মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ, ২০১৭, ০১:০৭:৪৭

নিহত চার জঙ্গির একজন জেএমবির শীর্ষ নেতা জঙ্গি মুসা!

নিহত চার জঙ্গির একজন জেএমবির শীর্ষ নেতা জঙ্গি মুসা!

নুরুজ্জামান লাবু : সিলেটের শিববাড়ি আতিয়া মহলের জঙ্গি আস্তানায় নিহত এক যুবকের সঙ্গে নব্য জেএমবি’র শীর্ষ নেতা মঈনুল ইসলাম ওরফে মুসার চেহারার মিল পাওয়া গেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারাও ধারণা করছেন, নিহতদের মধ্যে একজন মুসা হতে পারে।

অভিযানের আগে তাদের কাছে তথ্য ছিল সিলেটের এই জঙ্গি আস্তানায় মুসা অবস্থান করছে। তবে তার পরিচয় নিশ্চিত হতে রাজশাহীর বাগমারায় মুসা’র পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। একইসঙ্গে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করেও মিলিয়ে দেখা হবে।

সোমবার সন্ধ্যার পর সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে অভিযান নিয়ে আনুষ্ঠানিক সংবাদ ব্রিফিং করা হয়। সেখানে এক প্রশ্নের জবাবে সামরিক গোয়েন্দা পরিদফতরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান বলেন, নিহত জঙ্গিদের পরিচয় আমরা বলতে পারছি না। এটা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা করবে। তারা প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহ করে নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত করবে।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, তারা যে দুজনের লাশ হাতে পেয়েছেন তাদের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। একইসঙ্গে লাশের মুখচ্ছবি সংগ্রহ করে পরিচয় জানার জন্য ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কাছে পাঠানো হয়েছে। কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা বলছেন, লাশের যে অবস্থা তাতে খালি চোখে দেখে আগের ছবির সঙ্গে মিলিয়ে দেখা সম্ভব নয়। তবে একজনের মুখের ছবি দেখে নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা মঈনুল ইসলাম মুসা’র আগের ছবির সঙ্গে কিছুটা মিল পাওয়া গেছে। পরে মুসা’র পরিবারের সঙ্গে সদস্যদের ডিএনএ নুমনা সংগ্রহ করে মিলিয়ে দেখা হবে।

কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা জানান, ঢাকা কলেজ থেকে ইংরেজিতে মাস্টার্স করা মাঈনুল ইসলাম মুসার গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর বাগমারার গণিপুর রনিপাড়ায়। তার বাবার নাম আবুল কালাম আজাদ। মায়ের নাম সুফিয়া বেগম। ১৯৮৮ সালের ২০ ডিসেম্বর তার জন্ম। তার স্ত্রী তৃষা মনিকে গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর আশকোনার এক জঙ্গি আস্তানা থেকে গ্রেফতার করা হয়। ওই আস্তানায় অভিযানের আগেই মুসা পালিয়ে যায়।

মিরপুরের রূপনগরে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত মেজর জাহিদের হাত ধরে জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ত হয় মঈনুল ইসলাম মুসা। তাদের আরেক সহযোগী তানভীর কাদেরীও নিহত হয় ঢাকার আজিমপুরের অভিযানে। মুসা উত্তরার লাইফ স্কুলে এক সময় শিক্ষকতা করলেও পরে নব্য জেএমবিতে যোগ দিয়ে স্ত্রী-সন্তানসহ কথিত হিজরত করে। গত বছরের পহেলা জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর ধারাবাহিক জঙ্গিবিরোধী অভিযান পরিচালনা করা হয়। এতে একের পর এক শীর্ষ জঙ্গি নেতারা গ্রেফতার ও নিহত হওয়ার পর মুসা নব্য জেএমবির হাল ধরেন বলে গোয়েন্দাদের কাছে খবর ছিল।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, সিলেটের জঙ্গি আস্তানায় মুসা অবস্থান করার কারণেই অভিযান শেষ করতে চার দিন লেগে যায়। কারণ মুসা কেন্দ্রীয় আস্তানা হিসেবে এখানে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক মজুদ করেছিল। একইসঙ্গে অভিযান চলাকালে ভেতর থেকে মুসা ইন্টারনেটের মাধ্যমে বাইরে যোগাযোগ করে ‘কাউন্টার অ্যাটাকের’ নির্দেশনা দিয়েছিল বলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের ধারণা। ফলে সোমবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সিলেটের শিববাড়ি এলাকায় ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে রাখা হয়।

নিহত জঙ্গিদের একজন মুসা কিনা তা জানতে কিছু সময় লাগবে বলে জানান সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এস এম রোকন উদ্দিন। তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী লাশের পরিয় জানার জন্য যা যা করা প্রয়োজন তা করেই পরিচয় নিশ্চিত করা হবে।

ঝলসে গেছে নিহত জঙ্গিদের শরীর : আতিয়া মহলে সেনা কমান্ডোদের অভিযানে নিহত চার জঙ্গির দুজনের লাশ পুলিশের কাছে হস্তান্তরের পর তা মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহত লাশগুলোর চেহারা ঝলসে গেছে। নারী জঙ্গির মাথার চুল পুড়ে গেছে। শরীরে ইট-সুরকি মাখানো। আর পুরুষ জঙ্গির কোমরের অংশ উড়ে গেছে। কোমরের অংশ দেখে ধারণা করা হচ্ছে তার কোমরে সুইসাইডাল ভেস্ট ছিল। আত্মঘাতী হওয়ার কারণে তার নাড়ি-ভুঁড়িও বের হয়ে গেছে। এই জঙ্গির একটি হাতও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বাকি একজনের সঙ্গে সুইসাইডাল ভেস্ট রয়েছে। সেটি বিস্ফোরিত হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার পর মঙ্গলবার তাদের লাশ উদ্ধার করা হবে। সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন

২৮ মার্চ ২০১৭/এমটি নিউজ২৪/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে