সিলেট থেকে : সিলেট শহরের আতিয়া মহলের এই জঙ্গীবিরোধী অভিযান ছিল স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি সময় ধরে চলা, এবং সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী। একই সাথে তা ছিল অত্যন্ত কঠিন ও ঝুঁকিপূর্ণ একটি অভিযান, যা এদিক-ওদিক হলে অনেক প্রাণহানি হতে পারতো।
মঙ্গলবার রাত আটটার দিকে সিলেটের জালালাবাদ সেনানিবাসে এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযান পরিচালনাকারী সেনাদলের মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান অপারেশনের নানা দিকের যে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন, তাতে এটা বেশ স্পষ্টভাবেই বেরিয়ে এসেছে বলে মনে হয়েছে।
চার দিন ধরে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে এক নারীসহ চারজন জঙ্গী নিহত হবার পর আজ সেনাবহিনী ভবনটিকে পুলিশের হাতে হস্তান্তর করেছে। নিহতদের পরিচয় সম্পর্কে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলা হয় নি।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান বলেন, অভিযানের পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ভবনের বাসিন্দাদের নিরাপত্তাকে সবোর্চ্চ গুরুত্ব দিয়ে। এই সেনা কর্মকর্তা বলছেন, অভিযানটি ছিল অত্যন্ত জটিল এবং ঝুঁকিপূর্ণ।
কারণ এই ভবনে অনেকগুলো ফ্ল্যাটে মোট ২৮টি পরিবার বাস করতো - তারা সবাই এ অভিযানের সময় মুহুর্মূহু গুলি ও বোমা বিস্ফোরণের মধ্যে দরজা-জানালা বন্ধ করে বসে ছিলেন।
'আতিয়া মহল' নামের এই ভবনটিতে সেনাবাহিনী, সোয়াট, র্যাব ও পুলিশের সমন্বয়ে যে অভিযান চলে - তাকে স্মরণকালের মধ্যে সবচে বেশি সময় ধরে চলা ও সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী জঙ্গিবিরোধী অপারেশন বলা হচ্ছে। এ অভিযান চলতে থাকার মধ্যেই ভবনটির কাছে শহরের দুটি এলাকায় জঙ্গিদের হামলায় দুজন পুলিশসহ ছ'জন নিহত হয়। আহত হয় ৩০ জনেরও বেশি।
আতিয়া মহলের ভেতরে জঙ্গীরা নিচের তলায় ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে ফেলে এবং ভবনের মূল দরজার সামনে বড় আকারের একটি বোমা বসায়। একটি ফ্রিজ ও মোটর সাইকেলেও বিস্ফোরক লাগিয়ে তা প্রতিবন্ধক হিসেবে স্থাপন করা হয় ।
পুরো ভবনে সিঁড়ি সহ বিভিন্ন জায়গাতেও বিস্ফোরক বসায় জঙ্গীরা। তারা বিস্ফোরক ব্যবহার ও বোমা তৈরিতে উচ্চ প্রশিক্ষিত ছিল বলেই মনে হয়েছে - বলেন সেনা মুখপাত্র ফখরুল আহসান।
এ অভিযানের জন্য প্রথমে সোয়াটকে ডাকা হলেও তারা পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে সেনাবাহিনীকেই এ অভিযান পরিচালনার দায়িত্ব নিতে বলেন। তিনি বলেন, শনিবার দুপুরের মধ্যে ভবনটির ৭৮ জন বাসিন্দাকে বের করে আনা হয় - যা ছিল এ অভিযানের প্রথম পর্ব।
দুটি ভবনের ছাদে মই দিয়ে সংযোগ তৈরি করে এবং আরো নানা অভিনব কৌশলে মোট ৩০ জন পুরুষ, ২৭ জন মহিলা ও ২১ জন শিশুকে বের করে আনার ছবি সংবাদ মাধ্যমে বেরিয়েছে। এর পর শুরু হয় দ্বিতীয় পর্ব অর্থাৎ জঙ্গীদের 'নির্মূল করার' কাজ। ২৭শে মার্চের মধ্যেই ভবনটির ভেতরে নিহত হয় চারজন জঙ্গি।
তার মধ্যে একজন মহিলাসহ দু'জনের মৃতদেহ আজ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। মহিলার নাম মর্জিনা বলে অভিযানের সময় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর বেরিয়েছিল।
বাকি দুটি মৃতদেহ 'সুইসাইড ভেস্ট' পরিহিত থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। ঘটনাস্থলেই এগুলো বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে বলে সেনা কর্মকর্তা জানান। সেনাবাহিনীর অভিযান আজ শেষ হলেও পুরো এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনি তাদের কড়া পাহারা বজায় রেখেছে।
২৮ মার্চ ২০১৭/এমটি নিউজ২৪/এসএস