করা। সেনাবাহিনীর সদস্যদের দেশীয় এলিট বাহিনীতে উন্নয়নের বিষয়টিও এই কর্মসূচির অন্যতম উদ্দেশ্য ছিলো। এই বাহিনীর মূল কাজ হচ্ছে যে কোনো সময়ে, যে কোনো স্থানে এবং যে কোনো অবস্থায় বিশেষ অপারেশন পরিচালনা করা।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন রেজিমেন্টের সব থেকে চৌকষ ও যোগ্য আগ্রহী ব্যক্তিদের রেকর্ড যাচাই-বাছাই করে প্যারা-কমান্ডো বাহিনীর জন্য নির্বাচন করা হয়। যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষে এদেরকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এরপর থেকে এদের ঠিকানা হয় সিলেট ক্যান্টনমেন্টের প্যারা-কমান্ডোদের দলে।

২৪ মার্চ ২০১৭/এমটি নিউজ২৪/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে