সিলেট থেকে : সিলেটের শিববাড়িতে জঙ্গি ধরা পড়েছে এমন খবর শুনে কৌতুহলের বশে সেখানে যান ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম। পুলিশ বারবার সরিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু কথা শোনেননি আব্দুর রহিম। শনিবার সন্ধ্যায় বিস্ফোরণে অনেকের সঙ্গে আহত হন তিনিও।
সিলেট ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আব্দুর রহিম বলেন, ‘জঙ্গি ধরা পড়ার খবর পেয়ে শনিবার বিকাল থেকে শিববাড়ি রোডে ছিলাম। অনেকবার পুলিশ সরিয়ে দিলেও আবার সেখানে যাই অভিযান দেখতে। যদি সরে আসতাম তাইলে এ ঘটনা ঘটতো না।’
আব্দুর রহিমের শরীরের বিভিন্নস্থানে স্প্লিন্টারের আঘাত রয়েছে। তিনি সিলেট নগরের কদমতলী এলাকার একটি সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ডের ম্যানেজার। একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরেক ব্যবসায়ী হোসেন আহমদের বাম হাতের একটি আঙুল গ্রেনেড হামলায় উড়ে গেছে।
তিনি জানান, জঙ্গি অভিযানের খবর পেয়ে বিকালে শিববাড়ি এলাকায় যান। সন্ধ্যার দিকে ভেতর থেকে যখন সাংবাদিকরা বেরিয়ে আসছেন তখন তিনি এগিয়ে যান। এ সময় গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটে। পেশায় তিনি সবজি ব্যবসায়ী।
একই ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন গ্রেনেড হামলায় আহত আব্দুল্লাহ আল মামুনের ডান হাতের একটি আঙুল গ্রেনেড হামলায় উড়ে যায়। তিনি সিলেট নগরের ৫৫/১ বাদাম বাগিচা এলাকার বাসিন্দা।
মামুনের ভাই জাহাঙ্গীর জানান, শিববাড়িতে তার ভাই এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে বিকালে বাসা থেকে বের হন। এরপর শনিবার সন্ধ্যায় তিনি জঙ্গি অভিযান দেখতে গেলে গ্রেনেড হামলায় আহত হন।
উল্লেখ্য, সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার শিববাড়ি এলাকায় জঙ্গিবিরোধী অভিযানস্থলের বাইরে পরপর দুটি বোমা বিস্ফোরণে পুলিশের একজন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত), একজন পরিদর্শক এবং তিনজন স্থানীয় বাসিন্দা ও একজন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিসহ ছয়জন নিহত হয়েছেন।
সাংবাদিক, পুলিশ, র্যাব সদস্যসহ ৫০ জন আহত হয়েছেন। তবে নিহত ব্যক্তিদের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। জঙ্গি আস্তানায় সেনা অভিযানের মধ্যেই গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় এই জঙ্গি হামলা হয়েছে।
জঙ্গিবিরোধী ওই অভিযানের মধ্যে এই হামলার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)। এই গোষ্ঠীর কথিত বার্তা সংস্থা ‘আমাক’ এই খবর দিয়েছে বলে জানিয়েছে অনলাইনে জঙ্গিদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণকারী যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ।
গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আড়াইটায় দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি এলাকার আতিয়া মহলে এই জঙ্গিবিরোধী অভিযান শুরু হয়। গতকাল ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলে অভিযান শেষ হয়নি। এ নিয়ে আজও সিলেট থমথমে। অভিযানস্থলের চারপাশে ছিল সেনা, পুলিশ ও র্যাবের কড়া পাহারা।
রবিবার বিকাল সাড়ে ৫টার পর দ্বিতীয় দফা সংবাদ সম্মলনে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান জানিয়েছেন, আতিয়া মহলে অভিযানে ২ জঙ্গি নিহত হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা রকেট লাঞ্চার দিয়ে ছিদ্র করে তারপর সেখান দিয়ে টিয়ারসেল ছোড়ার পর তাদের জন্য ভেতরে থাকা কঠিন হয়েছিল। এখন পর্যন্ত ২ জন জঙ্গি নিহত হয়েছে। দু’জনই পুরুষ সদস্য। এখনও এক বা একাধিক জঙ্গি ভেতরে আছে। আমাদের কেউ আহত হননি। অভিযান চলবে। অভিযান কখন শেষ করা যাবে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।’’
২৬ মার্চ ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/এসএস/